Ajker Patrika

বিষক্রিয়ায় ৩০ গরুর মৃত্যু ব্যাটারি কারখানা বন্ধ

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ২৪
বিষক্রিয়ায় ৩০ গরুর মৃত্যু ব্যাটারি কারখানা বন্ধ

খড় ও পানিতে মাত্রাতিরিক্ত সিসার প্রভাবে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর দুটি গ্রামে গত এক মাসে ৩০টি গরু প্রাণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়। পুরোনো ব্যাটারি ভেঙে সিসা সংগ্রহ করার কারখানা থেকে এলাকার ফসলি জমিতে ছড়িয়ে পড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এরপর গত বুধবার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম মো. ইব্রাহিম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ব্যাটারির কারখানার মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে কারখানাটি বন্ধ করেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভাট্টা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে চান্দপুর হাওরে পুরোনো ব্যাটারি ভেঙে সিসা সংগ্রহের একটি কারখানা রয়েছে। এ কারখানায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পুরোনো ব্যাটারির সিসা গলিয়ে পিণ্ড তৈরি করা হয়। এ কাজে ব্যবহৃত সিসা ও বর্জ্যপদার্থ এলাকার ফসলি জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। সিসার বর্জ্যর প্রভাবে ঘাস ও পানি দূষিত হয়। এ ঘাস ও পানি খেয়ে এলাকার গরু অসুস্থ হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। ১ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিষক্রিয়ায় ২০টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। তাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আক্রান্ত এলাকায় জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য কারখানা এলাকার আশপাশের পরিবেশে উৎপাদিত গোখাদ্য ও পানি পরিহার করতে বলা হয়েছে। গবাদিপশুর মধ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক মাসে অন্তত ৩০টি গরু মারা গেছে। অজ্ঞাত কারণে গরু মৃত্যুর খবর পেয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মৃত ও আক্রান্ত গরুর নমুনা সংগ্রহ করে। ৪ জানুয়ারি সেই নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় চিফ সায়েন্টিফিক কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ১০ জানুয়ারি চিফ সায়েন্টিফিক কর্মকর্তার কার্যালয় প্রতিবেদন দিয়ে জানায় ওই এলাকার খড় ও পানিতে অতিমাত্রায় সিসার উপস্থিতি রয়েছে। অতিরিক্ত সিসার বিষক্রিয়ায় গবাদিপশু অসুস্থ হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। গত বুধবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

চান্দপুর পূর্বপাড়া গ্রামের হুমায়ুন কবির বলেন, বাড়তি আয়ের আশায় এলাকার প্রত্যেক বাড়িতেই গরু পালন করা হয়। হঠাৎ করে এত গরু মরে যাওয়ায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ওসমান গণি বলেন, ‘অজ্ঞাত রোগে গরুর মৃত্যুর সংবাদ শুনে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং মৃত ও অসুস্থ গরুর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা চিফ সায়েন্টিফিক কর্মকর্তার কার্যালয় ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে পাঠাই। নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্ত এলাকার খড় ও পানিতে মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতি পাওয়া যায়। তাই এই এলাকায় গরুর মৃত্যু ও অসুস্থতার সংখ্যা বাড়ছে। অতিমাত্রার সিসা মানবদেহেও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতিশ্বর পাল বলেন, ‘গরুর মৃত্যু নিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার প্রতিবেদন পেয়ে চান্দপুরের পুরোনো ব্যাটারি ভেঙে সিসা গলানোর কারখানায় অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারখানাটি আর যেন চালু হয়, সে ব্যাপারে আমরা তদারকি করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত