Ajker Patrika

গাল দেওয়ার শাস্তি ‘হত্যা’?

সম্পাদকীয়
গাল দেওয়ার শাস্তি ‘হত্যা’?

ধরুন, ৯ বছর বয়সী একটি ছেলে মা তুলে গাল দিয়েছিল ২৮ বছর বয়সী এক যুবককে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুবকটি কী করতে পারেন? রাগ করতে পারেন। হ্যাঁ, মা-বাপ তুলে গাল দিলে কার মন শান্ত থাকে? রাগের মাথায় কী করতে পারেন যুবকটি? শিশুটিকে তিনি দিতে পারেন থাপ্পড়। কিংবা ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারেন মাটিতে। রাগ একটু কমলে ওকে কান ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যেতে পারেন ছেলেটির বাড়িতে। তার অভিভাবকদের বলতে পারেন, ‘আপনারা আপনাদের সন্তানকে সুশিক্ষা দিতে পারেননি। ও আমাকে মা তুলে গাল দিয়েছে।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে কী ঘটতে পারে? ৯ বছর বয়সী ছেলেটির অভিভাবকেরা বুঝতে পারেন, তাঁদের সন্তান খারাপ কথা শিখে নিয়েছে। যেকোনো জায়গায় এমন সব শব্দ উচ্চারণ করছে, সেগুলো স্বাভাবিক মানুষ উচ্চারণ করবে না। ওর আচরণের দিকে নজর দেওয়া দরকার।

এরপর কী ঘটতে পারে? এরপর ছেলেটি রাস্তাঘাটে কাউকে মা-বাপ তুলে গালি দেবে না। ভদ্র আচরণ করবে। আর তাতে গর্বিত হবেন অভিভাবকেরা, সেই যুবকটিও এসে ছেলেটির মাথায় রাখবেন ভরসার হাত।

কিন্তু বগুড়ার শাজাহানপুরের লক্ষ্মীকোলা গ্রামের ২৮ বছর বয়সী যুবক সুজন সরকার কী করলেন? তিনি বুলবুল হোসেন বিজয় নামে একটি ছেলেকে নিয়ে খেলা দেখতে গেলেন। যাওয়ার পথে এই অসম বয়সী দুই মানুষের মধ্যে ঝগড়া হলো। বিজয় সুজনের মায়ের নাম তুলে গাল দিল। এরপর সুজন গলা টিপে মেরে ফেললেন বিজয়কে।

লাশটা বাঁশবাগানে পড়ে থাকলে তো ধরা পড়ে যেতে পারেন সুজন। তাই নিহত বিজয়ের গলা কাটলেন ছুরি দিয়ে, হাত আর পায়ের রগ কেটে ফেললেন। তারপর ফেলে দিলেন পরিত্যক্ত ইটভাটার চুল্লিতে।

লক্ষ্মীকোলা গ্রামের পরিত্যক্ত ইটভাটায় পাওয়া গেল ইতিমধ্যে দুর্গন্ধ ছড়ানো বিজয়ের লাশ। গ্রেপ্তার হয়ে নিজের অপকীর্তির কথা স্বীকার করলেন সুজন।

আমাদের ধৈর্য, সহনশীলতা, নিজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কোথায় গিয়ে নেমেছে, এ তারই একটি নমুনা। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ স্রেফ গাল দেওয়ার কারণে একটি শিশুকে হত্যা করতে পারেন, এটা খুবই অস্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু ভয় হচ্ছে, এই অস্বাভাবিকতাই এখন স্বাভাবিকতাকে গ্রাস করে নিতে চাইছে। শিশুদের ধর্ষণ করছেন স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষকেরা, এ রকম কিছু ঘটতে পারে, তা কি কোনো দিন আমাদের ভাবনার মধ্যে ছিল? এটিএম বুথে টাকা তুলতে আসা মানুষকে স্রেফ কয়েকটি টাকার লোভে হত্যা করা যায়, এটা কি আমরা কখনো ভাবতে পেরেছিলাম? কিন্তু এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা ঘটছে, যার ব্যাখ্যা মেলে না।

এই অব্যাখ্যাত ঘটনাগুলো থেকে বের হয়ে আসা যাবে জীবন থেকে অস্থিরতা কমাতে পারলে, শান্ত, ধৈর্যশীল জীবনের প্রতি অনুগত থাকতে পারলে। এ বিষয়ে ভাবা এখন জরুরি হয়ে উঠেছে।

সুজনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে ছোটখাটো অপরাধে বড় দুর্ঘটনার রাশ টেনে ধরা যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

জামায়াত আমিরের বাসায় জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠক, পিআর নিয়ে অনড় অবস্থান

মির্জাপুরে বিএনপি নেতার পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৭

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, গুলি, এক শ্রমিক নিহত

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইবরাহিমের নাম বাদ দিতে ইসিকে চিঠি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত