Ajker Patrika

মৃত্যুর আগে তাঁদের শেষ বার্তা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ০৭
মৃত্যুর আগে তাঁদের শেষ বার্তা

ইংলিশ চ্যানেলের বরফ শীতল পানিতে ভেসে থাকার জন্য একে অপরের হাত ধরে ছিল নারী, পুরুষ ও শিশুদের একটি দল। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছিলেন উদ্ধারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার। কিন্তু ব্যর্থ হন। আর তাঁরা যে ডিঙিটিতে করে ব্রিটিশ উপকূলে পৌঁছানোর আশা করেছিলেন, সেটিও ভাসতে থাকে গভীর সমুদ্রে।

এরপর কী ঘটেছিল সেখানে? মোবাইল ফোন থেকে পাঠানো বিভিন্ন বার্তা, বেঁচে যাওয়াদের সাক্ষ্য নিয়ে ওই নৌকায় থাকা অভিবাসীদের মৃত্যুর আগে শেষ কয়েক ঘণ্টার নানা ঘটনার তথ্য উঠে এসেছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

যাত্রার শুরু

২৩ নভেম্বর, ২০২১… যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য সন্ধ্যার আগেই ব্যাগ গোছাতে শুরু করেন ফ্রান্সের গ্র্যান্ডে-সিন্থের অস্থায়ী একটি ক্যাম্পে কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকা ২২ বছর বয়সী হাদিয়া হুসেন ও তাঁর পরিবার। এ জন্য তাঁদের পাড়ি দিতে হতো ‘মৃত্যুর পথ’ হিসেবে খ্যাত ইংলিশ চ্যানেল। পাচারকারীদের কথামতো সেদিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় দেশটির লুন-প্লেজ উপকূলে আরও ২৮ জনের সঙ্গে জড়ো হয় হাদিয়ার পরিবার।

যাত্রা শুরু করার আগে মোবাইল ফোন থেকে পরিবারের কাছে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন অনেকে। এর মধ্যে ছিলেন কুর্দিস্তান থেকে আসা তিন যুবক ইয়াসিন হাসান, মুস্তফা মিনা ও মোহাম্মদ কাদির। তাঁদের একজন বাবাকে বার্তা পাঠিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রিয় বাবা, আমার জন্য দোয়া করবেন। ৫-১০ ঘণ্টা পর আমি ব্রিটেনে থাকব এবং আপনাকে কল করব।’

এরপর রসুল ফারকা, হামাদ আবদুল রহমান, আফ্রাসিয়া আহমেদ, শাকের আলী, হাসান আলী এবং সিরওয়ান আলিপুরসহ ৯ যুবকের আরও একটি দল সেখানে আসে। এর মধ্যে হামাদ তাঁর মা’কে ফোন করে বলেছিলেন, ‘আমরা আজ রাতে যাত্রা শুরু করছি, আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

রাত ১০টার দিকে অভিবাসীদের পার হওয়ার জন্য চূড়ান্ত সংকেত দেন পাচারকারীরা। নৌকাগুলো ধীরগতিতে উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হতে থাকে। কিন্তু গভীর সমুদ্রে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ঢেউয়ের তীব্রতাও।

নৌকাডুবি

২৪ নভেম্বর রাত ১টা ৩০ মিনিট… ইংলিশ চ্যানেলের মাঝামাঝি পৌঁছানোর পর হাদিয়া এবং তাঁর দলকে বহনকারী নৌকাটি একদিকে কাত হয়ে পড়ে এবং সেটিতে পানি উঠতে থাকে। এ সময় পানি ফেলতে ফেলতেই ব্রিটিশ উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল অভিবাসীদের দলটি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ফরাসি সময় ভোর ৪টার দিকে পরিবারের কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন শাকের নামের এক যুবক। বিবিসির তথ্য বলছে, সেটিই ছিল অভিবাসীদের মধ্য থেকে পাঠানো শেষ বার্তা। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই প্রবল ঢেউয়ে ওই ডিঙিতে থাকা কমপক্ষে ৩০ জনের মধ্যে ২৮ জনই ডুবে মারা যান। পরে উদ্ধার করা হয় ২৭ জনের মৃতদেহ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত