Ajker Patrika

জয়নুলের আর্ট কলেজে

সম্পাদকীয়
জয়নুলের আর্ট কলেজে

সৈয়দ মুজতবা আলী একদিন মুস্তাফা মনোয়ারের আঁকা ছবি দেখে খুব খুশি হলেন। মুস্তাফা মনোয়ারের ইচ্ছা ছিল সায়েন্সে পড়বেন, কিন্তু অঙ্ক একেবারেই ভালো লাগত না তাঁর। ভালো লাগত আঁকাআঁকির জগতে ডুবে থাকতে। মুজতবা আলী তাঁকে নিয়ে গেলেন কলকাতা আর্ট কলেজে। কলকাতা আর্ট কলেজের বাড়িটি ছিল খুব পুরোনো। লম্বা লম্বা জানালা, বিশাল ঘর। তখনো আর্টের ব্যাপারটা ছিল গরিব মানুষের। যাদের টাকাপয়সা আছে, তারা আর্ট কলেজের দরজা মাড়াতেন না। তবে এরই মধ্যে প্রখ্যাত অভিনেতা ছবি বিশ্বাসের ছেলে এসে ভর্তি হলেন আর্ট কলেজে।

পরবর্তীকালে ভারতজোড়া নামকরা শিল্পী গণেশ পাইন ছিলেন মুস্তাফা মনোয়ারের ক্লাসমেট। সুরজিৎ দাশ ছিলেন ভাস্কর দেবু ভট্টাচার্যের বন্ধু।

বাড়ি থেকে তাঁর এই ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’ মেনে নেওয়া না হলে তিনি বেশি দূর এগোতে পারতেন না। তৃতীয় বর্ষে পড়াকালীন তিনি একাডেমি অব ফাইন আর্টসের অল ইন্ডিয়া আর্ট এক্সিবিশনে স্বর্ণপদক পেয়ে গেলেন। জলরঙে পেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদর্শনীতে স্বর্ণপদক। তখন তিনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। যেকোনো প্রতিযোগিতায় ছবি পাঠালেই পেয়ে যাচ্ছেন পুরস্কার।

সে সময় জয়নুল আবেদিন কেবল বিশ্ব সফর শেষে ফিরে এসেছেন কলকাতায়। অনেক প্রতিভাসম্পন্ন ছাত্র ছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার। পাস করে বিদেশে যাবেন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে—এ রকমই ছিল তাঁর ভাবনা। কিন্তু জয়নুল আবেদিন যখন কলকাতায় এসে দুই দিন থাকলেন মুস্তাফা মনোয়ারদের বাড়িতে, তখন ছেলেটাকে নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠলেন। কথায় কথায় শিল্পাচার্যকে জানানো হলো, পাস করলেই ওকে ইউরোপে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

জয়নুল আবেদিন বললেন, ‘না, ও আমার আর্ট কলেজে যাবে। পাস করেই যেন ঢাকায় চলে আসে। ও আমার আর্ট কলেজে মাস্টার হবে।’

 ১৯৫৯ সালে মুস্তাফা মনোয়ার কলকাতা আর্ট কলেজের ফাইন আর্টসে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন এবং শিল্পাচার্যের উপদেশকে সম্মান করে চলে আসেন ঢাকায়, ঢাকার আর্ট কলেজে যোগ দেন প্রভাষক হিসেবে। 

সূত্র: বিধান চন্দ্র পাল সম্পাদিত সেতুবন্ধন, পৃষ্ঠা ১৪০-১৪২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত