Ajker Patrika

জুলুম প্রতিরোধে ইসলাম

অধ্যাপক ড. মো. আবদুল কাদির
জুলুম প্রতিরোধে ইসলাম

জুলুম শব্দের আভিধানিক অর্থ অত্যাচার, সীমা লঙ্ঘন, নিষ্পেষণ বা অবিচার ইত্যাদি। আরবি ভাষায় কোনো বস্তুকে তার প্রকৃত স্থানে প্রয়োগ না করে অন্যত্র প্রয়োগ করা বা যথাযথ প্রাপ্য না দেওয়া বা কম দেওয়াকে জুলুম অর্থে ব্যবহার করা হয়। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, সত্যের সীমা লঙ্ঘন করে অন্যায়ের চৌহদ্দিতে প্রবেশ করাকে জুলুম বলা হয়। মুফাসসিরিনে কেরাম বলেন, জুলুম হলো অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা এবং আল্লাহর বিধানে সীমা লঙ্ঘন করা। পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুলুমের ব্যাপারে মুমিনদের সতর্ক করেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে জালিম বা অত্যাচারী সেই ব্যক্তি, যে অন্যকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। আর মজলুম সেই ব্যক্তি, যিনি জালিমের হাতে জুলুমের শিকার হন।

পবিত্র কোরআনে জালিমের পরিচয় তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার করে না, তারাই জালিম।’ (সুরা মায়িদা: ৪৫) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা আল্লাহর বিধানের সীমারেখা অতিক্রম করে, তারাই জালিম।’ (সুরা বাকারা: ২২৯)

ইসলামের দৃষ্টিতে জুলুম
ইসলামে সব ধরনের জুলুম সম্পূর্ণরূপে হারাম। ব্যক্তি যেমন নিজের ওপর জুলুম করা থেকে সর্বদা বিরত থাকবে, তেমনি অন্যের ওপর জুলুম করা থেকেও বিরত থাকবে। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা, আমি আমার নিজের ওপর জুলুমকে হারাম করেছি। আর তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অন্যের ওপর জুলুম কোরো না।’ (মুসলিম)

রাষ্ট্রের কোনো অংশে তা প্রকাশ পাওয়া মাত্রই মূলোৎপাটন জরুরি। জালিমদের পক্ষাবলম্বন করা এবং তাদের সহযোগিতা করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষেধ। জালিম এবং তার কাজের সহযোগী উভয়ের পরিণতি জাহান্নাম।
 
জুলুম মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। সমাজ বা রাষ্ট্রের কোনো অংশে তা প্রকাশ পাওয়া মাত্রই তার মূলোৎপাটন জরুরি। জালিমদের পক্ষাবলম্বন করা, তাদের কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা এবং তাদের সহযোগিতা করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষেধ। জালিম এবং তার কাজের সহযোগী উভয়ের পরিণতি জাহান্নাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা জালিমদের প্রতি ঝুঁকে পোড়ো না। তাহলে তোমাদেরও জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে।’ (সুরা হুদ: ১১৩) 

জালিমের পরিণতি
পবিত্র কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী, জালিমদের চূড়ান্ত পরিণতি হলো জাহান্নামের নিকৃষ্ট স্থান। সুরা মুমিনের ৫২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা এমনটিই নির্দেশ করেছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে নিজে জুলুম করে না এবং অন্যের জুলুমেরও শিকার হয় না, সে-ই প্রকৃত মুসলমান।’ (বুখারি)

হাদিসে মজলুমের বদ দোয়াকে ভয় করতে বলা হয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)-কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় এই বলে অসিয়ত করেন, ‘হে মুআজ, মজলুমের বদ দোয়াকে ভয় কোরো। কেননা তার বদ দোয়া এবং আল্লাহর মধ্যে কোনো আড়াল নেই।’ (বুখারি)

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা স্পষ্টভাবে বলা যায় যে জুলুমের পরিণাম দুনিয়া ও আখিরাত কোনো কালেই সুখের নয়। ব্যক্তিস্বার্থ অথবা গোষ্ঠীগত স্বার্থসহ যেকোনো স্বার্থের জন্যই অন্যের ওপর জুলুম করা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। মনে রাখতে হবে, কেউ হয়তো জুলুম করে সুখের নিদ্রায় বিভোর আছে, কিন্তু মজলুম ব্যক্তি বিনিদ্র রজনী প্রতিনিয়ত জালিমকে বদ দোয়া করছে। আল্লাহ কিন্তু মজলুমের কান্না শোনেন। 

লেখক: চেয়ারম্যান, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত