Ajker Patrika

অন্য উচ্চতায় ওঠার স্বপ্ন ‘কেওক্রাডং দানবে’র

নাজিম আল শমষের, ঢাকা
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ৫৫
অন্য উচ্চতায় ওঠার স্বপ্ন ‘কেওক্রাডং দানবে’র

জেসপার লালখমসাংয়ের একটা মজার ডাকনাম আছে। জন্ম আর শৈশব কেটেছে দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ চূড়া কেওক্রাডংয়ের ঢাল ঘেঁষে ছোট গ্রাম রুমানায়। শরীরে বইছে পাহাড়ি রক্ত। নিজের নামের পাশে তাই ‘হিলি বিস্ট বা পাহাড়ি দানব’ নামটা যোগ করে নিয়েছেন জেসপার। কেওক্রাডংয়ের এই পাহাড়ি দানবের চোখে এখন ‘ইউএফসি’তে খেলার স্বপ্ন।

মিক্সড মার্শাল আর্টকে (এমএমএ) জনপ্রিয় করতে মার্কিন ব্যবসায়ী আর্ট ডেভি ও ব্রাজিলিয়ান ররিওন গ্রেসির যৌথ চেষ্টায় ১৯৯৩ সালে জন্ম নেয় আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ বা ইউএফসি। বক্সিং, জুজুৎসু, মুয়াই থাই, কারাতে, জুডোর সংমিশ্রণকে একসঙ্গে বলা হয় মিক্সড মার্শাল আর্ট। মার্কিন ব্যবসায়ী ডানা হোয়াইটের হাত ধরে এখন বিশ্বজুড়ে বেশ জনপ্রিয় ইউএফসি। আইরিশ কনর ম্যাকগ্রেগর আর রাশিয়ার খাবিব নূরমাগোমেদভের মতো তারকারা এই প্রতিষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছেন বহুগুণ। বিশ্বের লাখ লাখ এমএমএ ফাইটারদের জন্য ইউএফসি এখন সর্বোচ্চ চূড়া। সেই চূড়ার দিকেই এখন দৃষ্টি জেসপারের।

এমএমএ প্রতিযোগিতাগুলোয় সাধারণত একজন ফাইটারের বিপক্ষে তিন রাউন্ড লড়েন অপর আরেক ফাইটার। পাঁচটি অ্যামেচার ও দুটি পেশাদার ফাইট মিলিয়ে মোট সাত ফাইটে অংশ নেওয়া জেসপারের কাছে সব প্রতিপক্ষই ধরাশায়ী হয়েছেন প্রথম রাউন্ডে। শান্ত মেজাজের এই ২৩ বছর বয়সী এই তরুণ রিংয়ে নামলেই হয়ে ওঠেন আগ্রাসী। সব প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জয় পেয়েছেন নকআউট ও টেকনিক্যাল নকআউটের মাধ্যমে। সাধারণের কাছে অচেনা এ খেলাটায় বাংলাদেশের বড় প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন, নিজের শ্রেণিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা হিসেবে।

৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার ছিপছিপে গড়নের জেসপার খেলেন ব্যান্টমওয়েট শ্রেণিতে। ৫৭.২ কেজি থেকে ৬১.২ কেজি ওজনের ফাইটাররা সাধারণত এই শ্রেণির ফাইটার। নিজের হালকা গড়ন আর উচ্চতাকে সবচেয়ে বড় শক্তি বলে মনে করেন তিনি। পাহাড়ি রক্ত ধমনিতে থাকায় দমও তাঁর অফুরন্ত।

২০১৭ সালে অপেশাদার বা অ্যামেচার ফাইটিংয়ের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল জেসপারের এমএমএ ক্যারিয়ার। ২০১৯ সালে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতের কলকাতায় নিজের প্রথম পেশাদার ফাইটেই হারিয়েছেন মুম্বাইয়ের এক প্রতিপক্ষকে। পরের বছর একই শহরে উত্তর প্রদেশের আরেক প্রতিপক্ষ ধরাশায়ী হয়েছেন জেসপারের ঘুষিতে।

জেসপার স্বপ্ন দেখছেন এমএমএ ফাইটার হওয়ার, ইউএফসিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ওড়ানোর। তাঁর এ স্বপ্নে বড় বাধা হয়ে এসেছে করোনা। ইউএফসিতে খেলতে হলে বাড়াতে হবে পেশাদার ফাইটের সংখ্যা। অন্তত আরও তিন-চারটি পেশাদার লড়াইয়ে জিততে পারলে জোরালো হবে ইউএফসিতে খেলার সম্ভাবনা। আপাতত স্বপ্নযাত্রা থমকে আছে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায়।

আছে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবও। বাংলাদেশে নেই বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও কোচ। বিশ্বজুড়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেলেও এমএমএ এখনো এই দেশের সাধারণ মানুষের কাছে অচেনাই। জেসপারের লক্ষ্য, থাইল্যান্ডে গিয়ে অন্তত তিন মাসের ভালো প্রশিক্ষণ নেওয়া। চোটপ্রবণ খেলা হওয়ায় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাঁর বাবা-মা চাইছেন খেলাটা থেকে সরে আসুক। তাঁর এ পাহাড়সমান বাধা নিয়ে জেসপার বলছিলেন, ‘ব্যান্টমওয়েটে আমার উচ্চতায় খুব কম ফাইটার আছে। এটা একটা বড় সুবিধা। থাইল্যান্ডে একটা প্রশিক্ষণ নিতে পারলে একটা বড় সুযোগ আছে।’

যতই বাধা থাকুক, জেসপারের চোখে প্রত্যয়। প্রতিবার লড়াই শেষে তাঁর শরীরে জড়িয়ে থাকে বাংলাদেশের পতাকা। সেই পতাকাকে জড়িয়ে এবার অন্য এক উচ্চতায় ওঠার স্বপ্ন ‘কেওক্রাডং দানবে’র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত