Ajker Patrika

সংশয়ী প্রেমেন্দ্র মিত্র

সম্পাদকীয়
সংশয়ী প্রেমেন্দ্র মিত্র

যখন ছোট ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, তখন যুগটাই ছিল ইংরেজি শেখা নিয়ে গর্ব করার। যে যত বেশি ইংরেজির সঙ্গে পরিচিত হবে, সে তত বিজ্ঞ হিসেবে নাম কিনবে। তাই ইংরেজি শেখাটাকে চাপ হিসেবে নিতে হয়নি। স্কুল লাইব্রেরির বাংলা বইগুলো সব পড়া হয়ে গেছে। সিক্সথ্ ক্লাসের ছাত্র যখন, তখন লাইব্রেরি থেকে তুলে নিয়ে এলেন একটি বই। লেখকের নাম জুলস ভার্ন। লেখক ইংরেজ নন, ফরাসি। ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’ ছিল বইটির নাম। অনুবাদটা ছিল ঝরঝরে। বইটা যেন গিলছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। বইটি শুধু ইংরেজির সঙ্গে পরিচয় করায়নি; বরং বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির সঙ্গেও মিতালি পাতাতে সাহায্য করেছে।

তাহলে প্রথম যে বইটি পড়লেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, সেটি কোনো ইংরেজের লেখা ছিল না। ইংরেজ লেখকের প্রথম বই ‘অলিভার টুইস্ট’। চার্লস ডিকেন্সের লেখা। বইটি পড়তে গিয়ে বুঝলেন, মূল ইংরেজিতেই তো লেখা, কিন্তু ভাষা একটু দুরূহ বলে মনে হচ্ছে। ভাষার বাধা পার হয়ে কাহিনির মধ্যে ঢোকা একটু আলো-আঁধারিতে বাধা পড়ল। আবছা আলোয় যেন কাহিনিটি দেখতে পেলেন তিনি। সেই আলো-আঁধারির টানেই স্কুল লাইব্রেরির সব ইংরেজি বই পড়ে শেষ করলেন। এখন করবেন কী? বই পড়ার নেশা তো হঠাৎ করেই ছেড়ে দেওয়া যায় না। যে পড়ে, তার কাছে এ নেশা ভয়ংকর নেশা!

তাই কলকাতার ভবানীপুরের যদুবাজারের উল্টো দিকের রাস্তার দোতলায় একটি লাইব্রেরির সন্ধান পেয়ে বর্তে গেলেন তিনি। লাইব্রেরিটির নাম ছিল কটেজ লাইব্রেরি। বয়স তখন কম, একটু সংকোচভরেই সেখান থেকে ইংরেজি বই নিতেন তিনি। কারণ, এতটুকু ছেলে, বাংলা বই না নিয়ে ইংরেজি বই নিচ্ছে, তা নিয়ে কেউ যদি ঠাট্টা করে!

এবং তারপর কিনতে শুরু করলেন বই। ফুটপাত থেকে একদিন কিনলেন গ্রিন ইঙ্গারসলের একটি বই। কেন তিনি আস্তিক, সে কথা প্রমাণ করার জন্যই লেখা হয়েছিল বইটি। অথচ বইটি পড়ে প্রেমেন্দ্র মিত্র হয়ে গেলেন সংশয়বাদী! 

সূত্র: প্রেমেন্দ্র মিত্র, স্মৃতিকথা ও অন্যান্য, পৃষ্ঠা ৬১-৬৩

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত