Ajker Patrika

টেকসই পাত্রে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা মহিষের দইয়ের

ইসমাইল হোসেন কিরন,  হাতিয়া (নোয়াখালী)  
টেকসই পাত্রে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা মহিষের দইয়ের

মহিষের দইয়ের কদর অনেক আগে থেকেই। বিয়েবাড়ি, ঈদ, পূজাসহ বড় সব অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে থাকে মহিষের দই। নোয়াখালীর হাতিয়ার ঐতিহ্য এটি। সেখানকার গ্রামাঞ্চলে দই ছাড়া কোনো অনুষ্ঠান চিন্তাই করা যায় না। চরের মহিষের দুধ দিয়ে তৈরি করা এই দই এখন টেকসই পাত্রে প্রবাসী স্বজনদের কাছেও পাঠাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবেও যাচ্ছে এই দই। আর তাই এই দইয়ের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাতিয়া উপজেলা সদরের চারপাশে ১০টি চরে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার মহিষ। প্রতিদিন এসব চর থেকে প্রায় তিন হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করেন গোয়ালারা। তা দিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি করেন দই। চরের মহিষের দইয়ের কদর বেশি থাকায় বংশানুক্রমে অনেকে এই ব্যবসা করে আসছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জামরুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সালে করা একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হাতিয়ায় মহিষের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। এসব মহিষ থেকে প্রতিদিন ২২ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করা হয়। চরাঞ্চলের পাশাপাশি এখন খামারিরাও মহিষ পালন করছেন। তাই এর সংখ্যা বর্তমানে আরও বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আফাজিয়া বাজারের সুজয় দধি ভান্ডারের মালিক মনিন্দ কুমার দেবনাথের বয়স ৮৫ বছর। তিনি জানান, ১৯৬৯ সাল থেকে এই ব্যবসা করে আসছেন। তখন এক মণ দুধ পাওয়া যেত ১০-১২ টাকায়। বয়স বাড়ায় ব্যবসা তুলে দিয়েছেন ছেলের হাতে। মাঝেমধ্যে তিনি দেখভাল করেন।

মনিন্দ কুমার দেবনাথের ছেলে সঞ্জয় কুমার দেবনাথ জানান, এক কেজি দুধে ৭০০-৮০০ গ্রাম দই হয়। স্থানীয় বাজারে এক কেজি দইয়ের দাম ২০০ টাকা। একসময় গোয়ালারা হাটের দিন রাস্তার পাশে বসে মাটির হাঁড়িতে বসানো দই বিক্রি করতেন। এখন দোকান থেকে নিয়ে যান গ্রাহকেরা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য অগ্রিম অর্ডারও নিয়ে থাকেন তাঁরা। একটি অনুষ্ঠানের জন্য ১০-২০ মণ, এমনকি কখনো কখনো আরও বেশি সরবরাহ করতে হয়।

হাতিয়ার মহিষের দই ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে পাঠানো হয়। আফাজিয়া বাজারের রনি দধি ভান্ডারের মালিক মো. রনি বলেন, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এই দইয়ের চাহিদা অনেক বেশি। আগে অনেকেই চট্টগ্রামে গিয়ে দই বিক্রি করতেন। এখন পাইকারেরা এসে হাতিয়া থেকে নিয়ে যান।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, মহিষের দুধে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। গরুর দুধের তুলনায় মহিষের দুধে প্রোটিন বেশি থাকে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ মহিষের দুধ ও দই খেয়ে ভিটামিনের এই চাহিদা পূরণ করে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, হাতিয়ার দইয়ের চাহিদা স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে রয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বাণিজ্যিক সম্ভাবনা মাথায় রেখে হাতিয়ায় সরকারিভাবে মহিষ পালন বৃদ্ধির জন্য একটি অঞ্চলকে গোচারণভূমি ঘোষণা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত