Ajker Patrika

ঘুরেফিরেই ছাত্রলীগ

সম্পাদকীয়
ঘুরেফিরেই ছাত্রলীগ

নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের কারও না কারও নাম জড়িত থাকা এখন একটি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কোথাও কোনো খারাপ কিছু ঘটলে প্রথমেই প্রশ্নআসে, ক্ষমতাসীন দলের কেউ এর পেছনে নেই তো? রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘাত-সংঘর্ষ যেমন গা সয়া হয়ে গেছে, তেমনি নিজেদের মধ্যে আত্মঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়াও এখন চাঞ্চল্যকর বলে মনে হয় না। মূল দলের কারও কারও বিরুদ্ধে যেমন লুটপাটে জড়িত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তেমনি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কিংবা নেতার ছাতাধরাদের নাম বাদ যাচ্ছে না।

তবে খবর হওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে ছাত্রলীগ। একসময় সিট দখল, সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, খুন-জখমসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে শোনা গেলেও এখন এমন সব বিষয়েও অভিযোগ উঠছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে, যা শুনলে যেকোনো সচেতন মানুষেরই কষ্ট পাওয়ার কথা। কারণ, ছাত্রলীগ সংগঠনটির সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম জড়িয়ে আছে এবং এই সংগঠনের রয়েছে গৌরবময় অতীত ঐতিহ্য। সেই সংগঠনের নেতৃস্থানীয় কারও নামে গরু চুরির অভিযোগ উঠবে—এটা ভাবা যায়!

বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকার একটি খবরের শিরোনাম ‘গরু চুরির মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেত্রী’। ধামরাই থানায় কয়েকটি গরু চুরির ঘটনায় ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক বাবলী আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কয়েকজন পেশাদার চোর গরু চুরি করে সেগুলো বাবলী আক্তারের হেফাজতে রাখত। তারপর সেই চোরাই গরু বিক্রি করা হতো।একজন কলেজছাত্রী এবং একটি সংগঠনের কমিটিতে থাকা বাবলী আক্তার যে এমন অপরাধে জড়িত, তা আগে তাঁর নিকটাত্মীয় ও সংগঠনের কেউ জানতে পারেননি, নাকি জেনেও চুপ করে ছিলেন? গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁকে ছাত্রলীগের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো, অব্যাহতি দিয়ে কি ছাত্রলীগ দায়মুক্ত হলো? তাঁরা ছাত্রলীগে জায়গা পান কীভাবে? বাবলী আক্তারের মতো আর কেউ যে এই সংগঠনে নেই, কে বলতে পারে?

ছাত্রলীগ বা সরকার-সমর্থক কোনো না কোনো সংগঠনের পরিচয়ধারীদের নাম যখন দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তখন নীতিনির্ধারকদের কি সামান্য কষ্টও হয় না?

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় দলের নেতা-কর্মীদের সংযত আচরণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজি চলতে দেওয়া হবে না। ছাত্র হোক আর যেই হোক, আইন অমান্য ও চাঁদাবাজি করলে গ্রেপ্তার হবে, শাস্তি দেওয়া হবে, সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে।’

এমন হুঁশিয়ারি ছাত্রলীগসহ সরকারের কিছু বেপরোয়া সমর্থকের কানে ঢোকেনি। ঢুকলেও কেউ কেউ তা আমলে আনেনি। দুর্দমনীয় সমর্থকদের অপকর্মের কারণে শেখ হাসিনার সরকারের ভাবমূর্তি যে কিছুটা হলেও অনুজ্জ্বল হয়েছে, তা কি অস্বীকার করা যাবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত