Ajker Patrika

‘মাটি কাটি আর মোবাইল দেখি, টাকা আইসোছে না’

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ, (রংপুর)
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২২, ১২: ২২
‘মাটি কাটি আর মোবাইল দেখি, টাকা আইসোছে না’

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকেরা চাতকের মতো চেয়ে থাকেন মোবাইল ফোনের দিকে। এই বুঝি তাঁদের টাকা আসবে! কিন্তু টাকা আসছে না। কবে আসবে তা-ও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ-ই। এভাবে দীর্ঘদিন মজুরির টাকা না পেয়ে পরিবার নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন তাঁরা।

ইকরচালী ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামের পূর্ণিমা রানী জানান, তাঁর দুটি সন্তান আছে। অভাব-অনটনের কারণে স্বামী ছেড়ে চলে গেছেন। বাবার বাড়িতে তাঁর আয়ে সংসার চলে। পূর্ণিমা রানী বলেন, ‘দেকোচেনতো জিনিসপত্রের কী দাম। পেট চলায় মুশকিল। শরম (লজ্জা) ফেলেয়া মাটি কাটার কাজ নিনু। হামার ভোটার আইডি (আইডি কার্ড) ছবি জমা নেছে স্যারেরা। মোবাইলোত বোলে টাকা দেবে। হামরা মাটি কাটি আর মোবাইল দেখি, টাকা আইসোছে না। খায়া না খায়া কি মাটি কাটার কাম করা যায়?’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৯০০ জন হতদরিদ্র কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় কাজ করছেন। দিনমজুরি হিসেবে প্রতিদিন একেকজন সাধারণ শ্রমিক মাটি কাটার কাজ করে পাবেন ৪০০ টাকা, আর দলনেতারা ৪৫০ টাকা। বিধি অনুযায়ী শ্রমিকেরা কাজ করবেন ৪০ দিন। ইতিমধ্যে ২৯ দিন কাজ করেছেন তাঁরা।

ইকরচালীর হাজিপাড়া গ্রামের আয়নাল হোসেনের বৃদ্ধ মা ও স্ত্রী-সন্তানসহ ছয় সদস্যের সংসার। এবারে হতদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় ৪০ দিনের মাটি কাটার কাজ করছেন। পূর্বের বছরগুলোতে প্রতি সপ্তাহে টাকা পেতেন, কিন্তু চলতি বছরে ২৯ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো টাকা পাননি।

আয়নাল হোসেন বলেন, ‘এক মাস থাকি মাটি কাটুছি। কোনো টাকা পাওছি না। ধার-দেনা করি চলুছি। অফিসার, চেয়ারম্যান-মেম্বার কইছোত গেইলে কয় টাকা মোবাইলোত আসবে। দিনাও মোবাইলটার পেকে চেয়া থাকো, বাজতেকালায় বেরকে দ্যাখও, এই বুঝি টাকা আইল। কিন্তু টাকা আইসে নাই। কোনদিন টাকা আসবে তোমরা কবার পাইমেন?’

ইকরচালী প্রামাণিকপাড়া গ্রামের গৃহবধূ খয়রন বেগমও ওই প্রকল্পের অধীনে কাজ করেন। খয়রন বেগম বলেন, ‘এমতোন তো একবারও হয় নাই। এই মোবাইলে সমস্যা করিল। এক মাস থাকি টাকা আইসোছে না। আর কোনদিন টাকা পামো কন? আগোত তো ব্যাংকোত প্রত্যেক বৃহস্পতিবার টাকা পাছনো। হামরা মোবাইল বুঝি না। হামাক ব্যাংকোতে টাকা দেউক।’

সয়ার ইউনিয়নের আরেক শ্রমিক খাদিমুল ইসলাম বলেন, ‘দেকোচেনতো বাজারোত আগুন নাগছে। চাউল কিনলে আলু কিনার টাকা আটে না। তেল কিনাতো মুশকিল। গরিব মানুষের খুব খারাপ অবস্থা। ২৯ থাকি কাম করিয়াও টাকা পাই নাই। মোবাইলের প্যাকে দেকতে দেকতে হতাশ হয়া গেছি। টাকা না থাকায় কোন খরচ কিনবার পাউচি না। গরিব মাইষোক কাঁয়ো বাকিও দেয় না।’

আলমপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য বাদশা আলম বলেন, ৪০ দিনের কাজের ৩০ পার হলেও শ্রমিকেরা এখনো কোনো টাকা পাননি। এতে পরিবার নিয়ে তাঁরা কষ্টে পড়েছেন। প্রায় দেখা হলে জানতে চান কবে টাকা পাবেন।

কুর্শা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফজালুল হক বলেন, কর্মসৃজন শ্রমিকদের টাকা এবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রকেট অ্যাকাউন্ট নম্বরে দেওয়ার কথা। শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ড খুলে দেওয়া হয়েছে। পিআইও শ্রমিকদের তালিকা ঢাকায় পাঠানোর কথা জানিয়েছে।

শ্রমিকের টাকা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসৃজন কর্মসূচির আওয়াত কাজ করা শ্রমিকদের নিজ মোবাইল অ্যাকাউন্টে মজুরির টাকা দিতে হবে। ইতিমধ্যে তাঁদের মোবাইল ফোনে রকেট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে তালিকা পাঠিয়েছি। প্রসেস করতে হয়তো একটু সময় লাগছে। আশা করছি দ্রুত টাকা পাবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আস্থায় বাজিমাত ইসলামী ব্যাংক

‘ফের ধর্ষণচেষ্টার ক্ষোভে’ বাবাকে খুন, ৯৯৯-এ কল দিয়ে আটকের অনুরোধ মেয়ের

চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

আ. লীগের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের বিএনপির সদস্য হতে বাধা নেই: রিজভী

১৫ স্থাপনায় পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আকাশেই ধ্বংসের দাবি ভারতের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত