Ajker Patrika

হারাতে বসেছে কাঁসাশিল্প

রোকনুজ্জামান মনি, ঢাকা
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২২, ১২: ৩৯
হারাতে বসেছে কাঁসাশিল্প

একসময় কাঁসাশিল্পে বিখ্যাত ছিল ঢাকার অদূরের ধামরাই নামের জনপদটি। ধামরাই বাজারের বড় একটা অংশজুড়ে ছিল এ শিল্পের কারখানা। এখান থেকেই কাঁসার তৈরি তৈজসপত্র চলে যেত সারা দেশে। তবে কালের পরিক্রমায় এখন এই শিল্পের সোনালি দিন নেই। অনেকটা বিলুপ্তির পথেই ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। একমাত্র সুকান্ত বণিকের হাত ধরে কোনোরকম বেঁচে আছে এ শিল্প। তবে বেচাকেনা কম হওয়ায় তাঁর ব্যবসার অবস্থাও খারাপ। কিন্তু পূর্বপুরুষের ব্যবসা বলে আঁকড়ে ধরে আছেন তিনি। প্রায় ২০০ বছর আগে তাঁরই পূর্বপুরুষ লালমোহন বণিকের হাত ধরে শুরু হয়েছিল তাঁদের এই ব্যবসা। ব্রিটিশ আমল ছিল এ অঞ্চলের কাঁসাশিল্পের সোনালি সময়, এরপর ধীরে ধীরে নেমে আসতে থাকে দুর্দিন, বলছিলেন সুকান্ত বণিক।

ঢাকার ধামরাইয়ের রাজপ্রাসাদসম বাড়ির নিচতলার একপাশে সুকান্ত বণিকের ধামরাই মেটাল ক্র্যাফটস নামের দোকানটি। এখানেই তিনি সাজিয়ে বসেছেন কাঁসার তৈরি তৈজসপত্র, শোপিস, হস্তশিল্প আর দেবদেবীর দৃষ্টিনন্দন মূর্তির এক বিশাল পসরা। মোট পাঁচটি কক্ষে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে চোখজুড়ানো কাঁসা-পিতলের এই দারুণ সৃষ্টি। ধামরাইয়ের এখানকার কারিগরেরা মূলত কাঁসা-পিতল দিয়ে দেবদেবীর মূর্তি তৈরির কাজ করে থাকেন। আর কাঁসা-পিতলের তৈরি অন্যান্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করা হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে।

ঐতিহ্যবাহী কাঁসাশিল্প তার জৌলুশ হারাতে বসেছে উল্লেখ করে সুকান্ত বণিক বলেন, দেশভাগের পরপরই এ শিল্পে মূলত ধস নামতে শুরু করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তা আর আলোর মুখ দেখতে পায়নি। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে কারও কোনো আগ্রহ তেমন দেখা যায় না। যেমন আছে তেমনভাবেই চলছে সবকিছু। আক্ষেপের সুরে তিনি আরও বলেন, কে শুনবে এসব কথা! এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে কে পদক্ষেপ নেবে! কেউ না। তাই এসব কথা বলেও কোনো লাভ নেই।

একসময় ধামরাইতে ৫০টির মতো কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্র ও মূর্তি তৈরির কারখানা থাকলেও এখন আছে মাত্র দুটি। তার একটিতে এখন তৈরি হয় শুধু বদনা আর বালতি। এগুলোই যেন এই সোনালি ঐতিহ্যের শেষ চিহ্ন।

বিক্রিবাট্টা কম থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে সুকান্ত বণিক বলেন, ‘এখন বেচাবিক্রি খুবই কম। কোনো কোনো দিন ১ টাকাও বিক্রি হয় না। তাই আমরাও কারিগরদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিতে পারি না। এখানে কাজ করলে একজন কারিগর পান ৩০০-৪০০ টাকা। অথচ রিকশা চালিয়ে একেকজন আট শ থেকে হাজার টাকা আয় করেন প্রতিদিন। তাহলে কেন এখানে কাজ করবেন তাঁরা? আমরা তাঁদের কী বুঝিয়ে কাজ করাব? আবার আমাদের সামর্থ্যও নেই, তাঁদের এই চাহিদা পূরণ করার।’ এই দুয়ের সমন্বয় হচ্ছে না এবং এভাবে চলতে থাকলে এখন যে কয়েকজন কারিগর কাজ করছেন, তাঁরাও কাজ ছেড়ে চলে যাবেন বলে জানিয়েছেন সুকান্ত বণিক।

এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো পদক্ষেপ না থাকায় কথা বাড়াতে চান না সুকান্ত। দু-এক কথা বলে আবার চুপ হয়ে যান। কপালের ভাঁজে ভাঁজে তাঁর খেলে যায় দুশ্চিন্তা। আমরাও আর কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে আসি, তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে। বাইরে এসে দেখি কর্মব্যস্ত মানুষের নিরন্তর ছুটে চলা। তবে তখনো কেবল সুকান্ত বণিকের দোকানে বিরাজ করছে সুনসান এক নীরবতা!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত