Ajker Patrika

ইউটিউব ওলামা

শামীমা জামান
আপডেট : ২২ মে ২০২২, ০৯: ০৮
ইউটিউব ওলামা

সম্প্রতি গণকমিশনের গবেষণায় অভিযুক্ত ১১৬ জন আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে দুদকে যে দুর্নীতির অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে বেশ কিছু অনলাইনে বিতর্ক দেখা যাচ্ছে। যেখানে সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষের দু-একজনের সরব উপস্থিতি রয়েছে। এটিকে আদৌ ‘একাডেমিক ডিসকাশন’ বলা যায় কি না, সে বিষয়েও যথেষ্ট কথা থেকে যায়। যদিও গতানুগতিক টক শোতে আজকাল হরহামেশাই আলোচকদের মারমুখী আচরণ দেখা যায়। কিন্তু যাঁরা নিজেদের সমাজের সম্মানিত আলেম সমাজ হিসেবে ‘সাতখুন মাফ’ টাইপ সম্মান দাবি করেন, তাঁদের আচরণ তো মারমুখী হতে পারে না। তাঁদের মুখের ভাষাও অশালীন হতে পারে না। অপর মুসলিমকে আঘাত করে কথা বলা বা অশোভন শব্দে চিৎকার করা কি আলেমের শোভা পায়?

কিন্তু দেখলাম স্কলার বলে দাবিদার পীরজাদা (ওয়াজের বেশির ভাগজুড়েই তাঁর পীর-পুরী বংশের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়েই গুণগান চলে), সম্মানিত আলেম অপর পক্ষকে ‘বেয়াদব বেয়াদব’ বলে গর্জে উঠছেন।

যে ১১৬ জন বক্তার ব্যাপারে দুদকে অভিযোগ এসেছে, ইউটিউব-ফেসবুকের কল্যাণে তাঁদের অনেককেই আমরা চিনি। তাঁদের কেউবা সেখানে সুরেলা কণ্ঠে গান গাইছেন, কেউবা দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে কুরুচিপূর্ণ ভঙ্গি করে বিশাল বাদশাহি চেয়ারে লাফ দিয়ে উঠছেন, কেউবা আরেক বক্তাকে কাফের মুরতাদ তকমা দিয়ে যাচ্ছেন। কেউবা টাকা গুনে গুনে ছড়া কাটছেন, কেউবা করোনার জন্য মামুন-মারুফ নামের মিথ্যে চরিত্রের আজগুবি বয়ান দিচ্ছেন, কেউবা গর্ভবতী নারীকে কুকুরের সঙ্গে তুলনা করছেন। নাহ্‌, তাঁদের এই তামাশার বর্ণনা দিতে গেলে গণকমিশনের শ্বেতপত্রের চেয়েও পৃষ্ঠা দীর্ঘ হয়ে যাবে। যেসব বক্তৃতা শুনে মানুষ ইসলাম থেকে আরও দূরে সরে যেতে পারে। অথচ তাঁরা তো মানুষকে ইসলামের পথে আনার জন্যই রাতভর এসব ওয়াজ মাহফিল করেন।

যে লাখ লাখ টাকা হাদিয়া নামক অর্থ ব্যয় করে হেলিকপ্টারে করে সম্মান দিয়ে তাঁদের আনা হয়, সেই অর্থের জন্য নিশ্চয়ই তাঁরা এসব করেন না। কারণ, ইসলামে দ্বীন দিয়ে দুনিয়া কামানো সম্পূর্ণ নিষেধ। আলেমদের নিয়ে কিছু বললেই একদল ‘আমিন আমিন’ জপা লোক তেড়ে আসে।

তাদের এই বিলাসবহুল জীবনযাপন, বিদেশ ভ্রমণ এসব দেখে গণকমিশনের ‘ঈর্ষান্বিত’ হয়ে দীর্ঘ গবেষণার দরকার আদৌ ছিল কি না, সে আলাপের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তালিকাভুক্ত মাদ্রাসাগুলোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহলের নজরদারি। যেখানে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার কথা শোনা যায়। বিষয়টি যদি শুধু ইস্যু তৈরি ও জাতিকে বিভাজনের নিমিত্তে হয়, তবে তা দুঃখজনক। কারণ, কোনো প্রকার স্বার্থসিদ্ধির জন্য জঙ্গিবাদের মতো একটি ভয়ানক সাপ নিয়ে খেলা করা উচিত হবে না। এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে, গণকমিশন ব্যাংক লুট, বালিশ কেনা, খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশসফরগুলোর বাজেট বিষয়ে কিছু না বলে হঠাৎ গা-ঝাড়া দিয়ে আলেম-ওলামাদের সম্পদের পেছনে পড়ল কেন? তা-ও এই তালিকাভুক্ত আলেমরা সরকারি মদদপুষ্ট আলেম সমাজও নয় যে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।

কদিন পর পর নানান ইস্যু নিয়ে জাতিকে যে বিভাজনের চেষ্টা, তাতে দুই পক্ষের ভূমিকা একই রকম উগ্র। একদল মেরেকেটে হুংকার দিয়ে দেশে ইসলামি শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে বদ্ধপরিকর। ইসলামি শাসনব্যবস্থা এলেই কি ধরে-বেঁধে মানুষকে ভালো বানানো যাবে? তাহলে তো আর ইসলামি রাষ্ট্রগুলোতে হালাল পতিতালয় বা মাদক ব্যবসা রমরমা হতো না। ধর্ম একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। হিসাবটা সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে মানুষের। যার যার কর্মফল সে সে ভোগ করবে।

আরেকদল ধর্মনিরপেক্ষতার নামে শুধু ইসলামবিদ্বেষী আচরণে পটু। এসব বিতর্কিত আলেমদেরই ইসলামের প্রতিনিধি মনে করে পরিষ্কার জল ঘোলা করতে ব্যস্ত। কথা হলো, তারা যদি প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ হন তবে এমন আচরন করার কথা নয়। কিন্তু দেখা যায়, অন্য সব ধর্মের প্রতি একটা আঁতলামি ঠিকই আছে, শুধু ইসলাম নিয়ে আপত্তি। এই আপত্তির একটি মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাও পেয়েছিলাম শাহবাগের এক প্রথম সারির যোদ্ধার কাছ থেকে। তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘আপনি কি নাস্তিক?’ উত্তরে তিনি বলেছিলেন যে, নাস্তিকতার মাঝেই লুকিয়ে আছে আস্তিকতা। সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস না করলে তাঁকে নিয়ে এত আলোচনা কেন?

লেখক: শামীমা জামান, নিউইয়র্কপ্রবাসী সাহিত্যিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অপারেশন সিন্দুর ঘিরে আলোচিত কে এই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি

কাশ্মীরে বিধ্বস্ত বিমানের অংশবিশেষ ফরাসি কোম্পানির তৈরি, হতে পারে রাফাল

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

নিজ কার্যালয়ে র‍্যাব কর্মকর্তার গুলিবিদ্ধ লাশ, পাশে চিরকুট

আকাশ প্রতিরক্ষায় কে এগিয়ে, পাকিস্তান কি ভারতের আক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত