Ajker Patrika

শ্রমের দাম কমায় দুশ্চিন্তা

মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া
শ্রমের দাম কমায় দুশ্চিন্তা

কুষ্টিয়ার অন্যতম বড় শ্রমিকের হাট মিরপুর উপজেলার মিরপুর বাজার। প্রতিদিন ভোরে মিরপুরসহ জেলার ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের দিনমজুরেরা কাজের খোঁজে এই হাটে আসেন। ফজরের আজানের পর থেকে এই হাটে চলে শ্রম বেচাকেনা। কিন্তু কয়েক দিন ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমছে শ্রমের দাম। এতে হতাশ এই হাটে আসা শ্রমিকেরা।

জানা গেছে, প্রতিদিন মিরপুর, ভেড়ামারা ও দৌলতপুরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত শত শ্রমিক এই হাটে শ্রম বিক্রি আসেন। ১০-১৫ দিন আগেও এই হাটের শ্রমিকেরা ভালো মজুরি পেতেন। পারিশ্রমিকে তাঁরা খুশি ছিলেন।

কিন্তু শ্রমের হাটে এখন শুধুই হতাশা। হঠাৎ করেই কমেছে শ্রমিকদের মজুরি। যেখানে প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে চলেছে, সেখানে কমেছে এসব শ্রমিকের মজুরি। বাড়তি শ্রম দিয়েও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত পারিশ্রমিক।  পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন।

শ্রমিকেরা আক্ষেপ করে বলেন, এখন কাজ করে দিনে ৪০০-৪৫০ টাকা পান। এত কম টাকায় পরিবারের মানুষগুলোর মুখে খাবার তুলে দিতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তাই নিম্ন আয়ের মানুষদের বাঁচাতে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান শ্রমিকেরা।

দৌলতপুর থেকে আসা মিজান মণ্ডল বলেন, ‘বাজারে সব নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে নির্মাণসামগ্রীর দামও। তবে আমাদের মতো প্রতিদিনের শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বাড়ানো হয়নি। এ জন্য প্রতিবাদ করলে কাল থেকে আমাকে কেউ কাজে নেবে না। আগে বাজারে গেলে ৩০০ টাকা দিয়ে যে সদাই (পণ্য) কেনা যেত, এখন তা কিনতে ৭০০-৮০০ টাকা লাগে।’

মিজান মণ্ডল আরও বলেন, কদিন আগেও দিনে ৭০০-৮০০ টাকায় কাজ করেছেন, কিন্তু এখন ৫০০ টাকায়ও কেউ নিতে চাইছে না। তার ওপর আবার প্রতিদিন কাজ পাবেন; এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আবার একটু বয়স্ক শ্রমিকদের কেউ নিতে চান না। তাই তাঁরা কম টাকাতেও কাজে চলে যান। এতে তাঁদেরও দাম কমে যায়। একদিন কাজ না কররে খাবার জুটবে না। তাই বাধ্য হয়ে কম টাকায়ও কাজ করতে হচ্ছে।

শ্রমিকেরা এখন কাজ করে দিনে ৪০০-৪৫০ টাকা পান। কদিন আগেও তাঁরা দিনে ৭০০-৮০০ টাকায় কাজ করেছেন, কিন্তু এখন ৫০০ টাকায়ও কেউ নিতে চাচ্ছেন না। অন্যদিকে আগে বাজারে গেলে ৩০০ টাকা দিয়ে যে সদাই (পণ্য) কেনা যেত, এখন তা কিনতে ৭০০-৮০০ টাকা লাগে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী লোকমান বলেন, প্রত্যেক শ্রমিক দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের জন্য বাজারে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন। এখান থেকে অনেকে তাঁদের চুক্তিতে কাজে নিয়ে যান। কয়েক দিন আগে প্রতি শ্রমিকের মজুরি দিনে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে ছিল, এখন ৫০০ টাকাতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে।

মিরপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন বলেন, পৌর বাজারে প্রতিদিনই স্থানীয়রা চাহিদামতো বাড়ির বা খেতের কাজ করানোর জন্য শ্রমিকদের নিয়ে যান। এতে উভয় পক্ষ লাভবান হয়। এখন চাল-ডাল, সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও বাড়েনি তাঁদের শ্রমের মূল্য। তাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবে নিত্যপণ্যের দাম তাঁদের ক্রয়ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেন এই জনপ্রতিনিধি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত