Ajker Patrika

পাড়াকেন্দ্র

সম্পাদকীয়
পাড়াকেন্দ্র

খবরটি পাড়াকেন্দ্র নিয়ে। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে পাড়াকেন্দ্রভিত্তিক হাতে-কলমে শিশুদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। তাতে ছোট ছোট শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী ও গর্ভবতী নারীরাও অংশ নিচ্ছেন। পাহাড়ের মানুষকে সচেতন করে তোলার এই প্রক্রিয়ার কথা জেনে আরও জরুরি একটি কথা মনে হলো।

সত্যিই তো, আমাদের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগুলোর কী হাল এখন? সেখানে আসলে কোন সচেতনতার জন্ম হচ্ছে? এখন সেখানে কোন বিষয়ে তাদের সচেতন করে তোলা জরুরি? স্কুলের পড়ার বাইরে জীবনের কোন পাঠটি হয়ে উঠতে পারে গুরুত্বপূর্ণ?

মানিকছড়ির শিশুদের শিক্ষা দিচ্ছেন মাঠকর্মীরা, যৎসামান্য বেতনের বিনিময়ে। তাঁদের কাছে শিশুরা শিক্ষা নিচ্ছে, এর বাইরে বিনোদন, স্বাস্থ্যসচেতনতা, বাল্যবিবাহ, মাদক ও যৌতুকের কুফল নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে নিজেকে চিনে নেওয়ার একটা সুযোগ ঘটে।

শিশুকে যদি যুক্তিবাদী মন নিয়ে বেড়ে উঠতে দেওয়া হয়, তাহলে সে সমাজের ভালো আর মন্দ নিজেই বিশ্লেষণ করার ক্ষমতার অধিকারী হয়। মুশকিল হয়, যখন সে যুক্তির সঙ্গে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার এবং বিনয়ের যোগ না ঘটে। কাঠখোট্টা যুক্তি সমাজের ভিত্তিভূমিকে উর্বর করতে পারে না। যুক্তিকে পোক্ত করার জন্য সমাজের খেতখামারগুলোয় জলসিঞ্চনের প্রয়োজন পড়ে। সমাজের কাঠামোয় বহুদিনের গড়ে ওঠা অন্ধবিশ্বাসে ধাক্কা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতিটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ

পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের স্কুলগুলোয় আমরা তেমন কোনো আয়োজন দেখি না। আয়োজন যদিও থাকে, তা এতটাই আনুষ্ঠানিকতায় ভরা যে তাতে মনের আনন্দে জীবনের সঙ্গে পরিচয় ঘটার সুযোগ কম। পড়ার টেবিলই যদি বড় হওয়ার একমাত্র সোপান হয়ে ওঠে, তাহলে খেলাধুলার আর কোনো মূল্য থাকে না; মূল্য থাকে না গানের, নাচের, আবৃত্তির। মূল্য থাকে না বিতর্কের। আবার উল্টো দিকে, অন্য সবকিছুকে বড় করে দেখতে গিয়ে পড়াশোনাকে লাটে ওঠালেও বিপদ। কিন্তু এ কথা তো আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি, সব শিশুর মানসিক গড়ন এক নয়। সবাইকে বিদ্যার জাহাজ হতে হবে না, সবাইকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হতে হবে না। সেটা হয়ও না সবাই। তাহলে যার যেখানে আনন্দ এবং যে যা করতে পারঙ্গম, তাকে সেদিকেই যেতে দেওয়া উচিত। শুধু সেই গড়ে নেওয়ার সময়টায় এমন কিছু বিষয় তার সঙ্গী হবে, যা আজীবন তার পাথেয় হয়ে থাকতে পারে।

এ রকম কয়েকটি বিষয়ে বলি। প্রথমত, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে শিশুদের সচেতন করা একেবারে মৌলিক দায়িত্ব। ধর্মীয় সহনশীলতার শিক্ষা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। আমরা বুঝে না বুঝে এ জায়গাটিকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলেছি। পরিবার থেকেই সহনশীলতার শিক্ষা অপসৃত হচ্ছে, ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরমতসহিষ্ণুতাও বিপদে পড়েছে।
এই তালিকা আরও অনেক দূর পর্যন্ত টেনে নেওয়া যায়। কিন্তু এগুলোই যে জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার ভিত, সে কথাটাই তো সবার আগে বুঝতে হবে, নইলে বাকি সব বড় বড় শিক্ষাদান মাঠে মারা পড়বে। এ নিয়ে ভাবা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

জামায়াত আমিরের বাসায় জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠক, পিআর নিয়ে অনড় অবস্থান

মির্জাপুরে বিএনপি নেতার পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৭

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, গুলি, এক শ্রমিক নিহত

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইবরাহিমের নাম বাদ দিতে ইসিকে চিঠি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত