Ajker Patrika

আনন্দ মোহন কলেজ: শতবর্ষের ঐতিহ্যে লালিত

মো. আশিকুর রহমান
আনন্দ মোহন কলেজ: শতবর্ষের ঐতিহ্যে লালিত

বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম আনন্দ মোহন কলেজ। এই কলেজের রয়েছে এক সমৃদ্ধ ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। আনন্দ মোহন কলেজ ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯০৯ সালে। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে কলেজটি সরকারি কলেজে রূপান্তরিত হয় এবং কলেজের নামকরণ করা হয় সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ। ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠাকালে যেখানে আনন্দ মোহন কলেজে শিক্ষার্থী ছিল ১৭৮ জন এবং শিক্ষক ছিলেন ৯ জন, সেখানে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ হাজারের অধিক এবং শিক্ষক রয়েছেন ২ শতাধিক।

ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্রে ১৫ দশমিক ২৮ একর জায়গাজুড়ে এই কলেজের ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে রয়েছে অধ্যক্ষ ভবন, শিক্ষক ও কর্মচারীদের আবাস, অতিথি ভবন, শহীদ মিনার, পৃথক ছাত্রছাত্রী মিলনায়তন, পোস্ট অফিস, বিদ্যুৎ সাবস্টেশন, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও বিভাগীয় গবেষণাগার। ১৯০৮ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত আনন্দ মোহন কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। ১৯৪৭ সালে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। নব্বইয়ের দশকে কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।

অনুষদ ও বিভাগ 
৪টি অনুষদের অধীনে রয়েছে ২১টি বিভাগ। কলা অনুষদের অধীনে রয়েছে বাংলা, ইংরেজি, দর্শন, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃত বিভাগ। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে রয়েছে অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান। বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে রয়েছে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা এবং ভূগোল ও পরিবেশ। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে রয়েছে হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং এবং ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স। এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, মানবিক তিনটি বিষয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়। 

সুযোগ-সুবিধা 
কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল রয়েছে; ছাত্রদের জন্য ৩টি ছাত্রাবাস এবং ছাত্রীদের জন্য ২টি ছাত্রীনিবাস রয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার বই নিয়ে আছে সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। তা ছাড়া প্রতি বিভাগে রয়েছে বিষয়ভিত্তিক পুস্তকসমৃদ্ধ সেমিনার-লাইব্রেরি। ছাত্রছাত্রীদের জন্য মেডিকেল সেন্টার চালু করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে ইন্টারনেট ক্যাফে। কলেজে দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য কল্যাণ তহবিল এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। কলেজে কমিশনপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অধীনে বিএনসিসি ইউনিট এবং রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইড পরিচালিত হয়। ময়মনসিংহের তিনটি রুটে শিক্ষার্থী যাতায়াতের যানবাহন ব্যবস্থা রয়েছে। 

যাঁরা পড়িয়েছেন ও পড়েছেন 
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং আন্তর্জাতিক সামরিক আদালতের অন্যতম বিচারক রাধাবিনোধ পাল ১৯১১-১৯২০ সালে এই কলেজের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, ইতিহাসবিদ প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম এবং লেখক ড. সফিউদ্দিন আনন্দ মোহন কলেজে শিক্ষকতা করেন। এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন ইতিহাসবিদ ড. নীহার রঞ্জন রায়, প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ, ঔপন্যাসিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, যাদুকর পি. সি সরকার, প্রফেসর মোফাখখারুল ইসলাম (সাবেক উপাচার্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়), প্রফেসর মো. আনোয়ারুল ইসলাম (সাবেক উপাচার্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক ড. অরবিন্দু পোদ্দার, প্রফেসর মো. শামসুর রহমান (সাবেক উপাচার্য, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়), বিচারপতি এম এ রশিদ, দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক সম্পাদক রাহাত খান, সাহিত্যিক ও গবেষক যতীন সরকার, কবি নির্মলেন্দু গুণ প্রমুখ গুণী ব্যক্তি। 

সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম
কলেজে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট কার্যক্রম চালু রয়েছে। একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি খেলাধুলা, সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা প্রভৃতি শিক্ষা সহায়ক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। আরও রয়েছে আনন্দ মোহন কলেজ ডিবেটিং ক্লাব, রক্তদাতা সংগঠন (বাঁধন), সাংস্কৃতিক পরিষদ, ফিজিকস ক্লাব, সমকাল সুহৃদ সমাবেশ, পরিবেশ ক্লাব, বোটানি ক্লাব ইত্যাদি। 

অর্জন ও প্রাপ্তি 
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত কলেজ পারফরম্যান্স র‍্যাঙ্কিংয়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলে সেরা হয় ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ। সম্প্রতি ‘এটিএন বাংলা ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’ বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন হয় কলেজ টিম। ৬৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলের হয়ে ব্রোঞ্জপদক পান আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থী তাহজিব হোসেন খান। জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২২-এ কলেজ টিমের বিতার্কিক রাউন্ড পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থী। 


অধ্যাপক মো. আমান উল্লাহ

আমাদের সীমিত সম্পদ ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সর্বোচ্চটা দিয়েই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন আন্তরিক পরিবেশে সম্প্রীতির বন্ধনে থাকতে পারেন, সেটিই আমার নিরন্তর প্রচেষ্টা। শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে মানসম্মত শিক্ষাদানে আমরা বদ্ধপরিকর। তারা যেন এখান থেকে পড়াশোনা করে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হতে পারে, বাস্তব জীবনে এই জ্ঞান কাজে লাগাতে পারে, আমরা সেদিকে খেয়াল রাখছি। আমরা আনন্দ মোহন কলেজ পরিবার শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ অন্যান্য বিষয়ে অনন্য অবদান রাখতে চাই। 

লেখক: অধ্যাপক মো. আমান উল্লাহ, অধ্যক্ষ, আনন্দ মোহন কলেজ ময়মনসিংহ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অপারেশন সিঁদুরে নিহত প্রায় দেড় শ সেনার তালিকা প্রকাশ করে মুছে ফেলল পাকিস্তানি টিভি

ঢাবিতে পাঁচ প্যানেলে ভোটের যুদ্ধ

দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে এনসিপির মাহিন সরকারকে বহিষ্কার

এনবিআর কর্মকর্তার কাণ্ড: কৃত্রিম অঙ্গের ঘোষণা দিয়ে ৪৫০ টন গয়না আমদানি

যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকারকে বহিষ্কারের কারণ জানাল এনসিপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত