Ajker Patrika

মনোযোগ ধরে রাখার পমোডরো

মুসাররাত আবির
আপডেট : ০৯ জুন ২০২২, ১২: ৫১
মনোযোগ ধরে রাখার পমোডরো

কাজের মাঝে মনোযোগ ধরে রাখতে গিয়ে আমরা অনেকেই বিপাকে পড়ে যাই। কিছুতেই কাজে মন বসে না। আবার পড়ার মাঝে ফোনের নোটিফিকেশনের আওয়াজও আমাদের মনোযোগ নষ্ট করে। কারণ ফোন একবার হাতে নিলেই সময় যে কোন দিক দিয়ে চলে যায় তা আমরা কেউই টের পাই না। আবার কাজ বা পড়ার চাপে একটা সময় আমরা প্রচুর ক্লান্ত হয়ে যাই। আর এর প্রভাব পড়ে আমাদের কাজের ওপর। দিনের শেষে মনে হয় কোনোভাবে কাজটা শেষ হলেই বাঁচি। অনেক সময় একটানা অনেকক্ষণ পড়তে গিয়েও হিতে বিপরীত হয়। একটানা কাজ করতে গেলে কাজে যেমন বিরক্তি আসে। গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা কাজের পরিবর্তে বিরতি নিয়ে কাজ করলে তা অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়ে থাকে। এই মনোযোগ ধরে রাখার একই জনপ্রিয় উপায় হলো পমোডরো পদ্ধতি।

পমোডরো পদ্ধতি কী?
নব্বইয়ের দশকের একজন উদ্যোক্তা এবং লেখক ফ্রান্সেসকো সিরলিও এই পমোডরো পদ্ধতির জনক। এই পদ্ধতির মূল কথা হচ্ছে, একটা বড় কাজকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নেওয়া। একই সঙ্গে কাজের মাঝে ছোট বিরতি নেওয়া। এতে করে মস্তিষ্ক ওই স্বল্প কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে অনেক বেশি সক্রিয় থাকে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখে। এতে ধাপে ধাপে পুরো কাজ শেষ করা অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়। মূলত এটি একটি সাইক্লিক্যাল পদ্ধতি, যা ব্যক্তিকে নিয়মিতভাবে প্রোডাকটিভ রাখে। কারণ কাজের ফাঁকে নিয়মিত বিরতি একদিকে আপনাকে কাজ করতে উৎসাহ জোগাবে, তেমনি আপনাকে অনেক বেশি সৃজনশীল করে তুলবে।

পমোডরো পদ্ধতির ধাপ
চলুন তাহলে এই পদ্ধতিতে কাজ করার ৫টি ধাপ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:

  • প্রথমেই কোন কাজটি করবেন তা ঠিক করে ফেলুন। সেটা হতে পারে রসায়নের কোনো অধ্যায়। ধরা যাক জৈব রসায়ন পড়বেন বলে ঠিক করলেন। তাহলে পুরো অধ্যায়টির একটি তালিকা তৈরি করে, তাকে কয়েকটি ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন। যেমন নামকরণ, বন্ধন, সমানুতা, বিক্রিয়া ইত্যাদি।
  • এবারে ২৫ মিনিটের জন্য পমোডরো টাইমারটি সেট করুন। এর জন্য যেকোনো একটি টাইমার হলেই চলবে। হোক তা আপনার মুঠোফোন, হাতঘড়ি, দেয়ালঘড়ি যা খুশি। এ ছাড়া এখন ইন্টারনেটে ‘Pomodoro App’ পাওয়া যায়। সেটার সাহায্য নিতে পারেন।
  • এবার কাজ শুরু করুন এবং টাইমার বেজে ওঠার আগ পর্যন্ত কাজ করতে থাকুন। অপ্রয়োজনীয় চিন্তাভাবনা মাথা থেকে সরিয়ে দিন।
  • টাইমার বেজে ওঠা মানে ২৫ মিনিট শেষ। অর্থাৎ একটি পমোডরো সেশন শেষ হলো। এর চেকমার্ক হিসেবে একটা কাগজে ক্রস চিহ্ন (X) দিয়ে রাখুন। এবার ৫ মিনিটের একটি বিরতি নিন।
  • প্রতিটি সেশনের পর ৫ মিনিট বিরতি রাখুন। এই ৫ মিনিট পড়ালেখা, কাজের চাপ কিচ্ছু নিয়ে ভাবতে হবে না। তারপর আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করুন। ফিরে যান দ্বিতীয় ধাপে।
  • এভাবে ৪টি পমোডরো সেশন শেষ হওয়ার পরে ৩০ মিনিট বিরতি নিন। এ সময় আপনি চা বা কফি খেতে পারেন অথবা যা করলে কিছুক্ষণের জন্য আপনি রিলাক্স হতে পারবেন, তা-ই করুন।
  • মনে রাখবেন, একটি সেশনের মাঝে কোনোরকম অন্য কিছু করা চলবে না! সেশন চলাকালে যদি কোনোভাবে আপনার কাজে ব্যাঘাত ঘটে, সে ক্ষেত্রে ওই সেশনটি সেখানেই বন্ধ করে দিয়ে পরে আবার নতুন করে শুরু করা উচিত। কারণ পমোডরো পদ্ধতির মূল লক্ষ্যই হচ্ছে কাজের ওপর যেকোনো বাধাবিঘ্নের প্রভাবকে কমানো। যে লক্ষ্যে নেমেছেন, সেটিতেই সেশনজুড়ে গভীর মনোনিবেশ করতে হবে।

সূত্র:ফোর্বস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত