Ajker Patrika

‘পালাও, পালাও!’

সম্পাদকীয়
‘পালাও, পালাও!’

বহু শহর ভ্রমণ করে সে সময় সিমলায় পৌঁছালেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সঙ্গে পরিচারক কিশোরীনাথ চাটুজ্যে। সন্ধ্যার দিকে সিমলা বাজারে পৌঁছানোর পর কিশোরী বাড়ি খুঁজতে চলে গেল। সেই বাড়িতে এক বছর ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সিমলায় অনেক বাঙালির বসবাস। একদিন সেখানকার বাসিন্দা প্যারীমোহন বাড়ুজ্জ্যে তাঁকে একটি তিন শ হাত উঁচু থেকে পানি পড়া ঝরনা দেখাতে নিয়ে গেলেন। বহুদূরের সেই ঝরনাতলায় লাঠি হাতে তাঁরা গেলেন। জায়গাটা খুব ভালো লাগল দেবেন্দ্রনাথের। এরপর রোববারে আরও কয়েকজনকে নিয়ে বনভোজন করে এলেন ঝরনাতলায়।

১৯৫৭ সালের ১৫ মে ছিল দেবেন্দ্রনাথের চল্লিশতম জন্মদিন। চোখ উঠেছিল কদিন আগে। সেদিন দেখলেন চক্ষুরোগের নিরাময় হয়েছে। সেই আনন্দে শরীর-মন তাঁর প্রসন্ন হয়ে উঠল। দেবেন্দ্রনাথের মনে হলো, সিমলার এই বাড়িতেই তিনি সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবেন। এ রকম প্রসন্ন সময়ে হঠাৎ দেখতে পেলেন তাঁর বাড়ির নিচ দিয়ে কয়েকজন মানুষ পড়িমরি করে দৌড়ে চলেছে। দেবেন্দ্রনাথ জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছে? দৌড়াচ্ছ কেন?’

কথার উত্তর না দিয়ে তাদের মধ্যে একজন শুধু বলল, ‘পালাও, পালাও!’

‘কেন পালাব?’ সে উত্তর না দিয়ে সেই মানুষেরা পালিয়ে গেল।

প্যারীমোহন বাড়ুজ্জ্যের বাড়িতে এসে দেখলেন, তাঁর রক্তবর্ণ চোখ, মলিন মুখ। তিনি তখন গলা থেকে উপবীত বের করে চাপকানের ওপর পরেছেন। দেয়াল থেকে চুন নিয়ে কপালে দীর্ঘ ফোঁটা লাগিয়েছেন। দেবেন্দ্রনাথকে দেখে বললেন, ‘গুর্খারা বামুন মানে।’

 ‘হয়েছেটা কী?’  ‘গুর্খা সৈন্যরা সিমলা লুট করার জন্য আসছে। আমি ঠিক করেছি, আমি ঝরনার ধারে গিয়ে লুকিয়ে থাকব।’

দেবেন্দ্রনাথ তাঁর সঙ্গে যেতে চাইলেন। কিন্তু তাতে প্যারীমোহনের মুখ আরও শুকিয়ে গেল। দুজন একসঙ্গে গেলে পাহাড়িদের লোভ বেড়ে যাবে। তখন বাঁচা ভার হবে। দেবেন্দ্রনাথ তাঁর সঙ্গে গেলেন না। সে সময় থাকলেন সিমলাতেই। এটা ছিল স্বাধীনতাসংগ্রামে সিপাহিদের অভ্যুত্থানের শুরু। 

সূত্র: দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ১৯৩-১৯৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত