Ajker Patrika

ধুঁকছে নারকেল তেলের কারখানা

এস এস শোহান, বাগেরহাট
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ৩১
ধুঁকছে নারকেল তেলের কারখানা

পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাবে বাগেরহাটে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নারকেল তেলের কারখানা। একসময় জেলায় নারকেল তেলের ৬০টি কারখানা থাকলেও বর্তমানে মাত্র ১৬টি কারখানা চালু রয়েছে। প্রতিবছরই নতুন করে দু-একটি কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ডাব বিক্রি বৃদ্ধির কারণে শুকনো নারকেলের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। নারকেলের উৎপাদন বৃদ্ধি, ভেজাল তেল বন্ধ এবং ব্যবসায়ীদের সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আশির দশকে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ৬০টির অধিক কারখানায় নারকেল তেল উৎপাদিত হতো। তখন প্রতিদিন প্রায় ২৬ মেট্রিক টন নারিকেল তেল উৎপাদন হতো। সেই উৎপাদন এখন নেমে এসেছে ১০ শতাংশে।

এর আগে জেলাবাসী ঘানিতে ভেঙে সনাতন পদ্ধতিতে তেল উৎপাদন করত। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এই তেল চলে যেত দেশের বিভিন্ন জেলায়। তবে গেল কয়েক বছর ডাব বিক্রি বৃদ্ধির কারণে কারখানাগুলোতে কাঁচামালের সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে বেশ কিছু কারাখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

বাগেরহাটের একমাত্র বিসিক শিল্পনগরীতে ১৭টি কারাখানার মধ্যে ১১টি বন্ধ হয়ে গেছে। চালু রয়েছে মাত্র ৬টি। এ ছাড়া বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর, চুলকাঠি, সিঅ্যান্ডবি বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আরও ১০টি কারখানা চালু রয়েছে। উৎপাদনও কমেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। এই পেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক।

নারকেল তেলের কারখানায় কাজ করা শ্রমিক রুহুল আমিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিসিকের মধ্যে নারকেল তেলের কারখানায় কাজ করেন। তাঁর সঙ্গে অনেকেই কাজ করতেন, কিন্তু কারখানার উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাধ্যতামূলক অনেককে ছাঁটাই করা হয়েছে।

শ্রমিক নাজমা আক্তার বলেন, আট বছর আগে নারকেল ভেঙে প্রতি মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় করতেন। বর্তমানে এক হাজার টাকার বেশি আয় করতে পারেন না। অন্য কোনো কাজ না থাকায় বাধ্য হয়ে এই কারখানায় কাজ করছেন। এর আগে অন্য দুটি কারখানায় কাজ করেছেন। সেই কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।

বাগেরহাট বিসিক এলাকার নারকেল তেলের কারখানা সাহা এন্টারপ্রাইজের মালিক জীবনকৃষ্ণ সাহা বলেন, ১৯৯৮ সালে মিলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দৈনিক ৫০০ কেজি তেল উৎপাদন হতো। চাহিদা থাকায় একপর্যায়ে উৎপাদন বেড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ কেজিতে দাঁড়ায়। জেলায় দৈনিক নারকেল তেল উৎপাদন ছিল ২৪ থেকে ২৫ টন। তখন এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন অসংখ্য ব্যবসায়ী।

কিন্তু ২০০৬ সালের দিকে বাজারে মোড়কজাত তেল বিক্রি শুরু হলে কমতে থাকে তাঁদের নারকেল তেলের চাহিদা। পাশাপাশি নারকেলের উৎপাদন কমে যায়। আবার গেল কয়েক বছর প্রচুর পরিমাণ ডাব বিক্রি হয়েছে। ফলে কাঁচামালের সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে তাঁর মিলে দৈনিক ২০০ কেজির বেশি তেল উৎপাদন করা সম্ভব হয় না।

আরেক ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম পাইক বলেন, কয়েক বছর আগেও প্রতি কেজি নারকেল তেল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরেও বিক্রি করেছেন। আর এখন সেই তেল বিক্রি করতে হচ্ছে ৪০০ টাকায়।

ব্যবসায়ী অশোক সাহা বলেন, নারকেল তেলের জন্য বাগেরহাট ছিল বিখ্যাত। দিন দিন তেলের উৎপাদন কমতে থাকায় এখন আর সেই জৌলুশ নেই। নারকেলের উৎপাদন বাড়লেও হাটে পর্যাপ্ত নারকেল ওঠে না। উৎপাদিত নারকেল বেশির ভাগই ডাব হিসেবে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন শহরে। ফলে হাটগুলোতে শুকনো নারকেলের অভাব দেখা দিয়েছে।

বন্ধ হয়ে যাওয়া স্বর্ণালি অটো কোকোনাট অয়েল মিলের স্বত্বাধিকারী শংকর সাহা বলেন, একদিকে চাহিদা অনুযায়ী নারকেল পান না, অন্যদিকে মোকামে পাইকারদের কাছে বকেয়া থাকায় কারখানা চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। এর মধ্যে আবার করোনা মহামারি। সবকিছু মিলিয়ে মিল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।

রামপালের চাকশ্রী এলাকার নারকেল ব্যবসায়ী শেখ ইউসুফ আলী বলেন, এক যুগ আগেও বিভিন্ন হাট থেকে পাঁচ-ছয় হাজার নারকেল কিনতেন। বর্তমানে হাটে নারকেল না পাওয়ায় এক হাজারের বেশি কেনা সম্ভব হয় না। আগের মতো ব্যবসা না হওয়ায় এখন সংসার চালাতে কষ্ট হয়।

কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের রুস্তম শেখ বলেন, ঘেরের পাড়ে শতাধিক গাছে নারকেল হয়। বেশির ভাগ সময় ডাব বিক্রি করেন। কারণ ডাবের দামও ভালো এবং ডাব কাটলে ফলন বৃদ্ধি পায়।

নারকেল তেলের একসময়ের বড় ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম পাইক বলেন, বাগেরহাট ছিল নারকেল তেলের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু বাজারে নারকেল তেলের নামে নানা প্রকার কেমিক্যাল বিক্রি হচ্ছে, ঘ্রাণও ভালো। ফলে খাঁটি নারকেল তেলের চাহিদা কমেছে। এ ছাড়া নারকেল তেল উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও বেড়েছে। তাই নিম্ন-মধ্যবিত্তরা চাইলেও নারকেল তেল কিনতে পারে না। বাগেরহাটের নারকেল তেল শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে ভেজাল তেল বন্ধ এবং নারকেলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

বিসিক, বাগেরহাটের উপব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শরিফ সরদার বলেন, বাগেরহাট বিসিক শিল্প এলাকায় নারকেল তেলের ১৭টি কারখানা চালু ছিল। এর মধ্য ১১টি বন্ধ রয়েছে। বাকি ৬টির উৎপাদনও আগের তুলনায় অনেক কম। কাঁচামালের সংকটে মিলগুলো বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় নারকেল তেলের কারখানা গড়ে ওঠায় এই জেলার তেলের চাহিদাও কমে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএসএফের হাতে আটক বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় মিলেছে

বুড়িগঙ্গা থেকে তরুণ-তরুণীর হাত বাঁধা লাশ উদ্ধার

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাইরান কাজীর বিষয়ে ইলন মাস্কের মন্তব্যে বিস্ময়

অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশকালে বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তাকে আটকের দাবি বিএসএফের

মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, আবেদন ফি মাত্র ১৪ হাজার টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত