Ajker Patrika

রেমিট্যান্সে উত্থান-পতনের বছর

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ৫৭
রেমিট্যান্সে উত্থান-পতনের বছর

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে যে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছিল, তা পরবর্তী সময়ে কমে আসে। এটা যে সাময়িক ছিল, সেটা দিন দিন স্পষ্ট হতে শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যেই প্রবাসী আয়ের ধারায় বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে।

চলতি বছরজুড়েই রেমিট্যান্সে উত্থান-পতনের রেকর্ড দেখা যায়। বছরের মে মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়ে বিগত চার মাসের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করে। এরপর নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স আসা কমতে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স কমেছে। কিন্তু ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত তা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। আবার জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসেই ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স আসা কমেছে। রেমিট্যান্সের এই হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভাব পড়ে দেশের রিজার্ভে। জানুয়ারিতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৮৬৩ মিলিয়ন ডলার, যা জুন এবং নভেম্বরে ছিল যথাক্রমে ৪৬ হাজার ৩৯১ মিলিয়ন ডলার ও ৪৪ হাজার ৮৮১ মিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৬৬ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ১৪ লাখ ১৪ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। তা ফেব্রুয়ারি মাসে কমে হয়েছে ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। মার্চে তা কিছুটা বেড়ে ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এপ্রিলে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। তবে মে মাসে বিগত চার মাসের রেকর্ড ভেঙে আসে ১৫ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। এটি ২০২০ সালের আগস্টের পর যেকোনো মাসের তুলনায় বেশি।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার ফলে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করে। অন্যদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে বন্ধ হয় অবৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার প্রবণতা। এর প্রভাব পড়ে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতি যখন চাপে পড়ে, ঠিক তখন রেমিট্যান্স বাড়তে থাকার ঘটনা আশা জাগায়। আর আমদানি খরচ কমে যাওয়ার কারণেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড হয়।

চলতি বছরের জুন থেকে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ কমতে শুরু করে। নভেম্বরে তা আরও কমে আসে। জুনে আসে ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। জুলাইতে ১৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। আগস্টে ১৩ লাখ ৭ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে আরও কমে দাঁড়ায় ১২ লাখ ৫১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অক্টোবরে ১১ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। নভেম্বরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্সের রেকর্ড হয়ে যায়। এর পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা।

রেমিট্যান্স আহরণের বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বছর মে মাসে ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বিশেষ করে রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা কার্যকরের পর থেকে প্রতি মাসেই প্রবাসীরা বৈধ পন্থায় পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। এ কারণে করোনার সংক্রমণের মধ্যেও রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছিল।

তিনি বলেন, তবে করোনা পরিস্থিতি উন্নতির ফলে কেউ কেউ অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠান, যা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে। আর করোনা মহামারির পর অনেক প্রবাসীর আয় কমেছে, যার প্রভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত