Ajker Patrika

‘নানা প্রতিবন্ধকতায় অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়নি’

মো. ফাহাদ বিন সাঈদ, জাককানইবি
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ০২
‘নানা প্রতিবন্ধকতায় অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়নি’

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) পঞ্চম উপাচার্য হিসেবে ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান। আগামী ১৩ নভেম্বর চার বছরের পূর্ণ মেয়াদ শেষ হবে সমাজবিজ্ঞানের এই অধ্যাপকের। উপাচার্যের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চার বছরের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসাব কষছেন।

পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা উপাচার্য ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান সাফল্য-ব্যর্থতাসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি মিষ্টি করেই কথা বলি, রূঢ়ভাবে বলি না। আমি যা করতে চাই তা অবশ্যই বলব। কিন্তু বাস্তবায়ন হওয়া না হওয়াটা পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। সব ক্ষেত্রে দায়ী আমি নই, কিন্তু উপাচার্য হিসেবে দায় আমাকেই নিতে হয়।’

অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান প্রশংসিত হয়েছেন উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পাঁচ দিন পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করায়। এরপর থেকেই প্রশ্ন ফাঁসমুক্ত ও তদবির-লবিং বিহীন সম্পন্ন হয় প্রতি বছর ভর্তি কার্যক্রম।

উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দিয়েছিলেন তিনি। তিনি আসার পর বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগ থেকে পিএইচডি-এমফিল চালুর মাধ্যমে ডিগ্রি করার সুযোগ হয়েছে দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীদের।

একাডেমিক সফলতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান স্বল্পতা সত্ত্বেও পাঁচটি নতুন বিভাগ ও দুটি নতুন অনুষদ খোলা হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি বিভাগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বরাবর আবেদন করলেও যথেষ্ট স্থান না থাকায় অনুমোদন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার পাঁচ তলায় উন্নীতকরণ, পাঁচ তলা বিশিষ্ট গেস্টহাউস নির্মাণ, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের একাডেমিক ভবনের কাজ ত্বরান্বিতকরণ ও বিভিন্ন অবকাঠামোগত ত্রুটি দূরীকরণ, নবনির্মিত ১০ তলা বিশিষ্ট ২টি ছাত্র হল ও ছাত্রী হলের কাজ ত্বরান্বিতকরণ, নতুন ১০ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের কাজ শুরু করা ও ৩ তলাবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে এই চার বছরে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ও নজরুলের একটি করে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হচ্ছে।

অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান সরকারি ছুটিসহ পুরো বছরই কাটান ক্যাম্পাসে। বছরের দুই ঈদের এক ঈদ করেন বাড়িতে। তার ভাষ্য, ‘দায়িত্বে অবহেলা করা মানে তো দেশপ্রেম নয়। শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম হলো মন দিয়ে লেখাপড়া করা। আর শিক্ষকদের দেশপ্রেম হলো শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।’

বিভিন্ন মহলে সমালোচনাও কম নেই উপাচার্যকে নিয়ে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে আমি আনহ্যাপি। আমি আমার দায়িত্ব স্বাধীনভাবে পালনে তদবির-সুপারিশ ও বিভিন্ন চাপের কারণে নীতিগত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারি না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজটের দায় স্বীকার করে ভিসি বলেন, ‘বিভাগীয় প্রধান ও পরীক্ষা কমিটির প্রধানের দায়িত্বশীল আচরণ না করার কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। আমি সবাইকে অনুরোধ করেছি, কোনো কাজই হয় না। গ্রুপিং রাজনীতির বলি হয় শিক্ষার্থীরা।’

কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে বলেন, ‘মেডিকেল সেন্টার ব্যথার দান-এ কিছুই করতে পারিনি। অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোর উন্নয়ন করা প্রয়োজন ছিল, পারিনি। সৌন্দর্যবর্ধনে সবুজ ক্যাম্পাসে পরিণত করার ও অন্যান্য শোভাবর্ধক উন্নয়নকাজ করার যথেষ্ট চেষ্টা ছিল। অনেক কিছু করার সদিচ্ছা ছিল, নানা প্রতিবন্ধকতায় সেগুলো সম্ভব হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত