Ajker Patrika

কাণ্ড বটে!

সম্পাদকীয়
কাণ্ড বটে!

টাকা কামানোর কত ধরনের ফন্দি-ফিকিরই না মানুষ করতে পারে! এদিক থেকে বাঙালির উদ্ভাবনী শক্তির তারিফ করতে হয়। কোনো ধরনের বিবেক, মূল্যবোধের বালাই নেই, যা ইচ্ছে তা করার একটা লাইসেন্স যেন পেয়ে গেছে কিছু মানুষ।নওগাঁয় একদল দুর্বৃত্ত যে কাণ্ডটি ঘটাচ্ছিল, তা হয়তো অভিনব নয়, কিন্তু দিনের পরদিন এটাকেই ব্যবসা হিসেবে নিয়ে কীভাবে আনন্দে কাটছিল তাদের দিন, সেটাই বড্ড ভাবনার জন্ম দেয়।

কোনো নিরীহ পুরুষকে অপহরণ করে এনে কোনো নির্দিষ্ট বাড়িতে আটকে রেখে চক্রেরই সদস্য কোনো নারীর সঙ্গে এমন ছবি তোলা হয়, যা দিয়ে অনায়াসেই লোকটিকে ব্ল্যাকমেল করা যায়। নিরূপায় সেই মানুষ লজ্জা থেকে বাঁচার জন্য চক্রের চাহিদামতো টাকা দিয়ে মুক্ত হন। নইলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সে ছবি তুলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়—ব্যস, মাসিক বেতনে চাকরি করার চেয়ে কত সহজে আয়ের রাস্তা খুঁজে পাওয়া!

চক্রের যে কজন সদস্য ধরা পড়েছেন, তাঁদের বয়সের দিকে তাকালে আরও বেশি অবাক হতে হয়। এই দলে ৪০ বছরের মাঝবয়সী যেমন আছেন, তেমনি সদ্য টিনএজ পার হওয়া কুড়ি বছরের যুবকও রয়েছেন। এ রকম বয়সের ফারাকওয়ালা মানুষদের মিলিয়েছে এমন এক অপরাধ, যা সাধারণ অবস্থায় তাঁদের রাখতে পারত যোজন দূরে। সাধারণ অবস্থায় ২০ বছরের যুবক আর ৪০ বছরের প্রৌঢ় একই সঙ্গে নারী-পুরুষকে নিয়ে বাজে ছবি তোলার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবেন—এটা অবিশ্বাস্য। অপরাধ, কুরুচি মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়, এটা তারই একটা বেদনাময় প্রকাশ।

মানুষ কেন অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে, তার সামাজিক, অর্থনৈতিক কারণগুলো নিয়ে গবেষকেরা মাঝে মাঝেই তাঁদের মত প্রকাশ করেন। এ কথা তো ঠিক, অতিরিক্ত জনসংখ্যা আমাদের যেমন জনশক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে, তেমনি তা অদক্ষ জনসমষ্টির অর্থহীন বিস্তার হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। জনসংখ্যা বেশি হলে লাগসই কাজ খুঁজে পাওয়া যায় না। মানুষের সংখ্যার তুলনায় কাজের সুযোগ থাকে কম। আর সে রকম অবস্থার সৃষ্টি হলে অপরাধপ্রবণতা বাড়ে। সেই অপরাধ হতে পারে নানা রকম। সব দেশেই দুরভিসন্ধি নিয়ে কিছু মানুষ ঘুরে বেড়ায়। জেলখানা বা সংশোধনাগারে অপরাধের কারণে সময় কাটাচ্ছে যারা, তাদের কাহিনি শুনলে বোঝা যায়, কত বিচিত্র কারণে মানুষ অপরাধ করে থাকে।

নওগাঁর পাটালি মোড় এলাকায় ডেকে নিয়ে একজনকে তাদের কাজের ভুক্তভোগী বানানোর পর দাবি করা টাকার অর্ধেক দেওয়ায় তাঁকে আটকেও রাখে এই অপহরণকারী দল। এ সংবাদটি র‍্যাব-৫-এর গোচরে এলে তারা ব্যবস্থা নেয়। তখনই অপরাধী চক্রের গোমর ফাঁস হয়ে যায়।

এসব অসামাজিক কর্মকাণ্ড কী করে বেড়ে উঠতে পারছে, তার পেছনের কারণগুলো খুঁজে বের করা জরুরি। মূলত জনসংখ্যা ও কাজের অনুপাতের মধ্যে এতটাই ব্যবধান যে অসৎ পথে মুফতে আয়ের পথ খুঁজে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এ দিকটায় নজর দেওয়া খুব প্রয়োজন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত