আ.লীগ নেতাদের ক্ষোভ

শেরপুরে ঝিনাইগাতীতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেলেন সাবেক ছাত্রদল নেতা তৌফিকুর রহমান এনামুল। তিনি মাদক মামলারও আসামি।

এছাড়া বিএনপি নেতা ওবাইদুল ইসলামকেও নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের ত্যাগী হাজারো নেতা-কর্মী থাকতেও ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাদের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকার মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

তবে উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেছেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ রেজুলেশন করে যে তালিকা দিয়েছে, সেটাই জেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। আমার ব্যক্তিগত কোনো মতামতে তালিকা কেন্দ্রে পাঠাইনি।

জানা গেছে, আগামী ৫ জানুয়ারি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ৭টি ইউপিতে নির্বাচন হবে। ৭টি ইউপির মধ্যে অন্তত ৩টি ইউপিতে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এসব ইউপির মধ্যে উপজেলার ধানশাইল ইউপিতে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন ছাত্রদলের ধানশাইল ইউনিয়নের সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তৌফিকুর রহমান এনামুল। তিনি কিছুদিন আগে শেরপুর জেলা আদালত চত্বর থেকে মাদকসহ আটক হন। বর্তমানে তিনি মাদক মামলার আসামি।

এ ছাড়া হাতিবান্ধা ইউপিতে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ওবাইদুল ইসলামকে। তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সদস্য। হাতিবান্ধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মকবুল হোসেন জানান, ওবাইদুল সাহেব ওয়ার্ড বিএনপির নেতা ছিলেন। তিনি কিভাবে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন সেটা আমরা জানি না। একই কথা জানান ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেমসহ বেশ কয়েকজন।

আরও জানা গেছে, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ৭টি ইউপির নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়।

এর মধ্যে কাংশা ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান জহুরুল হককে, ধানশাইলে তৌফিকুর রহমান এনামুলকে, নলকুড়াতে আক্তারুজ্জামান জামিকে, গৌরিপুরে বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান মন্টুকে, ঝিনাইগাতী সদরে শাহাদাৎ হোসেনকে, হাতিবান্ধায় ওবাইদুল ইসলামকে ও মালিঝিকান্দায় মোজাম্মেল হককে নৌকার প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়।

ধানশাইল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনুর ইসলাম জানান, তৌফিকুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। সে মাদক মামলার আসামি। তার পুরো পরিবারও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে সে কীভাবে মনোনয়ন পায়? আমরা তার মনোনয়ন পরিবর্তন চাই। একই কথা জানান স্থানীয় ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীনসহ কয়েকজন।

স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, একজন মাদক মামলার আসামি ও ছাত্রদলের নেতাকে কিভাবে মনোনয়ন দেওয়া হলো সেটি আমার বোধগম্য নয়।

ঝিনাইগাতী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান জানান, তৌফিকুর রহমান এনামুল ধানশাইল ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল এবং ওই কমিটি আমার সময়ে অনুমোদন করা। এ বিষয়ে জানতে নৌকার প্রার্থী তৌফিকুর রহমান এনামুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি।

অন্যদিকে হাতিবান্ধা ইউপিতে গত নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী নাছির উদ্দিনের বাবা ও স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সদস্য ওবাইদুল ইসলামকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে এলাকায় বিতর্কের ঝড় উঠেছে। হাতিবান্ধা ইউপিতে নৌকার প্রার্থী ওবাইদুল ইসলাম বলেন, আমি কখনো বিএনপি করিনি। আওয়ামী লীগের কাজে সবসময় সহযোগিতা করেছি। আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি। তার ছেলে সাবেক চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন জানান, আমি যুবলীগের রাজনীতি করেছি।

এছাড়া ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নে নৌকা মনোনীত প্রার্থী শাহাদৎ হোসেনের বাবা গত বছর নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও এবার তার ছেলেকে দেওয়া হয়েছে নৌকা প্রতীক।

এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আমিরুজ্জামান লেবু বলেন, আমার স্বাক্ষর জাল করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসব প্রার্থীদের প্রস্তাব কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন।

আমি সঠিক প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার দাবি করে আসছি। আমার স্বাক্ষর জাল করার বিষয়টির বিচার চেয়েছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ রেজুলেশন করে যে তালিকা দিয়েছে, সেটাই জেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। আমার ব্যক্তিগত কোনো মতামতে তালিকা কেন্দ্রে পাঠাইনি। পাঠানোর সুযোগও নেই।