Ajker Patrika

পলায়ন

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ২১
পলায়ন

১৯৭১ সালে সারা বাংলাদেশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল বধ্যভূমি। সব বধ্যভূমির কথা ইতিহাসে উঠে আসেনি। এলেও তার গভীরতা বুঝিনি আমরা।

তেমনি একটি বধ্যভূমি ছিল জিঞ্জিরায়। ২ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা জিঞ্জিরায় যে তাণ্ডবের জন্ম দিয়েছিল, তা বর্ণনা করা কঠিন। মূলত এই নৃশংসতা ঘটেছিল কেরানীগঞ্জ থানার জিঞ্জিরা, কালিন্দি ও শুভাড্যায়।

অন্য অনেকের মতো কবি নির্মলেন্দু গুণও ঢাকা থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন জিঞ্জিরায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রথম যে কবিতাটি লিখেছিলেন কবি, তার রচনাকাল ২৮ মার্চ থেকে ২ এপ্রিলের মধ্যে। সেই কবিতায় ‘মানুষের মৃত হাড়ে সে এখন সশস্ত্র সন্ত্রাস’ পঙ্‌ক্তিটি ছিল। আরও দুটো পঙ্‌ক্তি ছিল এ রকম,

‘তাড়াতে তাড়াতে তুমি কত দূর নেবে?

এইতো আবার আমি ফিরে দাঁড়িয়েছি।’

২ এপ্রিল তিনি ছিলেন শুভাড্যায়। ভোর ৫টার দিকে কবির ঘুম ভাঙে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে। দরজা খুলতে দেরি হচ্ছে দেখে আশ্রয়দানকারীর পুত্র রফিক ফিসফিস করে বলে, ‘আপনারা তাড়াতাড়ি পালান, তাড়াতাড়ি…দেরি করবেন না, আর্মি আসছে।’ ভোরের পবিত্রতা ভেঙে তখন মর্টারের শেল আর মেশিনগানের শব্দ শোনা যাচ্ছে।

দৌড়ে সবাই মসজিদের দিকে যাচ্ছিল। মসজিদ লোকে লোকারণ্য। গুণেরও ঠাঁই হলো সেখানে। মসজিদের সামনের পাকা উঠোনে বেশ কিছু মৃত ও অর্ধমৃত পুরুষের দেহ পড়ে আছে।

মসজিদে কয়েকটি কোরআন শরিফ। তার একটি হাতে নিলেন গুণ। তাঁর মনে পড়ল স্কুলজীবনে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী লিখে তিনি জীবনের প্রথম পুরস্কারটি পেয়েছিলেন।

এ সময় সূর্যের আলোয় দেখা গেল পাকিস্তানিদের গানবোট এসে হাজির হয়েছে বুড়িগঙ্গার তীরে। এক তরুণ গুণকে বললেন, ‘কবি সাহেব, আমি আপনাকে চিনি। আপনি মসজিদ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যান। বলা যায় না, কেউ হয়তো আপনাকে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরিয়ে দেবে। আর এক মুহূর্ত দেরি করবেন না।’

পাশের খোলা জানালা দিয়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলেন কবি।

সূত্র: নির্মলেন্দু গুণ, আত্মকথা ১৯৭১, পৃষ্ঠা ১৬০-১৬৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএসএফের হাতে আটক বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় মিলেছে

বুড়িগঙ্গা থেকে তরুণ-তরুণীর হাত বাঁধা লাশ উদ্ধার

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাইরান কাজীর বিষয়ে ইলন মাস্কের মন্তব্যে বিস্ময়

অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশকালে বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তাকে আটকের দাবি বিএসএফের

মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, আবেদন ফি মাত্র ১৪ হাজার টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত