Ajker Patrika

বিক্রি কম, ভাড়ার টাকা উঠছে না ব্যবসায়ীদের

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২২, ১২: ১৭
বিক্রি কম, ভাড়ার টাকা উঠছে না ব্যবসায়ীদের

মেলায় একটি স্টল দিয়েছেন নারী উদ্যোক্তা শেফালী বেগম। বিক্রি কেমন চলছে জানতে চাইলে হিসাবের খাতা বের করে দেখালেন স্টলের কর্মী কনা খাতুন। দেখা গেল, ১৭ মার্চ মেলা শুরুর পর প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। ২২ মার্চ কিছুই বিক্রি হয়নি। ওই তারিখে হিসাবের খাতায় একটি ‘স্যাড ইমোজি’ এঁকে রাখা হয়েছে। কনা জানালেন, এটি তিনিই এঁকেছেন।

শেফালী পোশাক বিপণি নামে এই স্টলের মালিক শেফালী বললেন, মেলার কোনো প্রচার নেই। তাই ক্রেতার সংকট। বিক্রি নেই। ১৩ দিনের এই মেলায় অংশ নিতে ১২ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে স্টল নিয়েছেন। প্রতিদিনের ভাড়া ৯২৩ টাকা। মেলা শুরুর পর একদিনও ৯২৩ টাকার পণ্য বিক্রি হয়নি তাঁর স্টলে। শুধু তাঁর একার নয়, অন্য স্টলগুলোরও একই অবস্থা।

রাজশাহীর কালেক্টরেট মাঠে গত ১৭ মার্চ থেকে এই ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী মেলা’ শুরু হয়েছে। চলবে ৩০ মার্চ পর্যন্ত। জেলা প্রশাসন মেলার আয়োজন করেছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলছে। স্টল আছে ৭০ টি। জেলা প্রশাসনের গঠন করে দেওয়া একটি কমিটি মেলার সার্বিক দায়িত্বে। এই কমিটির সদস্যসচিব উইমেন এন্টারপ্রেনিয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ওয়েব) রাজশাহী বিভাগের সভাপতি আঞ্জুমান আরা লিপি। তিনিই সবকিছু দেখছেন।

এই মেলা নিয়ে কোথাও তেমন কোনো প্রচার চোখে পড়ছে না। ফলে ক্রেতারাও আসছে না।

গত বুধবার সন্ধ্যায় মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতার অভাবে ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন। ‘শৈল্পিক’ নামের একটি স্টলের সামনে গিয়ে বেচাবিক্রি কেমন জানতে চাইলে বিক্রয়কর্মী তরনী বলেন, ‘এই তো আপনিই আজ সারা দিনের মধ্যে প্রথম স্টলের সামনে এলেন। কিছু কিনলে আপনিই হবেন প্রথম ক্রেতা।’ তিনি বলেন, ‘মেলার কোনো প্রচার নেই। কোথাও মাইকিং শুনছি না। মেলা করতে হবে তাই করা। আমাদের খুব খারাপ অবস্থা।’

‘রং এর মেলা’ নামের একটি স্টলে বসেছিলেন রিয়াজ উদ্দিন জুয়েল। এটি তাঁর বোন সানজিদা পারভীনের স্টল। রিয়াজ উদ্দিন জানালেন, মেলা শুরুর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তাঁরা কিছুই বিক্রি করতে পারেননি। শুধু তাঁর নিজের ভাগনি ৮০০ টাকা দামের একটি থ্রি-পিস নিয়ে গেছেন। কেনা দামেই ভাগনিকে থ্রি-পিসটি দিয়েছেন তিনি।

কিছুক্ষণ পর সানজিদা পারভীন এসে জানালেন, ৩ হাজার টাকা দিয়ে স্টল নিয়েছেন। বাকি টাকার জন্য কমিটির লোকজন ঘুরছেন। বিক্রি নেই বলে টাকা দিতে পারছেন না।

সানজিদা বলেন, ‘এ পর্যন্ত বিসমিল্লাহ বলতে পারিনি। টাকা দেব কোত্থেকে? রাজশাহীর মতো জায়গায় ১২ হাজার টাকা ভাড়া খুব বেশি হয়ে গেছে। মেলার সার্বিক পরিস্থিতি দেখে ভাড়া কমানো উচিত। তা না হলে আমাদের মতো ছোট নারী উদ্যোক্তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন। মেলায় অংশ নেওয়ার আগ্রহ থাকবে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই মেলার জন্য সরকারি কোনো অনুদান নেই। স্টলের আয় থেকেই ব্যয় করতে হচ্ছে। স্টল করা, প্যান্ডেল করা, লাইটিংসহ অন্যান্য নানা রকমের খরচ থাকে। তাও মেলায় যদি এমন মন্দাভাব থাকে তাহলে মেলা শেষে আমরা ব্যবসায়ীদের বিষয়টা দেখব। এখনো মেলা আরও কয়দিন আছে। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয়।’

মেলার প্রচার না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব আঞ্জুমান আরা লিপি বলেন, ‘প্রচার তো হচ্ছে। শহরে মাইকিং করছি। রাস্তায় আজ ব্যান্ড পার্টি নামাব। আর ব্যবসায়ী যাঁরা, তাঁরা ব্যবসা মন্দার কথা একটু বলেই থাকেন।’

তিনি জানান, মেলার স্টল থেকে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা উঠবে। এই টাকা দিয়ে খরচ মেটানো হচ্ছে। জেলা প্রশাসক টাকা হাতে ছোঁননি, দেখেননি। মেলা শেষে যদি টাকা উদ্বৃত্ত থাকে সে ক্ষেত্রে এই টাকা কী করা হবে তা কমিটিই সিদ্ধান্ত নেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সমাবেশে দলীয় স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির বিবৃতি

তোরা যারা রাজাকার, সময় থাকতে বাংলা ছাড়: বাকের মজুমদার

কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি, স্থায়ী বসবাসের আবেদনে অপেক্ষা ১০ বছর

চাকরিতে কোটা: সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য আসছে সমান সুযোগ

রাজপথের চাপে কোনো বিচার করা সম্ভব নয়: চিফ প্রসিকিউটর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত