Ajker Patrika

পাখিপ্রেম ঘুচিয়েছে বেকারত্ব

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ১৪
পাখিপ্রেম ঘুচিয়েছে বেকারত্ব

শৈশব থেকেই পাখির সঙ্গে প্রেম আরিফুল ইসলামের। কোথাও পাখির ছানা পেলেই বাড়িতে এনে বাসা বেঁধে দিতেন। কিছু পাখি থাকত, অধিকাংশই উড়ে যেত। তবে এখন তাঁর খাঁচায় সারা বছর পাখি পাওয়া যায়। শৈশবের শখ বর্তমানে পরিণত হয়েছে পেশায়। বাড়িতে গড়ে তুলেছেন শৌখিন পাখির খামার। পাখি বিক্রি করে তাঁর মাসে আয় হচ্ছে ২০ হাজার টাকার মতো।

আরিফুলের বাড়ি তারাগঞ্জের মন্ডলপাড়া গ্রামে। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তিনি খামারে পরিচর্যায় ব্যস্ত। কিচিরমিচির শব্দে মুখর উঠান। খাঁচায় খাবার দিয়ে তিনি বাইরে এসে শোনালেন পাখি পালনের গল্প।

আরিফুল ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ছোট ভাইয়ের কর্মস্থল পাবনায় বেড়াতে গিয়ে দেখতে পান পাখির বড় বড় খামার। মুহূর্তে ফিরে যান শৈশবে। ইচ্ছা জাগে পাখি পালনের। এক খামারির কাছ থেকে তিন জোড়া ‘বাজরিকা’ পাখি কিনে বাড়িতে ফেরেন। সেই পাখি দেখে বাবা আসাদুর রহমানের সে কী রাগ! যদিও শেষে শান্ত হন তিনি।

সেই থেকে শুরু হয় আরিফুলের পাখি পালন। ছয় মাস পর কিনে আনেন দুই জোড়া ‘ডায়মন্ড ডাভ’। এগুলো ডিম দেয়, ডিম থেকে বাচ্চা হয়। এভাবে বাড়তে থাকে পাখির সংখ্যা। পাঁচ জোড়া পাখি এক বছরে ২০ জোড়ায় দাঁড়ায়। একসময় বাড়ির সামনে ঘর তুলে গড়ে তোলেন পাখির খামার। নাম দেন ‘ভাই ভাই পাখির খামার’।

আরিফুল এখন পুরোদস্তুর খামারি। তিনি ২০১১ সালে মাস্টার্স শেষ করার পর চাকরির জন্য হন্যে হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরেন। এখন পাখি পালনের পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হচ্ছে না তাঁকে। বর্তমানে প্রতি মাসে পাখি বিক্রি করে তাঁর আয় হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। তাঁর দেখানো পথে গ্রামের অনেক তরুণ-যুবক বাণিজ্যিকভাবে পাখি পালন শুরু করেছেন।

আরিফুলের খামারে বর্তমানে বাজরিকা, ফিঞ্চ, মুনিয়া, ডায়মন্ড ডাভ জাতের ৭০ জোড়া পাখি রয়েছে। এগুলো বয়স অনুযায়ী বিক্রি করা হয় বিভিন্ন দামে। তিন মাস বয়সী এক জোড়া বাজরিকা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০, ফিঞ্চ ৭০০ থেকে ৮০০, মুনিয়া ৫০০ থেকে ৬০০ ও ডায়মন্ড ডাভ দেড় থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। পাইকার ও শৌখিন পাখিপ্রেমীরা খামারে এসে কিনে নিয়ে যান।

আরিফুল বলেন, ‘আমার খামারে বাজরিকা জাতের পাখি সবচেয়ে বেশি। এই পাখি বছরে চারবার ডিম দেয়। বাচ্চার বয়স ৩০ থেকে ৩৫ দিন হলেই উড়তে পারে। প্রজননের উপযোগী হতে চার মাস সময় লাগে। অন্য জাতের পাখিগুলোও প্রজননে কাছাকাছি সময় নেয়। পাখিকে খাবার হিসেবে দেওয়া হয় চিকন ধান, কাউন, চিনা ও সূর্যমুখী ফুলের বীজ। প্রতি মাসে একেক জোড়া পাখির জন্য ৮০ থেকে ৯০ টাকা খরচ হয়।’

ওই গ্রামে আরিফুলকে দেখে সজীব হোসেন নামের এক যুবকও পাখির খামার গড়ে তুলেছেন। সজীব বলেন, ‘আরিফুল ভাইয়ের পরামর্শে তাঁর খামার থেকে পাখি কিনে আমি খামার করেছি। আমার খামারে এখন ১৫ জোড়া পাখি রয়েছে। পাখি পালনে মনে প্রশান্তি আসে। খরচ অনেক কম। এক জোড়া পাখি পালনে খরচ হবে সব মিলিয়ে ১০০ টাকা কিন্তু বিক্রি হবে এক থেকে দেড় হাজার টাকা।’

শুধু সজীবই নয়, গ্রামের হেলাল মিয়া, মিলন রহমান ও এমদাদুল হক পাখির খামার করে বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন। পাখি বিক্রির টাকায় কেউ গাভি কিনেছেন, কেউ ছাগল পালন করছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফরহাদ নোমান বলেন, ‘পাখি পালন লাভজনক। এতে আলাদাভাবে তেমন কোনো সময় দিতে হয় না। পরিবারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি পাখি পালন করা যায়। আরিফুল ইসলাম আদর্শ খামারি। তিনি গ্রামে বিদেশি শৌখিন পাখির খামার করে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। বেকার যুবকদের জন্য এটি অনুকরণীয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকেরা পাচ্ছেন গেজেটেড মর্যাদা

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে আরেকটি প্রক্সি ওয়ারে জড়াতে চায়: ফরহাদ মজহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত