Ajker Patrika

ভোট নিয়ে অনাস্থার দায় হুদা কমিশনের

মারুফ কিবরিয়া, ঢাকা
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮: ৪২
ভোট নিয়ে অনাস্থার দায় হুদা কমিশনের

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে শুরুতেই প্রশংসা কুড়িয়েছিল কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেটা ছিল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এরপর আবার চমক দেখায় রংপুর সিটি নির্বাচনে। কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে অনিয়মের দাপটে হুদা কমিশনের সব সুনামই জলে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কমিশন ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে অনাস্থা তৈরি করেছে, তা দূর করা কঠিন।

সবচেয়ে বড় অভিযোগ ওঠে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে। এই নির্বাচনে অনিয়ম সারা দেশে ‘রাতের নির্বাচন’ বলে পরিচিতি পায়। নির্বাচন কমিশনাররাও এটা স্বীকার করেন। পাঁচ বছর পর ‘রাতের নির্বাচন’সহ অনিয়ম আর সহিংসতার দায় নিয়ে আর তিন দিন পর বিদায় নিতে চলেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন।নূরুল হুদা কমিশনের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ, দশম জাতীয় সংসদের সাতটি এবং একাদশ জাতীয় সংসদের ২০টি উপনির্বাচন, ১২টি সিটি করপোরেশন, ৪৫৩টি উপজেলা পরিষদ, ২৬৩টি পৌরসভা ও ৪ হাজার ১৩৬ ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কমিশনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করা। বিশেষ করে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সবচেয়ে ভোটার অনুপস্থিতির নজির মেলে। সে সময় একেক ধাপে ৪২ কিংবা ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছিল। অথচ স্থানীয় এই নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ থাকার কথা ছিল। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ইসিকে। অবশ্য বরাবরের মতো সে সময়ও নির্বিকার ছিল সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। ইসির তৎকালীন সচিব বলেছিলেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটার না আসা তাঁদের মাথাব্যথা নয়। একটা রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য প্রচারও হয়েছে। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং দক্ষিণে ২৯ শতাংশ। পৌরসভার ভোটের হারও ছিল কম। তবে বেড়ে যায় বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা। ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো ভোট ছাড়াই চেয়ারম্যান হন ১১১ জন। আর সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে বিনা ভোটে বিজয়ী প্রার্থীর সংখ্যায় অন্য নজির স্থাপন করে। এবারের সাত ধাপের নির্বাচনে বিনা ভোটে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন ১ হাজার ৭২৩ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৬৯ জন। এ ছাড়া নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে ৩৯৬ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদে ৯৫৮ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।

জাতীয় নির্বাচনের আগে খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থী ও কর্মী, ভোটার এবং গণমাধ্যমকর্মীদের নানাভাবে চাপে রেখে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করার প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়া, সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে বুথ দখল করে ব্যালটে সিল মারা, পুলিশের বাড়াবাড়ি বা পক্ষপাতমূলক ভূমিকা নিয়ে বিরোধী পক্ষগুলোর নানা অভিযোগ ছিল। কিন্তু এসব অভিযোগের ব্যাপারে ইসিকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ শুরু থেকেই লক্ষ করা যায়। শপথ নেওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় ২০১৭ সালের জুলাইয়ে ইসি সচিবালয়ের ৩৩ জন কর্মকর্তার বদলি নিয়ে সিইসি নূরুল হুদা ও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের মধ্যে বিরোধ প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এরপর একাধিকবার সভা বর্জন করেন মাহবুব তালুকদার। পরে জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, সিটি নির্বাচনে সাংসদদের প্রচারের সুযোগ দেওয়া, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইসির মতবিরোধ চলে বিভিন্ন সময়। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও কমিশনে মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল। এসব ক্ষেত্রে মূলত মতবিরোধ দেখা গেছে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সঙ্গে অন্য কমিশনারদের। মেয়াদের শেষে এসেও সিইসি এবং মাহবুব তালুকদারকে একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে দেখা গেছে।

বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের কার্যক্রম প্রসঙ্গে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই কিছু পদক্ষেপে নির্বাচন কমিশন নিয়ে মানুষের মনে আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু কিছুদিনের কার্যক্রমে তারাই প্রমাণ করেছে তারা পক্ষপাতদুষ্ট, তাদের সততা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের তথ্য তুলে ধরা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো অনিয়মকে অস্বীকার করেছে। নিম্নমানের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দুবার ফল প্রকাশ করে প্রমাণ করেছে এই মেশিনে জালিয়াতি করা যায়। তিনি বলেন, এই কমিশন নির্বাচনব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে যে আস্থার সংকট তৈরি করেছে, তা সহজেই পূরণ হওয়ার নয়। এ জন্য সঠিক ও যোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, গত পাঁচ বছরে জঘন্য নির্বাচন হয়েছে। মানুষের বিশ্বাস উঠে গেছে ভোটের ওপর থেকে। শুধু তা-ই নয়, স্থানীয়, জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব পেশাজীবী সংগঠনের নির্বাচনগুলোর ওপরও পড়েছে।

অবশ্য নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম কমিশন নিয়ে বেশ তৃপ্ত। পাঁচ বছরে তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন বলে মনে করেন তিনি। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিয়ম হলে ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। বিচারব্যবস্থা আছে। কোনো প্রার্থীর অভিযোগ থাকে না। কিন্তু অন্যরা এ নিয়ে কথা বলেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ: এক্সিম ব্যাংকের নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৩০ জনের নামে মামলা

‘কথিত আওয়ামী লীগ সদস্যদের’ বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার বিষয়ে ভারত অবহিত নয়: মুখপাত্র

কলকাতার নিউটাউনে বসে আয়েশ করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

চাকরি না ছেড়েই বিদেশে পাড়ি, ৪৮ শিক্ষক বরখাস্ত

ভিসা ছাড়া পাকিস্তান সফরের চুক্তি হতে পারে শিগগির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত