রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষায় প্রায় সর্বজনবিদিত একটি শব্দ হলো ‘ডাকসাইটে’। সাধারণত সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের পর্দায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে এ শব্দটি আমাদের চোখে ও কানে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়। মূলত পেশাগত স্বকীয়তা সুদৃঢ় করতে বা সংশ্লিষ্ট পেশায় ওজনদার ভাব আনয়নের লক্ষ্যে শব্দটি প্রয়োগ করা হয়, যেমন ডাকসাইটে নেতা, ডাকসাইটে শিল্পী, ডাকসাইটে খেলোয়াড় প্রভৃতি।
সেই ছোটবেলা থেকে ডাকসাইটে শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে কেমন যেন সম্ভ্রমমিশ্রিত একটি ভয় মনে মনে কাজ করত। একই সঙ্গে বিপুল ক্ষমতাধর কোনো এক অজ্ঞাত ব্যক্তির কল্পিত অবয়ব ফুটে উঠত। প্রশ্ন হলো, ডাকসাইটে মানে কী? ডাকসাইটে শব্দটির উৎপত্তি কীভাবে হলো? অনেকে মনে করেন, এটি ইংরেজি শব্দ। আসলে কি তাই? তবে চলুন, আজ ডাকসাইটের ডাকবাক্স উন্মোচন করি।
অনেকটা আশ্চর্য হওয়ার মতো একটি তথ্য হলো ‘ডাকসাইটে’ ইংরেজি শব্দ নয়, এটি বাংলা শব্দ। শব্দটি বিশেষণ পদ। বাংলায় এর অর্থ হলো দোর্দণ্ড প্রতাপশালী, বিখ্যাত, খ্যাতিমান, প্রসিদ্ধ, অতিশয় প্রসিদ্ধ প্রভৃতি। যেমন ডাকসাইটে ব্যক্তি বা অভিনেতা। মূলত ‘ডাকসিদ্ধ’ শব্দটি থেকে ‘ডাকসাইটে’ শব্দের উৎপত্তি। এর ব্যুৎপত্তির ধারাটি হলো [সং. ডাকসিদ্ধ > ডাকসিধা > ডাকসাইটা > ডাকসাইটে]। ডাকসিদ্ধ শব্দের অর্থ হলো (বিশেষণে) পিশাচ যার আজ্ঞাবহ; (বিশেষ্যে) তন্ত্রবিদ্যায় সিদ্ধিপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
বাংলা অভিধান পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ব্যুৎপত্তিগত দিক বিবেচনায় বাংলা, হিন্দি, তিব্বতি, সংস্কৃত মিলিয়ে ‘ডাক’ শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে। কিন্তু ডাকসিদ্ধ শব্দের ‘ডাক’ হলো হিন্দু শাস্ত্রমতে, শিবের অনুচরবিশেষ; অর্থাৎ একধরনের পিশাচ। দেবী কালিকার মূর্তির পাশে ভয়ালরূপিনী যে ডাকিনী-যোগিনী, সেই ডাকিনীর পরিচয় বা উৎসসূত্র এখান থেকেই প্রাপ্ত। দেবাদিদেব মহাদেবের পার্শ্বচর ডাকের স্ত্রীই ডাকিনী নামে পরিচিত। আর এই ডাকিনীর অপভ্রংশ রূপটি হলো ডাইনি। ডাক বা পিশাচ হলো শিবের আজ্ঞাবহ অনুচর।
দেবাদিদেব মহাদেব প্রচণ্ড প্রতাপশালী ও মহা ক্ষমতাবান, তাই একমাত্র শিবের পক্ষেই ডাক বা পিশাচের মতো আরেক ক্ষমতাধরকে আজ্ঞাবহ অনুচরে পরিণত করে ডাকসিদ্ধ হওয়া সম্ভব হয়েছে। সুতরাং ডাকসিদ্ধ শব্দের অর্থ হচ্ছে পিশাচসিদ্ধ বা পিশাচ, যার আজ্ঞাবহ অর্থাৎ দেবাদিদেব মহাদেব। মহাদেব এমন ক্ষমতাধর ব্যক্তি যে তপস্যাবলে শিবানুচর পিশাচ ডাককে স্বীয় আদেশ পালনে বাধ্য করেছে।আলংকারিক রূপে ডাকসাইটে অর্থ বোঝাতে দেবাদিদেবের মতোই এমন ক্ষমতাধরকেই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী বা অতিশয় প্রসিদ্ধ অর্থে পরিগণিত করা হয়েছে।
আবার ডাকসাইটে শব্দের ব্যুৎপত্তি বিশ্লেষণে আরেকটি মতও পরিলক্ষিত হয়, সেটি হলো প্রাচীনকালে ‘ডাকপুরুষ’ নামে এক খ্যাতিসম্পন্ন ও প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তি ছিলেন, যিনি নানা রকম বচন প্রদান করে বিখ্যাত হয়েছিলেন। আমরা যেখান থেকে বলি ‘ডাক ও খনার বচন’। উনি সেই ডাকপুরুষ। জাতিতে যিনি ছিলেন গোপ। অনেকে মনে করেন, সেই ডাক থেকে ‘ডাকসাইটে’ শব্দটির উদ্ভব।
ডাকপুরুষ তন্ত্রবিদ্যায় যেমন সিদ্ধিপ্রাপ্ত ছিলেন, তেমনি ছিলেন প্রতাপশালী। কথিত রয়েছে, খ্রিষ্টীয় অষ্টম থেকে একাদশ শতক পর্যন্ত উত্তর ভারতে খনার বচনের চেয়েও ডাকের বচন অধিক জনপ্রিয় ছিল। কেননা ডাকের এসব বচনের ভাব ও ভাষা ছিল তুলনামূলক সহজবোধ্য। ডাকের বচন যতটুকু না উপদেশাত্মক, তার চেয়ে বেশি যাপিত জীবনের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হওয়ায় বচনগুলো লোকসমাজে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং সেগুলোর ভাষা সর্বজনীন রূপ পরিগ্রহ করে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ‘ডাকসাইটে’ শব্দটি আপন মহিমায় দোর্দণ্ড প্রতাপশালী অর্থেই ভাস্বর হয়ে আছে; বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সমরেশ বসু প্রমুখ সাহিত্যিকের রচনায় শব্দটি যথাযথ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
ডাকসাইটে শব্দটির প্রয়োগে আগে অর্থ বা ক্ষমতার জোর দেখানোর জন্য কেমন যেন একটু নেতিবাচক অর্থের প্রচ্ছন্ন ছায়া পরিলক্ষিত হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর সঙ্গে আলংকারিক অর্থে প্রতাপ, প্রভাব এবং খ্যাতির ব্যাপকতা বোঝানোর বিষয়টিও যুক্ত হয়েছে। সুতরাং যাপিত জীবনে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ডাকসাইটে ব্যক্তি না হয়ে সামগ্রিক কল্যাণে ডাকসাইটে ব্যক্তি হওয়ার ব্রত হোক সর্বজনীন—এমনটাই কাম্য।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষায় প্রায় সর্বজনবিদিত একটি শব্দ হলো ‘ডাকসাইটে’। সাধারণত সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের পর্দায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে এ শব্দটি আমাদের চোখে ও কানে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়। মূলত পেশাগত স্বকীয়তা সুদৃঢ় করতে বা সংশ্লিষ্ট পেশায় ওজনদার ভাব আনয়নের লক্ষ্যে শব্দটি প্রয়োগ করা হয়, যেমন ডাকসাইটে নেতা, ডাকসাইটে শিল্পী, ডাকসাইটে খেলোয়াড় প্রভৃতি।
সেই ছোটবেলা থেকে ডাকসাইটে শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে কেমন যেন সম্ভ্রমমিশ্রিত একটি ভয় মনে মনে কাজ করত। একই সঙ্গে বিপুল ক্ষমতাধর কোনো এক অজ্ঞাত ব্যক্তির কল্পিত অবয়ব ফুটে উঠত। প্রশ্ন হলো, ডাকসাইটে মানে কী? ডাকসাইটে শব্দটির উৎপত্তি কীভাবে হলো? অনেকে মনে করেন, এটি ইংরেজি শব্দ। আসলে কি তাই? তবে চলুন, আজ ডাকসাইটের ডাকবাক্স উন্মোচন করি।
অনেকটা আশ্চর্য হওয়ার মতো একটি তথ্য হলো ‘ডাকসাইটে’ ইংরেজি শব্দ নয়, এটি বাংলা শব্দ। শব্দটি বিশেষণ পদ। বাংলায় এর অর্থ হলো দোর্দণ্ড প্রতাপশালী, বিখ্যাত, খ্যাতিমান, প্রসিদ্ধ, অতিশয় প্রসিদ্ধ প্রভৃতি। যেমন ডাকসাইটে ব্যক্তি বা অভিনেতা। মূলত ‘ডাকসিদ্ধ’ শব্দটি থেকে ‘ডাকসাইটে’ শব্দের উৎপত্তি। এর ব্যুৎপত্তির ধারাটি হলো [সং. ডাকসিদ্ধ > ডাকসিধা > ডাকসাইটা > ডাকসাইটে]। ডাকসিদ্ধ শব্দের অর্থ হলো (বিশেষণে) পিশাচ যার আজ্ঞাবহ; (বিশেষ্যে) তন্ত্রবিদ্যায় সিদ্ধিপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
বাংলা অভিধান পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ব্যুৎপত্তিগত দিক বিবেচনায় বাংলা, হিন্দি, তিব্বতি, সংস্কৃত মিলিয়ে ‘ডাক’ শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে। কিন্তু ডাকসিদ্ধ শব্দের ‘ডাক’ হলো হিন্দু শাস্ত্রমতে, শিবের অনুচরবিশেষ; অর্থাৎ একধরনের পিশাচ। দেবী কালিকার মূর্তির পাশে ভয়ালরূপিনী যে ডাকিনী-যোগিনী, সেই ডাকিনীর পরিচয় বা উৎসসূত্র এখান থেকেই প্রাপ্ত। দেবাদিদেব মহাদেবের পার্শ্বচর ডাকের স্ত্রীই ডাকিনী নামে পরিচিত। আর এই ডাকিনীর অপভ্রংশ রূপটি হলো ডাইনি। ডাক বা পিশাচ হলো শিবের আজ্ঞাবহ অনুচর।
দেবাদিদেব মহাদেব প্রচণ্ড প্রতাপশালী ও মহা ক্ষমতাবান, তাই একমাত্র শিবের পক্ষেই ডাক বা পিশাচের মতো আরেক ক্ষমতাধরকে আজ্ঞাবহ অনুচরে পরিণত করে ডাকসিদ্ধ হওয়া সম্ভব হয়েছে। সুতরাং ডাকসিদ্ধ শব্দের অর্থ হচ্ছে পিশাচসিদ্ধ বা পিশাচ, যার আজ্ঞাবহ অর্থাৎ দেবাদিদেব মহাদেব। মহাদেব এমন ক্ষমতাধর ব্যক্তি যে তপস্যাবলে শিবানুচর পিশাচ ডাককে স্বীয় আদেশ পালনে বাধ্য করেছে।আলংকারিক রূপে ডাকসাইটে অর্থ বোঝাতে দেবাদিদেবের মতোই এমন ক্ষমতাধরকেই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী বা অতিশয় প্রসিদ্ধ অর্থে পরিগণিত করা হয়েছে।
আবার ডাকসাইটে শব্দের ব্যুৎপত্তি বিশ্লেষণে আরেকটি মতও পরিলক্ষিত হয়, সেটি হলো প্রাচীনকালে ‘ডাকপুরুষ’ নামে এক খ্যাতিসম্পন্ন ও প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তি ছিলেন, যিনি নানা রকম বচন প্রদান করে বিখ্যাত হয়েছিলেন। আমরা যেখান থেকে বলি ‘ডাক ও খনার বচন’। উনি সেই ডাকপুরুষ। জাতিতে যিনি ছিলেন গোপ। অনেকে মনে করেন, সেই ডাক থেকে ‘ডাকসাইটে’ শব্দটির উদ্ভব।
ডাকপুরুষ তন্ত্রবিদ্যায় যেমন সিদ্ধিপ্রাপ্ত ছিলেন, তেমনি ছিলেন প্রতাপশালী। কথিত রয়েছে, খ্রিষ্টীয় অষ্টম থেকে একাদশ শতক পর্যন্ত উত্তর ভারতে খনার বচনের চেয়েও ডাকের বচন অধিক জনপ্রিয় ছিল। কেননা ডাকের এসব বচনের ভাব ও ভাষা ছিল তুলনামূলক সহজবোধ্য। ডাকের বচন যতটুকু না উপদেশাত্মক, তার চেয়ে বেশি যাপিত জীবনের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হওয়ায় বচনগুলো লোকসমাজে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং সেগুলোর ভাষা সর্বজনীন রূপ পরিগ্রহ করে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ‘ডাকসাইটে’ শব্দটি আপন মহিমায় দোর্দণ্ড প্রতাপশালী অর্থেই ভাস্বর হয়ে আছে; বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সমরেশ বসু প্রমুখ সাহিত্যিকের রচনায় শব্দটি যথাযথ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
ডাকসাইটে শব্দটির প্রয়োগে আগে অর্থ বা ক্ষমতার জোর দেখানোর জন্য কেমন যেন একটু নেতিবাচক অর্থের প্রচ্ছন্ন ছায়া পরিলক্ষিত হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর সঙ্গে আলংকারিক অর্থে প্রতাপ, প্রভাব এবং খ্যাতির ব্যাপকতা বোঝানোর বিষয়টিও যুক্ত হয়েছে। সুতরাং যাপিত জীবনে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ডাকসাইটে ব্যক্তি না হয়ে সামগ্রিক কল্যাণে ডাকসাইটে ব্যক্তি হওয়ার ব্রত হোক সর্বজনীন—এমনটাই কাম্য।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫