জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
সবারই জানা, মধ্যযুগে হিন্দুশাস্ত্রগুলো রচিত হয়েছিল সংস্কৃত ভাষায়। রেনেসাঁপূর্ব ইউরোপের কথা যদি ভাবি, তাহলে দেখব, ইউরোপীয় দেশগুলোতেও তখন মাতৃভাষা খুব একটা পাত্তা পেত না। মুখের ভাষা যেন শুধুই মুখের ভাষা। লেখালেখি, বিজ্ঞানসাধনা, সাহিত্য রচনা সবকিছুই করতে হবে সম্ভ্রান্ত ভাষায়। এ কারণে রেনেসাঁপূর্ব ইউরোপের ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ডে লেখার ভাষা ছিল লাতিন। মৃত লাতিনেই বাঁধা ছিল শিক্ষা।
কিন্তু তাতে কি মন ভরে? ‘বিনা স্বদেশী ভাষা, মেটে কি আশা?’ আর সে কারণেই ইতালিতে দান্তে, পেত্রার্কদের নেতৃত্বে যে পরিবর্তন এল, সেটাই বদলে দিল পুরোনো পৃথিবীকে। দান্তের ‘ডিভাইন কমেডি’ বুঝিয়ে দিল মাতৃভাষার দিন এসে গেছে। এই ছিল শুরু।
একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে আমাদের ভূখণ্ডে। দেশি ভাষায় সাহিত্য কিংবা ধর্মচর্চার কথা ভাবতেই পারত না সেকালের মানুষ। অথচ দিব্যি কথা বলছে খাঁটি বাংলা ভাষায়। বাংলা ভাষা ওপরমহলে জায়গা করে নেওয়ার পেছনে আছে দুটো ঘটনা। প্রথমটি হলো মুসলমান সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতা, দ্বিতীয়টি শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব।
আগেই বলা হয়েছে, মুসলমান সুলতান কিংবা সুবাদার-নবাব এবং রাজকর্মচারী যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের ধর্মের ভাষা ছিল আরবি এবং রাজকার্যের ভাষা ছিল ফারসি। দেশি মানুষেরাও রাজকার্যে স্থান পাওয়ার জন্য কিংবা আভিজাত্য লাভের জন্য ফারসি শিখে নিত। এখন যেমন ইংরেজি শিখে নেয়, তেমনি। কিন্তু স্থানীয় সাধারণ হিন্দুদের মতোই স্থানীয় সাধারণ মুসলমানেরা বাংলা ভিন্ন আর কোনো ভাষাই জানত না। সুলতানরা এই বৈপরীত্যটা ধরতে পারলেন। শাসন করবেন দেশ, অথচ সে দেশের সাধারণ জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ হবে না, এ কেমন কথা? ফলে তাঁরা নজর দিলেন বাংলা ভাষার দিকে। খুবই দরকারি কথা হলো, এই সুলতান, নবাবরা বাংলায় এসে বাঙালির মতোই জীবনাচরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেন, মিশে গেলেন মূল জনস্রোতের সঙ্গে। নিজেদের আলাদা করে রাখলেন না।
মুসলমান শাসকেরা রামায়ণ, মহাভারত, ভগবতের কথা শুনতে ভালোবাসতেন। তাঁরাই এই গ্রন্থগুলোর বাংলা অনুবাদ করান। সুলতানরা বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। এর প্রভাব এসে পড়ে স্থানীয় রাজা, জমিদার, সামন্তদের ওপরও। তাঁরাও বাংলা ভাষায় কাব্যচর্চাকে উৎসাহ দেন। মাগন ঠাকুর আলাওলকে, কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রামপ্রসাদ আর ভারতচন্দ্রকে, কাশীজোড়ের জমিদার লক্ষ্মীনারায়ণ বলরাম চক্রবর্তীকে, কর্ণগড়ের রাজা যশোবন্ত সিং রামেশ্বর ভট্টাচার্যকে, আড়বার রঘুনাথ রায় কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীকে বাংলা ভাষায় কাব্য রচনায় উৎসাহ দেন। ফলে সাহিত্যের ধারা অনুযায়ী অনুবাদ সাহিত্যে সমৃদ্ধ হলো বাংলা এবং মৌলিক রচনাও জায়গা করে নিল বাংলা সাহিত্যে।
বড়ু চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতির রচনা সে সময় খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। বড়ু চণ্ডীদাস তাঁর ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ লিখলেন, যার কেন্দ্রে রইলেন রাধা-কৃষ্ণ। চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের ফলে বৈষ্ণব ধর্মও মানুষের মন ছোঁয়। চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাসেরা সমৃদ্ধ করে তুলতে থাকেন বাংলা সাহিত্য। এরপর মঙ্গলকাব্যগুলো রচিত হতে থাকে। মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, চৈতন্যজীবনীকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ঋদ্ধ হতে থাকে।
এখানেই মনে করিয়ে দিতে হবে, এ সময়টিতে বাংলার জনগণের অর্ধেক মুসলমানে পরিণত হয়েছে। মুসলমান সুলতানরা সাহিত্যকর্মে উৎসাহ দিলেও মধ্যযুগে মুসলমান কবির সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম। কেন কম? ভাষা আন্দোলন নিয়ে কথা বলার সময় এই কারণটির দিকে রাখতে হবে নজর। আমরা জানি, শাস্ত্রকথা বাংলায় লেখার কারণে চটে উঠেছিল ব্রাহ্মণেরা। দুর্বোধ্য, নাগালের বাইরের সংস্কৃত ভাষার কারণে শাস্ত্রের প্রতি তাদের দখল ছিল একচেটিয়া।
কিন্তু বাংলা ভাষায় তা অনুবাদ করার ফলে যে কেউ এখন শাস্ত্র পড়তে পারে নিজ ভাষায়! বাঙালি মুসলমানদের ছিল আরেক সমস্যা। তারা ধরেই নিয়েছিল শাস্ত্রের ভাষা, ধর্মের ভাষা বাংলা হতে পারে না। কারণ, বাংলা ‘হিন্দুয়ানি’ ভাষা। এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব চলেছে সতেরো শতক অবধি। এই কারণে মুসলিম কবি-লেখকদের রচনায় দেখতে পাব কৈফিয়তের সুর। কেন তাঁরা বাংলা ভাষায় লিখতে চান, তা নিয়ে নিজেরাই নিজেদের প্রবোধ দেন, অন্যকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। সে বিষয়েই বলব এবার। জানাব কী বলছেন শাহ মুহম্মদ সগীর, কী বলছেন সৈয়দ সুলতান, কী বলছেন হাজী মুহম্মদ, কী বলছেন আবদুন্নূর।
আর এই কথাগুলোই আমাদের নিয়ে আসবে আটচল্লিশ এবং বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের কাছে। বাঙালি মুসলমানের মন বোঝার জন্য এই আলোচনাটা হয়ে উঠবে জরুরি।
সবারই জানা, মধ্যযুগে হিন্দুশাস্ত্রগুলো রচিত হয়েছিল সংস্কৃত ভাষায়। রেনেসাঁপূর্ব ইউরোপের কথা যদি ভাবি, তাহলে দেখব, ইউরোপীয় দেশগুলোতেও তখন মাতৃভাষা খুব একটা পাত্তা পেত না। মুখের ভাষা যেন শুধুই মুখের ভাষা। লেখালেখি, বিজ্ঞানসাধনা, সাহিত্য রচনা সবকিছুই করতে হবে সম্ভ্রান্ত ভাষায়। এ কারণে রেনেসাঁপূর্ব ইউরোপের ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ডে লেখার ভাষা ছিল লাতিন। মৃত লাতিনেই বাঁধা ছিল শিক্ষা।
কিন্তু তাতে কি মন ভরে? ‘বিনা স্বদেশী ভাষা, মেটে কি আশা?’ আর সে কারণেই ইতালিতে দান্তে, পেত্রার্কদের নেতৃত্বে যে পরিবর্তন এল, সেটাই বদলে দিল পুরোনো পৃথিবীকে। দান্তের ‘ডিভাইন কমেডি’ বুঝিয়ে দিল মাতৃভাষার দিন এসে গেছে। এই ছিল শুরু।
একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে আমাদের ভূখণ্ডে। দেশি ভাষায় সাহিত্য কিংবা ধর্মচর্চার কথা ভাবতেই পারত না সেকালের মানুষ। অথচ দিব্যি কথা বলছে খাঁটি বাংলা ভাষায়। বাংলা ভাষা ওপরমহলে জায়গা করে নেওয়ার পেছনে আছে দুটো ঘটনা। প্রথমটি হলো মুসলমান সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতা, দ্বিতীয়টি শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব।
আগেই বলা হয়েছে, মুসলমান সুলতান কিংবা সুবাদার-নবাব এবং রাজকর্মচারী যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের ধর্মের ভাষা ছিল আরবি এবং রাজকার্যের ভাষা ছিল ফারসি। দেশি মানুষেরাও রাজকার্যে স্থান পাওয়ার জন্য কিংবা আভিজাত্য লাভের জন্য ফারসি শিখে নিত। এখন যেমন ইংরেজি শিখে নেয়, তেমনি। কিন্তু স্থানীয় সাধারণ হিন্দুদের মতোই স্থানীয় সাধারণ মুসলমানেরা বাংলা ভিন্ন আর কোনো ভাষাই জানত না। সুলতানরা এই বৈপরীত্যটা ধরতে পারলেন। শাসন করবেন দেশ, অথচ সে দেশের সাধারণ জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ হবে না, এ কেমন কথা? ফলে তাঁরা নজর দিলেন বাংলা ভাষার দিকে। খুবই দরকারি কথা হলো, এই সুলতান, নবাবরা বাংলায় এসে বাঙালির মতোই জীবনাচরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেন, মিশে গেলেন মূল জনস্রোতের সঙ্গে। নিজেদের আলাদা করে রাখলেন না।
মুসলমান শাসকেরা রামায়ণ, মহাভারত, ভগবতের কথা শুনতে ভালোবাসতেন। তাঁরাই এই গ্রন্থগুলোর বাংলা অনুবাদ করান। সুলতানরা বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। এর প্রভাব এসে পড়ে স্থানীয় রাজা, জমিদার, সামন্তদের ওপরও। তাঁরাও বাংলা ভাষায় কাব্যচর্চাকে উৎসাহ দেন। মাগন ঠাকুর আলাওলকে, কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রামপ্রসাদ আর ভারতচন্দ্রকে, কাশীজোড়ের জমিদার লক্ষ্মীনারায়ণ বলরাম চক্রবর্তীকে, কর্ণগড়ের রাজা যশোবন্ত সিং রামেশ্বর ভট্টাচার্যকে, আড়বার রঘুনাথ রায় কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীকে বাংলা ভাষায় কাব্য রচনায় উৎসাহ দেন। ফলে সাহিত্যের ধারা অনুযায়ী অনুবাদ সাহিত্যে সমৃদ্ধ হলো বাংলা এবং মৌলিক রচনাও জায়গা করে নিল বাংলা সাহিত্যে।
বড়ু চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতির রচনা সে সময় খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। বড়ু চণ্ডীদাস তাঁর ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ লিখলেন, যার কেন্দ্রে রইলেন রাধা-কৃষ্ণ। চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের ফলে বৈষ্ণব ধর্মও মানুষের মন ছোঁয়। চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাসেরা সমৃদ্ধ করে তুলতে থাকেন বাংলা সাহিত্য। এরপর মঙ্গলকাব্যগুলো রচিত হতে থাকে। মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, চৈতন্যজীবনীকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ঋদ্ধ হতে থাকে।
এখানেই মনে করিয়ে দিতে হবে, এ সময়টিতে বাংলার জনগণের অর্ধেক মুসলমানে পরিণত হয়েছে। মুসলমান সুলতানরা সাহিত্যকর্মে উৎসাহ দিলেও মধ্যযুগে মুসলমান কবির সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম। কেন কম? ভাষা আন্দোলন নিয়ে কথা বলার সময় এই কারণটির দিকে রাখতে হবে নজর। আমরা জানি, শাস্ত্রকথা বাংলায় লেখার কারণে চটে উঠেছিল ব্রাহ্মণেরা। দুর্বোধ্য, নাগালের বাইরের সংস্কৃত ভাষার কারণে শাস্ত্রের প্রতি তাদের দখল ছিল একচেটিয়া।
কিন্তু বাংলা ভাষায় তা অনুবাদ করার ফলে যে কেউ এখন শাস্ত্র পড়তে পারে নিজ ভাষায়! বাঙালি মুসলমানদের ছিল আরেক সমস্যা। তারা ধরেই নিয়েছিল শাস্ত্রের ভাষা, ধর্মের ভাষা বাংলা হতে পারে না। কারণ, বাংলা ‘হিন্দুয়ানি’ ভাষা। এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব চলেছে সতেরো শতক অবধি। এই কারণে মুসলিম কবি-লেখকদের রচনায় দেখতে পাব কৈফিয়তের সুর। কেন তাঁরা বাংলা ভাষায় লিখতে চান, তা নিয়ে নিজেরাই নিজেদের প্রবোধ দেন, অন্যকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। সে বিষয়েই বলব এবার। জানাব কী বলছেন শাহ মুহম্মদ সগীর, কী বলছেন সৈয়দ সুলতান, কী বলছেন হাজী মুহম্মদ, কী বলছেন আবদুন্নূর।
আর এই কথাগুলোই আমাদের নিয়ে আসবে আটচল্লিশ এবং বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের কাছে। বাঙালি মুসলমানের মন বোঝার জন্য এই আলোচনাটা হয়ে উঠবে জরুরি।
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১১ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫