শিল্প উৎপাদন হয়তো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে
তেল-গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে আনতে লোডশেডিং বা পাম্প বন্ধ রাখার যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, তা ঠিকই আছে। এর বিকল্প সরকারের করণীয়ও কিছু নেই। কারণ, বিশ্ববাজারেই জ্বালানি পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। দিনে দিনে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এতে এলএনজি বা পেট্রোলিয়ামের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এ জন্য কৃচ্ছ্রসাধন না করলে তো হবে না। এমনিতেই রিজার্ভ অনেক কমে গেছে। ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এখনই রিজার্ভের ওপর নিয়ন্ত্রণ না রাখলে ডলারের দাম আরও বেড়ে যাবে। এতে খাদ্যদ্রব্যসহ মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়ে যাবে।
বিশ্বের অনেক দেশই জ্বালানির চাহিদা কমিয়া আনতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমাদেরও নিতে হচ্ছে, এটা ঠিকই আছে। তবে এটা সঠিক ও সচেতনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তেল-গ্যাসের অভাবে কারখানাসহ শিল্প উৎপাদন হয়তো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে অর্থনীতিতে অনেক ক্ষেত্রেই এটা হয় যে, একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ইস্যুকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে অন্য অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিসের ওপর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে এটা প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির ওপর বেশি প্রভাব ফেলে। কারণ, যখন ইনফ্লেশন (মূল্যস্ফীতি) হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়, ধীর হয়।
সরকার বিকল্প হিসেবে দেশে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তেল আমদানিও হয়তো করা হচ্ছে। এর মধ্যেই পরিকল্পনা করে তেল-গ্যাসের মজুত আরও বাড়াতে হবে। তবে আমার মনে হয় না, আমরা শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থায় পড়ব। তাদের মতো তেল-গ্যাস সবকিছু বন্ধ করে দিতে হবে, এমন অবস্থায় আমরা যাব না।
-ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
সরকারের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সাশ্রয়সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলবে। যদি লোডশেডিং হয় তাহলে শিল্পকারখানাগুলোতে উৎপাদনক্ষমতা কমে যাবে। বেশ কিছু শিল্পকারখানা আছে, যেখানে বিদ্যুৎ চলে গেলে অনেক কাঁচামাল জমাট বেঁধে যায়। হঠাৎ করে যদি লোডশেডিং হয় এবং কারখানার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানতে পারল না, তখন কারখানার ক্ষতি হবে। পাশাপাশি কর্মঘণ্টা কমে যাবে।
এর ফলে কারখানায় উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাবে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের মজুত কমে যাচ্ছে। আর রপ্তানি যদি আরও কমে যায় তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের ওপর চাপ বাড়বে। সেই জন্য রপ্তানিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানাগুলো উৎপাদন বাড়াতে সরকারকে নজর দিতে হবে। কারণ, এসব কারখানায় যদি চাহিদামতো উৎপাদন না হয়, তবে মালামাল রপ্তানি করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এতে বিদেশি ক্রেতারা অসন্তুষ্ট হবে। আর ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এর ফলে ক্ষতির বিপরীতে জরিমানা দিতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে কার্যাদেশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানির প্রতি আলাদাভাবে নজর দিতে হবে। আর রেমিট্যান্স বাড়াতে বিদেশের মিশনগুলোতে নতুন করে বাড়তি কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।
-মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সিনিয়র সহসভাপতি, এফবিসিসিআই
নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যে
বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। যদিও ইতিমধ্যে সবকিছুর উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কারণ, আগেই তো গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। আবার যদি বাড়ানো হয়, তাহলে ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ, ব্যবসায়ীদের হাতে আলাদিনের চেরাগ নেই যে সবকিছু রাতারাতি সামলে উঠবেন। আরও খেয়াল রাখতে হবে যে বিদ্যুতের বিদ্যমান দামে অনেক কারখানার মালিক বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। বিদ্যুতের লোকজন লাইন কেটে দেন। আরও দাম বাড়ালে তখন অনেকে ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হবেন। কারণ, কর্মসংস্থান হারাবেন কারখানার শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টরা। এতে ওই সব ব্যবসায়ীর কাছে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাবে। কারখানা বন্ধ হলে ঋণের অর্থ আদায় করার পথ বন্ধ হয়ে যাবে; যার প্রভাব পড়বে ব্যাংক তথা পুরো অর্থনীতির ওপর।
করোনার সময় আমাদের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করার জন্য ঋণ দেওয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল যে ৩৬ মাস পরে সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু ১৮ মাস যেতে না যেতেই ঋণের বিপরীতে রিপেমেন্ট করতে হচ্ছে। অপর দিকে বিদেশি ক্রেতারা পণ্যমূল্য কম দিচ্ছে। পাশাপাশি সরকার ব্যবসায়ীদের ওপর কর বৃদ্ধি করেছে। শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কর বৃদ্ধি করে ১ শতাংশ করেছে। এটা নিয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করছেন না। এ অবস্থায় ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো পথ পাবেন না ব্যবসায়ীরা।
-মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ
উৎপাদন কমবে লোকসান বাড়বে
বিদ্যুৎ ও গ্যাস সাশ্রয়ে সরকারের এ নতুন সিদ্ধান্ত ব্যবসা ও উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। কারণ, আমরা সবকিছু গুছিয়ে বসেছি কাজ করার জন্য। এখন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে আমার উৎপাদন সক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হবে। কাজের সময় কমে যাবে। তাহলে কর্মীদের আমার দেওয়া মজুরি সক্ষমতাও কমবে। মানে আমার খরচ ঠিক থাকল, উৎপাদন সময় কমে গেল আর আমার উৎপাদন কমে গেল।
সর্বোপরি এটা আমার উৎপাদন, রপ্তানি ও মুনাফাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এলএনজি বন্ধ করলেও একই রকম সমস্যা হবে। আর ভার্চুয়াল অফিসেও উৎপাদনশীলতা কমবে। সব মিলিয়ে আমি মনে করি এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রপ্তানির গতিধারা বাড়াতে শিল্পকারখানার উৎপাদন বিঘ্নিত করা যাবে না। অর্থ সংস্থানের জন্য মিতব্যয়ী হওয়া ঠিক আছে, তবে তা যেন পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
-মৌসুমী ইসলাম,প্রেসিডেন্ট, অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাসরুট উইমেন এন্টারপ্রেনার্স বাংলাদেশ এমডি, প্রমিস্কো গ্রুপ
দাম বাড়িয়ে হলেও সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে
জ্বালানির উচ্চমূল্য নিয়ে সরকার একটি কঠিন সমস্যায় পড়েছে। তারা রাজনৈতিকভাবে এখনই দাম বাড়াতে চাচ্ছে না। কারণ, এ সিদ্ধান্ত জনপ্রিয় হবে না। আবার একই সঙ্গে এসব খাতে খরচ বাড়ছে। গ্যাসের দাম অনেক বেড়ে গেছে। তেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে।
এ ক্ষেত্রে সরকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। যদি এ সময় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আর দেশের বাজারে দাম বাড়ানো লাগল না। লোডশেডিং ও পেট্রলপাম্প বন্ধ রাখা সরকারের জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত। কারণ, তেল-গ্যাসের অভাবে কোনো কারখানা বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যদি পাঁচ-ছয় ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হয়; তাতে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ক্ষতি হবে। অথচ যদি দাম বাড়ানোর অপশন দেওয়া হতো, হয়তো অনেক ব্যবসায়ী তা বেছে নিতেন। কারও না পোষালে তাঁরা কারখানা বন্ধ রাখতেন। এখন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত সরকারই নিল। এর জন্য বেশি মূল্য দিতে হবে। আমার মনে হয় না যে এটা ভালো সিদ্ধান্ত হবে।
সরকার হয়তো আশাবাদী। দাম শিগগিরই কমে যাবে। তাহলে হয়তো দেশে আর দাম বাড়াতে হবে না। তারা এখন তেল আমদানি বন্ধ রেখেছে। কিন্তু যখন খুব প্রয়োজন হবে, তখন যদি দেখা যায়, আমরা তেলের জাহাজ আনতে পারছি না। তাহলে কিন্তু বিশাল সমস্যায় পড়তে হবে। তেল এক দিন বন্ধ রেখে তেমন কিছু হবে না, ব্যবহার বা চাহিদা কমবে না, মানুষের ভোগান্তি হবে। মানুষ এক দিন না পেলেও আগে-পরে কিনে তেল ব্যবহার করবে। চাহিদা কমবে দাম বাড়লে। এ জন্য কিছু দাম বাড়িয়ে হলেও সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। এতে চাহিদাও কমবে। না হলে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হতে পারে।
-আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পিআরআই
উৎপাদন না বাড়লে রপ্তানি বাড়বে না
বিদ্যুত সংকটের ফলে উৎপাদনব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে। আমাদের ব্যবসায় সরাসরি প্রভাব পড়বে। আমাদের উৎপাদন ধারণক্ষমতা অনুযায়ী যদি ইউটিলিটি সেবা তথা বিদ্যুৎ ও গ্যাস না পাই, তাহলে উৎপাদনের ওপর একটা আঘাত পড়বে; যার নেতিবাচক প্রভাব গিয়ে পড়বে রপ্তানির ওপর। এমনিতেই দেশের রপ্তানি বাড়ানোর সময় এসেছে। রপ্তানি বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। যদিও সরকার বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নানা বিষয় ভেবেচিন্তে নিচ্ছে। সেই অনুযায়ী সরকারের একটা প্রস্তুতি তো রয়েছে। দেশের উৎপাদন, ব্যবসা ও রপ্তানি বাড়াতে বিশেষ ছাড় দেওয়া উচিত।
বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে আমাদের ব্যবসার সার্বিক চিত্রও এই মুহূর্তে খুব একটা ভালো না। আমাদের কার্যাদেশ কমে গেছে; যার ফলে ব্যবসা অনেক কমে গেছে। পরিমাণের দিক থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ হতে পারে। এসব অবশ্য আমাদের দেশের কারণে হয়েছে, তা নয়। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে হয়েছে। আমাদের উৎপাদন না বাড়লে রপ্তানি বাড়বে না। আর রপ্তানি না বাড়লে ব্যবসায় চাপ সৃষ্টি হবে; যার প্রভাব কর্মসংস্থানের ওপর পড়বে। সব মিলিয়ে আমদানিকেও সাপোর্ট করতে হবে, রপ্তানিকেও সাপোর্ট করতে হবে। মানে আমরা যাতে উৎপাদন ঠিকঠাক করতে পারি এবং যার ফলে ব্যবসা সামগ্রিকভাবে ভালোর দিকে যায়।
-সৈয়দ এম তানভীর, এমডি, প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপ
শিল্প উৎপাদন হয়তো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে
তেল-গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে আনতে লোডশেডিং বা পাম্প বন্ধ রাখার যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, তা ঠিকই আছে। এর বিকল্প সরকারের করণীয়ও কিছু নেই। কারণ, বিশ্ববাজারেই জ্বালানি পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। দিনে দিনে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এতে এলএনজি বা পেট্রোলিয়ামের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এ জন্য কৃচ্ছ্রসাধন না করলে তো হবে না। এমনিতেই রিজার্ভ অনেক কমে গেছে। ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এখনই রিজার্ভের ওপর নিয়ন্ত্রণ না রাখলে ডলারের দাম আরও বেড়ে যাবে। এতে খাদ্যদ্রব্যসহ মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়ে যাবে।
বিশ্বের অনেক দেশই জ্বালানির চাহিদা কমিয়া আনতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমাদেরও নিতে হচ্ছে, এটা ঠিকই আছে। তবে এটা সঠিক ও সচেতনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তেল-গ্যাসের অভাবে কারখানাসহ শিল্প উৎপাদন হয়তো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে অর্থনীতিতে অনেক ক্ষেত্রেই এটা হয় যে, একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ইস্যুকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে অন্য অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিসের ওপর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে এটা প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির ওপর বেশি প্রভাব ফেলে। কারণ, যখন ইনফ্লেশন (মূল্যস্ফীতি) হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়, ধীর হয়।
সরকার বিকল্প হিসেবে দেশে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তেল আমদানিও হয়তো করা হচ্ছে। এর মধ্যেই পরিকল্পনা করে তেল-গ্যাসের মজুত আরও বাড়াতে হবে। তবে আমার মনে হয় না, আমরা শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থায় পড়ব। তাদের মতো তেল-গ্যাস সবকিছু বন্ধ করে দিতে হবে, এমন অবস্থায় আমরা যাব না।
-ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
সরকারের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সাশ্রয়সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলবে। যদি লোডশেডিং হয় তাহলে শিল্পকারখানাগুলোতে উৎপাদনক্ষমতা কমে যাবে। বেশ কিছু শিল্পকারখানা আছে, যেখানে বিদ্যুৎ চলে গেলে অনেক কাঁচামাল জমাট বেঁধে যায়। হঠাৎ করে যদি লোডশেডিং হয় এবং কারখানার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানতে পারল না, তখন কারখানার ক্ষতি হবে। পাশাপাশি কর্মঘণ্টা কমে যাবে।
এর ফলে কারখানায় উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাবে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের মজুত কমে যাচ্ছে। আর রপ্তানি যদি আরও কমে যায় তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের ওপর চাপ বাড়বে। সেই জন্য রপ্তানিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানাগুলো উৎপাদন বাড়াতে সরকারকে নজর দিতে হবে। কারণ, এসব কারখানায় যদি চাহিদামতো উৎপাদন না হয়, তবে মালামাল রপ্তানি করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এতে বিদেশি ক্রেতারা অসন্তুষ্ট হবে। আর ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এর ফলে ক্ষতির বিপরীতে জরিমানা দিতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে কার্যাদেশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানির প্রতি আলাদাভাবে নজর দিতে হবে। আর রেমিট্যান্স বাড়াতে বিদেশের মিশনগুলোতে নতুন করে বাড়তি কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।
-মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সিনিয়র সহসভাপতি, এফবিসিসিআই
নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যে
বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। যদিও ইতিমধ্যে সবকিছুর উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কারণ, আগেই তো গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। আবার যদি বাড়ানো হয়, তাহলে ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ, ব্যবসায়ীদের হাতে আলাদিনের চেরাগ নেই যে সবকিছু রাতারাতি সামলে উঠবেন। আরও খেয়াল রাখতে হবে যে বিদ্যুতের বিদ্যমান দামে অনেক কারখানার মালিক বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। বিদ্যুতের লোকজন লাইন কেটে দেন। আরও দাম বাড়ালে তখন অনেকে ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হবেন। কারণ, কর্মসংস্থান হারাবেন কারখানার শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টরা। এতে ওই সব ব্যবসায়ীর কাছে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাবে। কারখানা বন্ধ হলে ঋণের অর্থ আদায় করার পথ বন্ধ হয়ে যাবে; যার প্রভাব পড়বে ব্যাংক তথা পুরো অর্থনীতির ওপর।
করোনার সময় আমাদের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করার জন্য ঋণ দেওয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল যে ৩৬ মাস পরে সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু ১৮ মাস যেতে না যেতেই ঋণের বিপরীতে রিপেমেন্ট করতে হচ্ছে। অপর দিকে বিদেশি ক্রেতারা পণ্যমূল্য কম দিচ্ছে। পাশাপাশি সরকার ব্যবসায়ীদের ওপর কর বৃদ্ধি করেছে। শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কর বৃদ্ধি করে ১ শতাংশ করেছে। এটা নিয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করছেন না। এ অবস্থায় ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো পথ পাবেন না ব্যবসায়ীরা।
-মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ
উৎপাদন কমবে লোকসান বাড়বে
বিদ্যুৎ ও গ্যাস সাশ্রয়ে সরকারের এ নতুন সিদ্ধান্ত ব্যবসা ও উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। কারণ, আমরা সবকিছু গুছিয়ে বসেছি কাজ করার জন্য। এখন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে আমার উৎপাদন সক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হবে। কাজের সময় কমে যাবে। তাহলে কর্মীদের আমার দেওয়া মজুরি সক্ষমতাও কমবে। মানে আমার খরচ ঠিক থাকল, উৎপাদন সময় কমে গেল আর আমার উৎপাদন কমে গেল।
সর্বোপরি এটা আমার উৎপাদন, রপ্তানি ও মুনাফাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এলএনজি বন্ধ করলেও একই রকম সমস্যা হবে। আর ভার্চুয়াল অফিসেও উৎপাদনশীলতা কমবে। সব মিলিয়ে আমি মনে করি এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রপ্তানির গতিধারা বাড়াতে শিল্পকারখানার উৎপাদন বিঘ্নিত করা যাবে না। অর্থ সংস্থানের জন্য মিতব্যয়ী হওয়া ঠিক আছে, তবে তা যেন পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
-মৌসুমী ইসলাম,প্রেসিডেন্ট, অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাসরুট উইমেন এন্টারপ্রেনার্স বাংলাদেশ এমডি, প্রমিস্কো গ্রুপ
দাম বাড়িয়ে হলেও সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে
জ্বালানির উচ্চমূল্য নিয়ে সরকার একটি কঠিন সমস্যায় পড়েছে। তারা রাজনৈতিকভাবে এখনই দাম বাড়াতে চাচ্ছে না। কারণ, এ সিদ্ধান্ত জনপ্রিয় হবে না। আবার একই সঙ্গে এসব খাতে খরচ বাড়ছে। গ্যাসের দাম অনেক বেড়ে গেছে। তেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে।
এ ক্ষেত্রে সরকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। যদি এ সময় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আর দেশের বাজারে দাম বাড়ানো লাগল না। লোডশেডিং ও পেট্রলপাম্প বন্ধ রাখা সরকারের জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত। কারণ, তেল-গ্যাসের অভাবে কোনো কারখানা বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যদি পাঁচ-ছয় ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হয়; তাতে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ক্ষতি হবে। অথচ যদি দাম বাড়ানোর অপশন দেওয়া হতো, হয়তো অনেক ব্যবসায়ী তা বেছে নিতেন। কারও না পোষালে তাঁরা কারখানা বন্ধ রাখতেন। এখন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত সরকারই নিল। এর জন্য বেশি মূল্য দিতে হবে। আমার মনে হয় না যে এটা ভালো সিদ্ধান্ত হবে।
সরকার হয়তো আশাবাদী। দাম শিগগিরই কমে যাবে। তাহলে হয়তো দেশে আর দাম বাড়াতে হবে না। তারা এখন তেল আমদানি বন্ধ রেখেছে। কিন্তু যখন খুব প্রয়োজন হবে, তখন যদি দেখা যায়, আমরা তেলের জাহাজ আনতে পারছি না। তাহলে কিন্তু বিশাল সমস্যায় পড়তে হবে। তেল এক দিন বন্ধ রেখে তেমন কিছু হবে না, ব্যবহার বা চাহিদা কমবে না, মানুষের ভোগান্তি হবে। মানুষ এক দিন না পেলেও আগে-পরে কিনে তেল ব্যবহার করবে। চাহিদা কমবে দাম বাড়লে। এ জন্য কিছু দাম বাড়িয়ে হলেও সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। এতে চাহিদাও কমবে। না হলে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হতে পারে।
-আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পিআরআই
উৎপাদন না বাড়লে রপ্তানি বাড়বে না
বিদ্যুত সংকটের ফলে উৎপাদনব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে। আমাদের ব্যবসায় সরাসরি প্রভাব পড়বে। আমাদের উৎপাদন ধারণক্ষমতা অনুযায়ী যদি ইউটিলিটি সেবা তথা বিদ্যুৎ ও গ্যাস না পাই, তাহলে উৎপাদনের ওপর একটা আঘাত পড়বে; যার নেতিবাচক প্রভাব গিয়ে পড়বে রপ্তানির ওপর। এমনিতেই দেশের রপ্তানি বাড়ানোর সময় এসেছে। রপ্তানি বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। যদিও সরকার বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নানা বিষয় ভেবেচিন্তে নিচ্ছে। সেই অনুযায়ী সরকারের একটা প্রস্তুতি তো রয়েছে। দেশের উৎপাদন, ব্যবসা ও রপ্তানি বাড়াতে বিশেষ ছাড় দেওয়া উচিত।
বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে আমাদের ব্যবসার সার্বিক চিত্রও এই মুহূর্তে খুব একটা ভালো না। আমাদের কার্যাদেশ কমে গেছে; যার ফলে ব্যবসা অনেক কমে গেছে। পরিমাণের দিক থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ হতে পারে। এসব অবশ্য আমাদের দেশের কারণে হয়েছে, তা নয়। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে হয়েছে। আমাদের উৎপাদন না বাড়লে রপ্তানি বাড়বে না। আর রপ্তানি না বাড়লে ব্যবসায় চাপ সৃষ্টি হবে; যার প্রভাব কর্মসংস্থানের ওপর পড়বে। সব মিলিয়ে আমদানিকেও সাপোর্ট করতে হবে, রপ্তানিকেও সাপোর্ট করতে হবে। মানে আমরা যাতে উৎপাদন ঠিকঠাক করতে পারি এবং যার ফলে ব্যবসা সামগ্রিকভাবে ভালোর দিকে যায়।
-সৈয়দ এম তানভীর, এমডি, প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপ
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৩ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৩ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৩ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫