Ajker Patrika

নিজেকে নিয়ে রসিকতা

সম্পাদকীয়
নিজেকে নিয়ে রসিকতা

আমরা তো জেনে এসেছিলাম, নিজেকে ভালো না বাসলে অন্যকে ভালোবাসার মধ্যে খাদ থাকে। একই সঙ্গে জানলে ভালো, নিজেকে নিয়ে রসিকতা করতে না পারলে রম্যরচনার যোগ্য হয়ে ওঠা যায় না। সৈয়দ মুজতবা আলী নিজেকে নিয়ে রসিকতা করতেন। এখনকার যুগে বলা হয়, ‘নিজেকে পচাতে’ পছন্দ করতেন। 

আমাদের দেশে প্রবন্ধ বলতে বোঝায় শক্ত শক্ত শব্দ দিয়ে গড়া লেখা, যার মানে বোঝা যাক আর না যাক, বিষয়টিকে জটিল করে তুললেই তা সার্থক বলে মনে হয়। কিন্তু সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখায় সেই পাণ্ডিত্যের বালাই নেই। তিনি সাতটি ভাষায় সওয়ার হয়ে জগৎসংসার থেকে সাগর সেচে মুক্তা আহরণ করতেন।
একটা সময় পর্যন্ত মনে করা হতো, বিচারপতির মতো উঁচু জায়গা থেকে জ্ঞান বিতরণ করবেন লেখক আর পাঠকেরা সে উপদেশ শুনতে থাকবেন। দিন বদলে গেছে। সাহিত্যিককে পাঠক আর গুরু হিসেবে চায় না, চায় বন্ধু হিসেবে।

সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন সত্যিই পাঠকের বন্ধু। নিজেকে নিয়ে কতটা ঠাট্টা করতে পারতেন সৈয়দ সাহেব, তা দেখা যাক।

একবার এক জার্মান পণ্ডিত সৈয়দ সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘শেক্‌সপিয়ারের কোন রচনাটি তোমার সবচেয়ে ভালো লাগে।’

মুহূর্তমাত্র চিন্তা না করে মুজতবা আলী বললেন, ‘হ্যামলেট।’ এ পর্যন্ত সব ঠিক ছিল, কিন্তু এরপর তিনি যোগ করলেন, ‘শেক্‌সপিয়ারের ওই একটা বইই আমি পড়েছি কিনা!’

আরেকবার নিজের চেহারার বর্ণনা দিচ্ছেন। ‘আমার ছবি তুলতে গিয়ে তাদের তিনখানা লেন্স বার্স্ট করল, আমার শাটারিং সৌন্দর্য সহ্য করতে না পেরে।’

এরপর নিজের রঙের বর্ণনা দিয়েছেন, ‘ফোটো হলো না। অয়েল পেইন্টিংওয়ালা বললেন, ‘‘কালো হলেও চলত, তা সে মিশই হোক না। কিন্তু এ যে বাবা খাজা রং! কালো কালির ওপর পিলা মসনে। তার ওপর কলাইয়ের ডালের পিছলে পড়া, না-সবুজ, না-নীল, না কিছু। আমার প্যালেট লাটে।’’’ বুঝুন! 

সূত্র: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সৈয়দ মুজতবা আলী স্মারকগ্রন্থ, পৃষ্ঠা ২৩৭-২৩৮ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত