Ajker Patrika

মন্ত্রীদের কথায় গরমিল, ফের বাড়ছে চালের দাম

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮: ৪০
মন্ত্রীদের কথায় গরমিল, ফের বাড়ছে চালের দাম

নিত্যপণ্যের সরবরাহ, মজুত ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে চালসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার কথা জানিয়েছিল সরকার। আগস্টের শেষে এসে এমন ঘোষণাই দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এতে মজুত থাকা বিপুল চাল বিক্রি করার তোড়জোড় লেগে যায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। দ্রুত বিক্রি করে ফেললেই স্বস্তি, এমনটাই বোধ করছিলেন ব্যবসায়ীরা। যে কারণে চালের দাম কিছুটা কমে আসে। কিন্তু সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের সুযোগ নিয়ে ফের চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত তিন-চার দিনের ব্যবধানে চালের দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ছিল ৬২-৭০ টাকা। বর্তমানে তা ৬৪-৭২ টাকা, ৬৬-৭৮ টাকার নাজিরশাইল ৬৮-৮০ টাকা, ৫২ টাকার লতা ৫৪ টাকা এবং ৫২ টাকার হাসকি ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ দেশের বিভিন্ন মোকাম, আড়ত, পাইকারি ও খুচরা বাজারে কোথাও চালের সংকট নেই।

চলতি বছর বোরো মৌসুমে দেশে সিলেট-সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এই সুযোগে দেশের ব্যবসায়ীরা ৫৭-৬০ টাকার চালের কেজিপ্রতি ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি করে। সরকার দাম কমাতে আমদানি শুল্ক কমায়। দাম বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। খোলাবাজারে বিক্রি-ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালুর পর চালের দাম কিছুটা কমে আসে। তবে দাম নির্দিষ্ট করে না দেওয়া, ভারতে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি, ডলারের দাম বেশি এবং দেশে ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে ফের বাড়ানো হচ্ছে চালের দাম।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সারা বছরে মোট চালের চাহিদা ৩ কোটি ৬০ লাখ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৭৬ লাখ মেট্রিক টন। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট চাল আমদানি হয় ১০ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন।

গত শুক্রবার সকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ৯টি নিত্যপণ্যের দামের তালিকা করে দেবে সরকার। পণ্যের দাম নির্ধারণে ১৫ দিন অতিক্রম হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে দামের নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

গত ৩০ আগস্ট বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দ্রব্যমূল্যসংক্রান্ত কমিটির সভা শেষে চাল, ডাল, তেলসহ ৯টি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। এই দিনই বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, মার্কেটে সাপ্লাই অ্যান্ড ডিমান্ড (সরবরাহ ও চাহিদা) ঠিক থাকলে দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। দাম নির্ধারণে কোনো আলোচনা করেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। 
সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সচিবালয় গণমাধ্যম কেন্দ্রে মিট দ্য প্রেসে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমদানি পণ্যের দাম বেঁধে দিলে সমস্যা হবে না। কিন্তু চাল তো দেশে উৎপাদন হয়। এসব নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো আলোচনাই হয়নি।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৬২-৭৫ টাকা, মাঝারি ৫২-৫৮ টাকা এবং মোটা চাল ৪৭-৫২ টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গত মাসের শুরুতে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় বাজারে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে। পরে সরকারের নজরদারি আবারও বাড়লে দাম কয়েক দিন স্থিতিশীল ছিল। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, রাশিয়া ও মিয়ানমার থেকে ১১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আমদানির চুক্তিপত্র সম্পন্ন হয়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মূল্যসংক্রান্ত বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। এটি অন্যদের সঙ্গে আলোচনার বিষয় নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত