Ajker Patrika

মরার আগেই ‘মৃত’

সম্পাদকীয়
মরার আগেই ‘মৃত’

দুর্নীতি ও অনিয়ম আমাদের দেশে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে অনিয়ম বা দুর্নীতির খবর প্রায়ই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এমন একটি খবর ১৭ নভেম্বর আজকের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। ‘মরার আগেই মরে ভাতা বন্ধ হলো ফুল খাতুনের’ শিরোনামের খবরটি খুবই দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। সংবেদনশীল যেকোনো মানুষই খবরটি পড়ে কষ্ট পাবেন।

সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় দুস্থ মানুষদের সহায়তার জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এমনই একটি প্রকল্প বয়স্ক ভাতা। যাঁরা বয়সের ভারে কাজকর্ম করে আয়-উপার্জনের ক্ষমতা হারিয়েছেন, তাঁদের জীবনের শেষ দিনগুলো কিছুটা স্বস্তিতে কাটানোর সুযোগ হয় বয়স্ক ভাতার মাধ্যমে। পরিমাণ হয়তো খুব বেশি নয়, তবু এই সামান্য সহায়তাও কারও জন্য অনেক বড়।

ধামরাই উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের গরুগ্রাম এলাকার মৃত আব্দুল গফুরের স্ত্রী ফুল খাতুন বেগম (৮৫) এমনই এক অসহায় নারী। তিনি গত পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পেয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি তাঁর ভাতা বন্ধ হলে কারণ খুঁজতে ধামরাই উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁকে মৃত দেখিয়ে কার্ড বাতিল করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় ফুলবানু নামের এক বৃদ্ধাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। আর এই অপকর্ম করেছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য।

ফুল খাতুন বেগমের পরিবর্তে ফুল বানুর নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হলো কেন এবং একজন জনপ্রতিনিধি কেন কাজটি করলেন? ফুল বানুর জন্য ভাতা দেওয়া যদি ওই জনপ্রতিনিধি প্রয়োজনীয় মনে করে থাকেন, তাহলে তাঁর নামেও আলাদা কার্ড করে দিতে পারতেন। সেটাই হতো যথাযথ। একজন অসহায় নারীকে জীবিত অবস্থায় মৃত দেখিয়ে আরেকজনকে সহায়তা করা খুব মানবিক কাজ হয়েছে কি?

করোনাকালেও সরকার অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য যে সহায়তা কর্মসূচি নিয়েছিল, সেখানেও কিছু কিছু অনিয়মের খবর পাওয়া গিয়েছিল। প্রধানত সরকারি দলের স্থানীয় নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সহায়তা যাঁদের দেওয়া উচিত ছিল, তাঁদের বদলে দেওয়া হয়েছে যাঁদের সহায়তার প্রয়োজন ছিল না। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও অসৎ মানসিকতার কারণেই সরকারের নেওয়া জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিগুলো সফল হয় না।

শুধু কর্মসূচি গ্রহণ নয়, কর্মসূচিটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, সেটা দেখাও জরুরি। নজরদারি ও তদারকব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনাগুলো ঘটে থাকে।

তাই আমরা আশা করব, দুস্থদের সহায়তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের নাম তালিকাভুক্ত করার সময়ই ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া উচিত। যাঁর প্রয়োজন তাঁর নাম বাদ দেওয়া যেমন ঠিক নয়, তেমনি জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনকে সহায়তা করার ভালোমানুষি দেখানোও অনুচিত।

ফুল খাতুন বেগমকে তাঁর বয়স্ক ভাতা চলমান রাখার জন্য যথাযথ উদ্যোগ ধামরাই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকেই নিতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত