কবরী বিশ্বাস অপু
স্তন ক্যানসার বিশ্বজুড়েই নারীর মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটি সমানভাবে বিবেচ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৫ হাজারের বেশি মানুষ ব্রেস্ট ক্যানসার বা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এঁদের মধ্যে ৯৮ শতাংশের বেশি নারী। তবে খুব অল্পসংখ্যক পুরুষও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ এ রোগে মারা যান। অথচ সচেতনতার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ১০০ ভাগ নিরাময় সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ৫০ শতাংশ নারী ক্যানসার আক্রান্তের তৃতীয় পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে যান। ২০-২৫ শতাংশ আসেন চতুর্থ বা শেষ পর্যায়ে। এবং ক্যানসার আক্রান্তের ৫০ শতাংশ মারা যান। তাই প্রয়োজন সচেতনতার।
বেশির ভাগ সময় আমরা স্তনের সমস্যা নিয়ে সংকোচবোধ করি, গুরুত্ব দিই না। পুরুষ চিকিৎসক দেখানোর লজ্জায় অনেক সময় আমরা এই সমস্যাগুলো পুষে রাখি। অথচ আমাদের সচেতনতাই পারে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে।
বছর দুই আগে আমার বাম পাশের স্তনে একটি সাধারণ টিউমার সার্জারি করেছিলাম। সেই অভিজ্ঞতার কথা বলব। আপনাদের অনুপ্রেরণা এবং সাহস বাড়বে বলে আশা করি।
২০১৮ সালের মার্চে আমি প্রথম অনুভব করি আমার বাম পাশের স্তনে 2 o'Clock পজিশনে কিছু একটা হয়েছে। ছোট্ট বলের মতো। হাত দিলে তখন বেশ টের পাই। ডাক্তার না দেখালে স্বস্তি হচ্ছিল না। বাড়িতে তখন কাউকে কিছু বলিনি। পারিবারিক নানা ঝামেলায় ডাক্তার দেখাতে দেখাতে দুই মাস পেরিয়ে গেল। কোন ডাক্তার দেখাব, কী করব। তখন বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। একদিন হঠাৎ ডা. দিদারুল আলম শাহীন দাদাকে নক দিলাম। উনি সমস্যার কথা জানার পরে জিজ্ঞেস করলেন, 'পুরুষ ডাক্তার দেখানোতে কোনো সমস্যা আছে কি না? ' বললাম, না।
তারপর ওনার পরামর্শে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা. বিপ্লব বিশ্বাসকে দেখালাম। উনি লক্ষণ দেখে ধারণা করলেন টিউমার হয়েছে। টেস্ট করতে বললেন। ভীষণ মন খারাপ নিয়ে সেদিন আমি ফিরে আসলাম। তখন আমি মোল্লাহাট থেকে যাতায়াত করি। আর ডাক্তার-টেস্ট এসব আমি প্রচণ্ড ভয় পাই। একা টেস্ট করতে যেতে ভয়ও করছে। বন্ধুবান্ধব, জুনিয়র, সিনিয়র সবাই সেদিন ব্যস্ত। তারপর অনেক কষ্টে আমার বন্ধু বুদ্ধকে পেলাম। ওকে নিয়ে সন্ধানীতে দুইটা টেস্ট করালাম। রিপোর্ট দেবে পরের দিন। দুশ্চিন্তার ঘোর কাটে না আমার। রিপোর্ট হাতে পেলাম এবং যা সন্দেহ করেছিলাম তাই হলো। (17 x 10 mm) সাইজের একটা ছোট্ট টিউমার বেড়ে উঠছে ধীরে ধীরে! নাম তার Fibroadenoma.
রিপোর্ট নিয়ে চলে গেলাম চিকিৎসকের কাছে। রিপোর্ট দেখে বললেন, ক্যানসারের ঝুঁকি নেই। কিছুটা যেন শীতলতা দিয়ে গেল তখন। তবে আরও বললেন, ওষুধে সারবে না। সার্জারি না করলেও চলবে। তবে সাইজে বড় হবে দিনদিন। মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। টিউমার তো বয়ে বেড়ানো সম্ভব না।
বাড়ি ফিরে প্রথমে মাকে জানালাম। পরে পরিবারের সবাই জানল। তত দিনে আমিই সার্জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। এবার শুরু হলো আরেক জ্বালা। পরিচিত শুভাকাঙ্ক্ষী যারাই বিষয়টি জানে সবাই বলে এ দেশে যেন সার্জারিটা না করাই। অনেকেই বলল যে সার্জারিই না করি। একপ্রকার ভয় ধরিয়ে দিল। আমিও অনড়, করলে বাংলাদেশই করব। যা হওয়ার হবে।
সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ সন্ধ্যায় আমার সার্জারি হলো। কিছুদিন ওষুধ খেয়ে সেরে উঠলাম। আমি সুস্থ হয়ে ওঠার পরে আমার পরিচিত অনেকেই মজা করে বলত, আমার সার্জারি তো পুরুষ ডাক্তার করেছে। সার্জারির জায়গায় দাগ আছে কি না। দেখতে বিশ্রী লাগে কি না। এই সেই। অবশ্য তাতে আমার কিচ্ছু আসে-যায় না।
এত কথা বলার কারণ হচ্ছে, আমরা মেয়েরা, সঙ্গে পুরুষেরাও মেয়েদের এই ধরনের সমস্যার গুরুত্ব দিই না। পুরুষ ডাক্তার দেখানোর লজ্জায় অনেকে টেস্টই করি না।
এ ক্ষেত্রে আমি বলব, ডাক্তার তো ডাক্তারই। নারী বা পুরুষ কি? আমার তো কোনো সংকোচ হয়নি। আমি একজন পুরুষ ডাক্তার দেখিয়েছি, উনিই আমার সার্জারি করেছেন। আমার দুইটা টেস্ট আরও দুজন পুরুষ করেছেন। সার্জারি পরবর্তী সময়ে আরও একজন পুরুষ ডাক্তার নানান পরামর্শ দিয়েছেন। তাতে কি কিছু হয়েছে আমার? আমি তো সুস্থ হয়েছি। সারা জীবন একটা ঝামেলা বয়ে বেড়ানোর মানসিক যাতনা থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমি চাই, এসব জড়তা থেকে প্রতিটি মেয়ে বেরিয়ে আসুক।
ভয় বা লজ্জা নয়, আগে দরকার সবার সচেতনতা।
লেখক: স্নাতকোত্তর, ভাস্কর, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন, ভারত।
স্তন ক্যানসার বিশ্বজুড়েই নারীর মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটি সমানভাবে বিবেচ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৫ হাজারের বেশি মানুষ ব্রেস্ট ক্যানসার বা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এঁদের মধ্যে ৯৮ শতাংশের বেশি নারী। তবে খুব অল্পসংখ্যক পুরুষও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ এ রোগে মারা যান। অথচ সচেতনতার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ১০০ ভাগ নিরাময় সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ৫০ শতাংশ নারী ক্যানসার আক্রান্তের তৃতীয় পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে যান। ২০-২৫ শতাংশ আসেন চতুর্থ বা শেষ পর্যায়ে। এবং ক্যানসার আক্রান্তের ৫০ শতাংশ মারা যান। তাই প্রয়োজন সচেতনতার।
বেশির ভাগ সময় আমরা স্তনের সমস্যা নিয়ে সংকোচবোধ করি, গুরুত্ব দিই না। পুরুষ চিকিৎসক দেখানোর লজ্জায় অনেক সময় আমরা এই সমস্যাগুলো পুষে রাখি। অথচ আমাদের সচেতনতাই পারে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে।
বছর দুই আগে আমার বাম পাশের স্তনে একটি সাধারণ টিউমার সার্জারি করেছিলাম। সেই অভিজ্ঞতার কথা বলব। আপনাদের অনুপ্রেরণা এবং সাহস বাড়বে বলে আশা করি।
২০১৮ সালের মার্চে আমি প্রথম অনুভব করি আমার বাম পাশের স্তনে 2 o'Clock পজিশনে কিছু একটা হয়েছে। ছোট্ট বলের মতো। হাত দিলে তখন বেশ টের পাই। ডাক্তার না দেখালে স্বস্তি হচ্ছিল না। বাড়িতে তখন কাউকে কিছু বলিনি। পারিবারিক নানা ঝামেলায় ডাক্তার দেখাতে দেখাতে দুই মাস পেরিয়ে গেল। কোন ডাক্তার দেখাব, কী করব। তখন বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। একদিন হঠাৎ ডা. দিদারুল আলম শাহীন দাদাকে নক দিলাম। উনি সমস্যার কথা জানার পরে জিজ্ঞেস করলেন, 'পুরুষ ডাক্তার দেখানোতে কোনো সমস্যা আছে কি না? ' বললাম, না।
তারপর ওনার পরামর্শে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা. বিপ্লব বিশ্বাসকে দেখালাম। উনি লক্ষণ দেখে ধারণা করলেন টিউমার হয়েছে। টেস্ট করতে বললেন। ভীষণ মন খারাপ নিয়ে সেদিন আমি ফিরে আসলাম। তখন আমি মোল্লাহাট থেকে যাতায়াত করি। আর ডাক্তার-টেস্ট এসব আমি প্রচণ্ড ভয় পাই। একা টেস্ট করতে যেতে ভয়ও করছে। বন্ধুবান্ধব, জুনিয়র, সিনিয়র সবাই সেদিন ব্যস্ত। তারপর অনেক কষ্টে আমার বন্ধু বুদ্ধকে পেলাম। ওকে নিয়ে সন্ধানীতে দুইটা টেস্ট করালাম। রিপোর্ট দেবে পরের দিন। দুশ্চিন্তার ঘোর কাটে না আমার। রিপোর্ট হাতে পেলাম এবং যা সন্দেহ করেছিলাম তাই হলো। (17 x 10 mm) সাইজের একটা ছোট্ট টিউমার বেড়ে উঠছে ধীরে ধীরে! নাম তার Fibroadenoma.
রিপোর্ট নিয়ে চলে গেলাম চিকিৎসকের কাছে। রিপোর্ট দেখে বললেন, ক্যানসারের ঝুঁকি নেই। কিছুটা যেন শীতলতা দিয়ে গেল তখন। তবে আরও বললেন, ওষুধে সারবে না। সার্জারি না করলেও চলবে। তবে সাইজে বড় হবে দিনদিন। মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। টিউমার তো বয়ে বেড়ানো সম্ভব না।
বাড়ি ফিরে প্রথমে মাকে জানালাম। পরে পরিবারের সবাই জানল। তত দিনে আমিই সার্জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। এবার শুরু হলো আরেক জ্বালা। পরিচিত শুভাকাঙ্ক্ষী যারাই বিষয়টি জানে সবাই বলে এ দেশে যেন সার্জারিটা না করাই। অনেকেই বলল যে সার্জারিই না করি। একপ্রকার ভয় ধরিয়ে দিল। আমিও অনড়, করলে বাংলাদেশই করব। যা হওয়ার হবে।
সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ সন্ধ্যায় আমার সার্জারি হলো। কিছুদিন ওষুধ খেয়ে সেরে উঠলাম। আমি সুস্থ হয়ে ওঠার পরে আমার পরিচিত অনেকেই মজা করে বলত, আমার সার্জারি তো পুরুষ ডাক্তার করেছে। সার্জারির জায়গায় দাগ আছে কি না। দেখতে বিশ্রী লাগে কি না। এই সেই। অবশ্য তাতে আমার কিচ্ছু আসে-যায় না।
এত কথা বলার কারণ হচ্ছে, আমরা মেয়েরা, সঙ্গে পুরুষেরাও মেয়েদের এই ধরনের সমস্যার গুরুত্ব দিই না। পুরুষ ডাক্তার দেখানোর লজ্জায় অনেকে টেস্টই করি না।
এ ক্ষেত্রে আমি বলব, ডাক্তার তো ডাক্তারই। নারী বা পুরুষ কি? আমার তো কোনো সংকোচ হয়নি। আমি একজন পুরুষ ডাক্তার দেখিয়েছি, উনিই আমার সার্জারি করেছেন। আমার দুইটা টেস্ট আরও দুজন পুরুষ করেছেন। সার্জারি পরবর্তী সময়ে আরও একজন পুরুষ ডাক্তার নানান পরামর্শ দিয়েছেন। তাতে কি কিছু হয়েছে আমার? আমি তো সুস্থ হয়েছি। সারা জীবন একটা ঝামেলা বয়ে বেড়ানোর মানসিক যাতনা থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমি চাই, এসব জড়তা থেকে প্রতিটি মেয়ে বেরিয়ে আসুক।
ভয় বা লজ্জা নয়, আগে দরকার সবার সচেতনতা।
লেখক: স্নাতকোত্তর, ভাস্কর, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন, ভারত।
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫