Ajker Patrika

বাগেরহাট মুক্ত দিবস আজ

বাগেরহাট প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ৫৮
বাগেরহাট মুক্ত দিবস আজ

দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত হতে থাকে। একপর্যায়ে যৌথবাহিনীর প্রচেষ্টায় ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে প্রাণের বাংলাদেশ।

যখন দেশের বেশির ভাগ স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাস করছিল তখনো বাগেরহাটের কোথাও কোথাও পাকিস্তানি বাহিনীর তাণ্ডব চলছিল। নিজেদের সীমানা থেকে পাক হানাদার বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করতে বাগেরহাটের মুক্তিযোদ্ধারা লড়ছিলেন প্রাণপণে।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করলেও রাজাকার-আলবদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্তান সরকারের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এ কে এম ইউসুফের জন্মস্থান হওয়ার কারণে বাগেরহাট ছিল রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। এ কে এম ইউসুফের দোসর রাজাকারদের খুলনা অঞ্চল প্রধান রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে বাগেরহাটে তখনো ব্যাপক লুটপাট, মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা এবং নির্মম নির্যাতন চলছিল।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড মাঠে ছিল রাজাকারদের ক্যাম্প। বর্তমান জেলা পরিষদ ডাকবাংলো ছিল রাজাকারদের বিচারালয় এবং টর্চার সেল। স্বাধীনতার পরে যেখানে স্থাপন করা হয়েছে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ। এর উল্টো পাশে ভৈরব নদীর পাড়ে রজব আলীর নির্দেশে তৈরি করা হয় ফায়ারিং স্কোয়াড বা কসাই খানা। যেখানে সম্প্রতি শহীদদের স্মরণে বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

সারা দেশ যখন শত্রুমুক্ত তখন বাগেরহাট শত্রুদের দখলে থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা উদ্গ্রীব ও অস্থির হয়ে পড়েন। প্রাণপণ চেষ্টা চলতে থাকেন। শুরু হয় পরিকল্পনা। ১৬ ডিসেম্বর বাগেরহাট শহর দখলের পরিকল্পনা হয়। ১৭ ডিসেম্বর সকালে রফিকুল ইসলাম খোকনের নেতৃত্বে রফিক বাহিনী মুনিগঞ্জ এলাকা দিয়ে বাগেরহাট শহরে প্রবেশ করে। ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে তাজুল বাহিনী শহরের উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে বাগেরহাট শহরে প্রবেশ করে। সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়া উদ্দিনের বাহিনী দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে সম্মিলিতভাবে বাগেরহাট শহর দখলের জন্য আক্রমণ করে।

বাগেরহাট সদর থানায় রাজাকর ক্যাম্পে অবস্থানরত রাজাকার-আল বদর ও পাকিস্তানি বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে রাজাকর রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে হানাদাররা বাধ্য হয়ে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পালিয়ে যায়।

১৭ ডিসেম্বর দুপুরে হানাদারমুক্ত হয় বাগেরহাট। বিজয়ের আনন্দে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ। উল্লাস আর আনন্দে বাগেরহাটবাসী পায় মুক্তির স্বাদ। মুক্তিকামী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা উত্তোলন করেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

বাগেরহাট শহর মুক্তি সমরে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা নকীব সিরাজুল হক বলেন, ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে রাজাকার রজব আলী বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্য পালিয়ে যান। তবে কেউ কেউ আত্মসমর্পণও করেন। সমগ্র বাগেরহাট মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। তাঁরা সগৌরবে বিজয়ের পতাকা উড়ান।

বাগেরহাট সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ শওকত হোসেন বলেন, বাগেরহাট ছিল রাজাকার অধ্যুষিত একটি এলাকা। শহরের পাশে বিশালাকারের একটি নদী থাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জড় করতে তাঁদের একটু বিলম্ব হয়। ফলে ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে তাঁরা বাগেরহাট শহরে প্রবেশ করেন।

বাগেরহাট শহর তাঁদের নিয়ন্ত্রণে আসে। বাগেরহাট সদর থানায় রাজাকর ক্যাম্পে অবস্থানরত রাজাকার-আল বদর ও পাকিস্তানি বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তির কাছে হার মানে তারা। একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে রাজাকর রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে হানাদারেরা বাধ্য হয়ে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পালিয়ে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গভর্নর আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার কে: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুল

সেই রুহুল আমিনের বসুন্ধরা, বনানী ও উত্তরার জমিসহ ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

ঠাকুরগাঁওয়ের ৩টি আসনেই জয়ী হবে জামায়াত: মাওলানা হালিম

৬১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ: এক্সিম ব্যাংকের নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৩০ জনের নামে মামলা

আক্কেলপুরে ‘একঘরে’ করে রাখা দিনমজুরকে মারধর, থানায় মামলা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত