আবু সাইম, ঢাকা
ছোটরা খেলবে আর বুড়োরা-বড়রা শুধু দাঁড়িয়ে দেখবেন, তা তো হয় না। তাই তাঁরাও যাতে লাভবান হন, সেই আয়োজনের চেষ্টা করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক আধুনিকায়ন করা হবে। বসানো হবে ১৫টি রাইডস (খেলনা)। এ জন্য ডিএসসিসি খরচ করতে চায় ৪৪১ কোটি টাকা। এসব রাইডস বাচ্চাদের দেখিয়ে আকৃষ্ট করতে ৫ কোটি টাকায় বসানো দরকার চারটি ডিজিটাল ডিসপ্লে। রাইডস চড়তে গেলে তো টিকিট কেটে ঢুকতে হবে, সে জন্য ১০ কোটি টাকা লাগবে টিকিটিং সিস্টেম বসাতে। ঘোরাফেরার সময় প্রকৃতির ডাক পড়লে টয়লেটে যেতে হবে। তাই ছয়টি টয়লেট বানাতে খরচ করতে হবে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। তখন তো আবার পানিও লাগবে, সে জন্য ২ কোটি টাকা লাগবে দুটি নলকূপ বসাতে। এ ধরনের আরও আছে।
সব মিলিয়ে পার্কে শিশুদের খেলাধুলার সুযোগ বাড়াতে ৬১৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছিল ডিএসসিসি। গত ফেব্রুয়ারিতে এ প্রস্তাব নিয়ে কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অস্বাভাবিক দাম পুনর্নির্ধারণ করে বিস্তারিত তথ্য, ব্যাখ্যাসহ আবার প্রস্তাব দেওয়ার জন্য প্রকল্পটি ডিএসসিসিতে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে এখনো ডিএসসিসি সংশোধিত প্রস্তাব কমিশনে পাঠায়নি।
পিইসি বৈঠকে উপস্থিত এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডিএসসিসির প্রস্তাবটি এতটাই অবাস্তব মনে হয়েছে যে, এ জন্য তাদের বাইরেও লোকজনদের দিয়ে একটি কমিটি করে, ওই কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রস্তাবটি আবার পাঠাতে বলা হয়েছে। এতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থাপত্য বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগকে রাখার কথা বলা হয়েছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ যেমন, বেসিস বা কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে প্রযুক্তিবিষয়ক পণ্যের দাম যাচাই করে পাঠাতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন আল রশীদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওরা যে দাম ধরেছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। অস্বাভাবিক বেশি। আমরা কিছু গাইডলাইন দিয়েছি। এগুলোর ডিটেইল দাম দিতে হবে।’
জানতে চাইলে প্রকল্প প্রস্তাবটি তৈরিতে সম্পৃক্ত ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো করে কাজ করেছি। পরিকল্পনা কমিশন থেকে কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা তা দেখছি। সেগুলো আমরা পর্যালোচনা করে দেখব। যদি যুক্তির ভেতরে থাকে, দাম কমাব। আর যুক্তির ভেতরে না থাকলে দাম বাড়বে। এগুলো নিয়ে আর কথা বলতে পারব না।’
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবান্ধব রাইডস
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রস্তাবে ডিএসসিসি বলেছে, শিশু-কিশোরসহ জনগণের উন্নতমানের বিনোদনসেবার সুযোগ সৃষ্টি করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবান্ধব রাইডস বসানো হবে। মোট ১৫টি রাইডস বসাতে খরচ হবে ৪৪১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রতিটির দাম গড়ে সাড়ে ২৯ কোটি টাকা।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবান্ধব খেলনা কেমন জিনিস তা বুঝছে না পরিকল্পনা কমিশন। তাদের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, ‘ডিপিপিতে যেসব রাইডসের ছবি ও ডিজাইন দেওয়া হয়েছে, তাতে এ বিষয়টি পরিলক্ষিত হয় না।’
কমিটি আরও বলেছে, ‘প্রস্তাবিত রাইডসসমূহের প্রাক্কলন তিনটি কোম্পানির নিকট হতে সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনটি কোম্পানি আলাদা আলাদা প্রাক্কলন প্রদান করেছে। এখান থেকে গড় মূল্য বের করা যাচ্ছে না। অর্থাৎ কোম্পানির মূল্যই প্রাক্কলন বলে হিসাব করা হয়েছে। এখানে প্রতিটি রাইডসের ক্ষেত্রে তিনটি কোম্পানির দর থাকা সমীচীন হবে।’
চার ডিসপ্লেতে ৫ কোটি
প্রকল্প প্রস্তাবে ডিএসসিসি বলেছে, আধুনিকায়নের পরে পার্কটিতে কী কী সুবিধা থাকবে, তা তুলে ধরতে সেখানে বসানো হবে চারটি ১০ ফুট বাই ১৫ ফুট ডিজিটাল ডিসপ্লে। এর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটির জন্য খরচ হবে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু ডিজিটাল ডিসপ্লে চোখে পড়ে শহরবাসীর। বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানই সেগুলো বসিয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও কয়েকটি ডিসপ্লে স্থাপন করেছে, যেগুলোতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। মন্ত্রীর দপ্তরের সামনে যে ৭ ফুট বাই ৫ ফুটের এলইডি ডিসপ্লে বসানো হয়েছে, তার দাম সাড়ে 8 লাখ টাকা। যে প্রতিষ্ঠান এটি সংযোজন করেছে, তার কর্মকর্তা ওসমান গনি বলেন, ‘বিভিন্ন মানের ডিজিটাল ডিসপ্লে পাওয়া যায়। ১৫ ফুট বাই ১০ ফুট একটি এলইডি ডিসপ্লের দাম পড়তে পারে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা।’
প্রস্তাবের ওপর মতামতে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, ‘চারটি এলইডি স্ক্রিন বাবদ ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অত্যধিক বলে প্রতীয়মান হয়।’
শতগুণ বেশি দামে টিকিটিং সিস্টেম
নতুন নতুন রাইডস এলে শিশুরা তো খেলতে যাবে। তার জন্য টিকিট কাটতে হবে। একটি অনলাইন বা অ্যাপসভিত্তিক টিকিটিং সিস্টেম চালু করা হবে। এর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। দেশের আইটি বিশেষজ্ঞরা এমন সফটওয়্যার তৈরি করে থাকেন। তাঁরা বলছেন, এমন একটি সিস্টেম কমবেশি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায় করা সম্ভব। অথচ এর প্রায় ১০০ গুণ বেশি ধরা হয়েছে।
দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা খাতের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ‘টিকিটের জন্য ভালো সফটওয়্যার এখন বাংলাদেশেই তৈরি হয়। শিশুপার্কের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের ১০-২০টি রাইডের জন্য টিকিট বিক্রি এবং ৫ থেকে ১০টা বুথে টিকিট প্রিন্ট হবে এমন একটা খুব ভালো সফটওয়্যার তৈরিতে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি লাগার কথা নয়।’
প্রায় একই কথা জানালেন বাংলাদেশ আইটি প্রফেশনালস ফ্রেন্ডস ক্লাবের সভাপতি সালেহ মোবিন। তিনি বলেন, একটি থিম পার্ক ধরনের প্রতিষ্ঠানের টিকিটিং সফটওয়্যার ও মোবাইল অ্যাপস তৈরিতে সাধারণত ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ হয়। এ প্রকল্পে ওয়েববেইজড সফটওয়্যারের পাশাপাশি ৫০টি প্রিন্টারের কেনার কথাও বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে গড়ে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মতো খরচ হওয়ার কথা। এর বেশি নয়।
ছয় টয়লেটে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা
প্রকল্প প্রস্তাবে ছয়টি টয়লেট স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটিতে খরচ হবে ১ কোটি ২১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। সিটি করপোরেশন বলছে, টয়লেট হবে আধুনিক। তবে প্রস্তাবে সাধারণ মানের একতলা টয়লেটের নকশা দেওয়া হয়েছ। কমিশন বলছে, এ দাম অত্যধিক।
পানি তুলতে ২ কোটি
পার্ক ঘুরে ও ডিসপ্লে দেখে ক্লান্ত দর্শনার্থীদের নিরাপদ পানি খাওয়াতে শিশুপার্কের জন্য একটি গভীর নলকূপ বসাতে চায় ডিএসসিসি। তার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় গভীর নলকূপ বসানোর ক্ষেত্রে খরচ নির্ভর করে এর কার্যক্ষমতার ওপর। সাধারণ ক্ষমতার একটি নলকূপে খরচ পড়ে ১২ থেকে ৩০ লাখ টাকা। ঢাকা ওয়াসা একটি গভীর নলকূপ দিয়ে কয়েক হাজার পরিবারের জন্য পানি সরবরাহ করে। সেই তুলনায় পার্কের জন্য কতটুকু পানির প্রয়োজন হতে পারে ধারণা করাই যেতে পারে।
পরিকল্পনা কমিশনও ওয়াসার খরচের বিষয়টি উল্লেখ করেছে। বলেছে, ‘একটি গভীর নলকূপ বসানোর জন্য ঢাকা ওয়াসার খরচ পড়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।’
অবকাঠামো নির্মাণে ১৫৭ কোটি
পার্ক হবে কিন্তু তাতে বড় বড় ভবন থাকবে না, তা কি হয়? এ জন্য শিশুপার্ক উন্নয়নের নামে ভবন নির্মাণসহ ১৭টি পূর্তকাজ একটি প্যাকেজের মধ্যে রাখা হয়েছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৭ কোটি টাকা। পূর্তকাজের মধ্যে আছে গ্যালারি, এম্ফিথিয়েটার, সীমানাপ্রাচীর, ড্রেন, ভবন, দর্শনার্থীদের জন্য শেড ও ইন্টেরিয়র।
পূর্তকাজগুলো আলাদাভাবে না দেখিয়ে প্রস্তাবে ১৭টি কাজ একই সঙ্গে দেখানো হয়েছে। এতে কোন কাজে কত টাকা ব্যয় হবে, তা পৃথকভাবে নির্ণয় করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে কমিশনের মত, ‘পূর্তকাজসমূহের কিছু কিছু উপ-অঙ্গে ব্যয় বেশি প্রাক্কলন করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। প্রতিটি কাজের বিস্তারিত ব্যয় প্রাক্কলন পিইসি সভায় উপস্থাপন করতে হবে এবং প্রাক্কলনের ভিত্তি উল্লেখ করতে হবে।’
গাড়িবিলাস
প্রকল্প হলে কর্মকর্তাদের জন্য গাড়িবিলাসের ব্যবস্থা থাকবে না, তা মনে হয় আমাদের এ দেশে আর ভাবা যায় না। এ প্রকল্পেও রয়েছে। ঢাকার মধ্যে এই প্রকল্প হলেও প্রকল্প পরিচালকের জন্য চাই বিলাসবহুল জিপগাড়ি। এর জন্য চাহিদা ৯৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৬৫ লাখ টাকায় বিলাসবহুল ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার কথাও বলা হয়েছে।
কমিশনের পর্যবেক্ষণ, ‘প্রকল্প এলাকা ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে, এ ক্ষেত্রে জিপ ও পিকআপ ক্রয় প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে।’
অসংগতি আরও আছে
প্রকল্পের ওপর একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কথা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সমীক্ষাটি ডিএসসিসি নিজে করেছে নাকি তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে করা হয়েছে, প্রস্তাবে তা উল্লেখ করা হয়নি। কমিশন বলছে, প্রকল্পটি ১০০ কোটির বেশি টাকা ব্যয়ের। কাজেই সমীক্ষাটি তৃতীয় পক্ষ দিয়ে করা না হয়ে থাকলে অবশ্যই তৃতীয় কোনো পরামর্শক কর্তৃক সমীক্ষা সম্পাদন করা প্রয়োজন।
কমিশনের সদস্য যা বললেন
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন আল রশীদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের সব চাওয়া, সব ব্যাখ্যাসহ আবারও তাদের ডিপিপি (প্রকল্প প্রস্তাব) পাঠাতে হবে। তা নিয়ে আমরা আবারও পিইসি করব। এটা খুব কম প্রকল্পের ক্ষেত্রে হয় যে দুইবার পিইসি করতে হয়। যারা তথ্যে সন্তুষ্ট করতে পারে না, তার ক্ষেত্রেই এমন হয়।’
মামুন আল রশীদ আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, তাদের কয়েকজন কর্মকর্তার কমিটি গঠন করতে হবে। তারা কোথা থেকে দাম পেয়েছে তার তথ্যসহ প্রাক্কলন তাদের স্বাক্ষরসহ দিতে বলেছি। দেখা যাক তারা পুনর্গঠিত ডিপিপি কেমন পাঠায়।’
ছোটরা খেলবে আর বুড়োরা-বড়রা শুধু দাঁড়িয়ে দেখবেন, তা তো হয় না। তাই তাঁরাও যাতে লাভবান হন, সেই আয়োজনের চেষ্টা করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক আধুনিকায়ন করা হবে। বসানো হবে ১৫টি রাইডস (খেলনা)। এ জন্য ডিএসসিসি খরচ করতে চায় ৪৪১ কোটি টাকা। এসব রাইডস বাচ্চাদের দেখিয়ে আকৃষ্ট করতে ৫ কোটি টাকায় বসানো দরকার চারটি ডিজিটাল ডিসপ্লে। রাইডস চড়তে গেলে তো টিকিট কেটে ঢুকতে হবে, সে জন্য ১০ কোটি টাকা লাগবে টিকিটিং সিস্টেম বসাতে। ঘোরাফেরার সময় প্রকৃতির ডাক পড়লে টয়লেটে যেতে হবে। তাই ছয়টি টয়লেট বানাতে খরচ করতে হবে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। তখন তো আবার পানিও লাগবে, সে জন্য ২ কোটি টাকা লাগবে দুটি নলকূপ বসাতে। এ ধরনের আরও আছে।
সব মিলিয়ে পার্কে শিশুদের খেলাধুলার সুযোগ বাড়াতে ৬১৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছিল ডিএসসিসি। গত ফেব্রুয়ারিতে এ প্রস্তাব নিয়ে কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অস্বাভাবিক দাম পুনর্নির্ধারণ করে বিস্তারিত তথ্য, ব্যাখ্যাসহ আবার প্রস্তাব দেওয়ার জন্য প্রকল্পটি ডিএসসিসিতে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে এখনো ডিএসসিসি সংশোধিত প্রস্তাব কমিশনে পাঠায়নি।
পিইসি বৈঠকে উপস্থিত এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডিএসসিসির প্রস্তাবটি এতটাই অবাস্তব মনে হয়েছে যে, এ জন্য তাদের বাইরেও লোকজনদের দিয়ে একটি কমিটি করে, ওই কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রস্তাবটি আবার পাঠাতে বলা হয়েছে। এতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থাপত্য বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগকে রাখার কথা বলা হয়েছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ যেমন, বেসিস বা কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে প্রযুক্তিবিষয়ক পণ্যের দাম যাচাই করে পাঠাতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন আল রশীদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওরা যে দাম ধরেছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। অস্বাভাবিক বেশি। আমরা কিছু গাইডলাইন দিয়েছি। এগুলোর ডিটেইল দাম দিতে হবে।’
জানতে চাইলে প্রকল্প প্রস্তাবটি তৈরিতে সম্পৃক্ত ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো করে কাজ করেছি। পরিকল্পনা কমিশন থেকে কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা তা দেখছি। সেগুলো আমরা পর্যালোচনা করে দেখব। যদি যুক্তির ভেতরে থাকে, দাম কমাব। আর যুক্তির ভেতরে না থাকলে দাম বাড়বে। এগুলো নিয়ে আর কথা বলতে পারব না।’
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবান্ধব রাইডস
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রস্তাবে ডিএসসিসি বলেছে, শিশু-কিশোরসহ জনগণের উন্নতমানের বিনোদনসেবার সুযোগ সৃষ্টি করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবান্ধব রাইডস বসানো হবে। মোট ১৫টি রাইডস বসাতে খরচ হবে ৪৪১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রতিটির দাম গড়ে সাড়ে ২৯ কোটি টাকা।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবান্ধব খেলনা কেমন জিনিস তা বুঝছে না পরিকল্পনা কমিশন। তাদের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, ‘ডিপিপিতে যেসব রাইডসের ছবি ও ডিজাইন দেওয়া হয়েছে, তাতে এ বিষয়টি পরিলক্ষিত হয় না।’
কমিটি আরও বলেছে, ‘প্রস্তাবিত রাইডসসমূহের প্রাক্কলন তিনটি কোম্পানির নিকট হতে সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনটি কোম্পানি আলাদা আলাদা প্রাক্কলন প্রদান করেছে। এখান থেকে গড় মূল্য বের করা যাচ্ছে না। অর্থাৎ কোম্পানির মূল্যই প্রাক্কলন বলে হিসাব করা হয়েছে। এখানে প্রতিটি রাইডসের ক্ষেত্রে তিনটি কোম্পানির দর থাকা সমীচীন হবে।’
চার ডিসপ্লেতে ৫ কোটি
প্রকল্প প্রস্তাবে ডিএসসিসি বলেছে, আধুনিকায়নের পরে পার্কটিতে কী কী সুবিধা থাকবে, তা তুলে ধরতে সেখানে বসানো হবে চারটি ১০ ফুট বাই ১৫ ফুট ডিজিটাল ডিসপ্লে। এর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটির জন্য খরচ হবে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু ডিজিটাল ডিসপ্লে চোখে পড়ে শহরবাসীর। বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানই সেগুলো বসিয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও কয়েকটি ডিসপ্লে স্থাপন করেছে, যেগুলোতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। মন্ত্রীর দপ্তরের সামনে যে ৭ ফুট বাই ৫ ফুটের এলইডি ডিসপ্লে বসানো হয়েছে, তার দাম সাড়ে 8 লাখ টাকা। যে প্রতিষ্ঠান এটি সংযোজন করেছে, তার কর্মকর্তা ওসমান গনি বলেন, ‘বিভিন্ন মানের ডিজিটাল ডিসপ্লে পাওয়া যায়। ১৫ ফুট বাই ১০ ফুট একটি এলইডি ডিসপ্লের দাম পড়তে পারে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা।’
প্রস্তাবের ওপর মতামতে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, ‘চারটি এলইডি স্ক্রিন বাবদ ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অত্যধিক বলে প্রতীয়মান হয়।’
শতগুণ বেশি দামে টিকিটিং সিস্টেম
নতুন নতুন রাইডস এলে শিশুরা তো খেলতে যাবে। তার জন্য টিকিট কাটতে হবে। একটি অনলাইন বা অ্যাপসভিত্তিক টিকিটিং সিস্টেম চালু করা হবে। এর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। দেশের আইটি বিশেষজ্ঞরা এমন সফটওয়্যার তৈরি করে থাকেন। তাঁরা বলছেন, এমন একটি সিস্টেম কমবেশি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায় করা সম্ভব। অথচ এর প্রায় ১০০ গুণ বেশি ধরা হয়েছে।
দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা খাতের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ‘টিকিটের জন্য ভালো সফটওয়্যার এখন বাংলাদেশেই তৈরি হয়। শিশুপার্কের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের ১০-২০টি রাইডের জন্য টিকিট বিক্রি এবং ৫ থেকে ১০টা বুথে টিকিট প্রিন্ট হবে এমন একটা খুব ভালো সফটওয়্যার তৈরিতে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি লাগার কথা নয়।’
প্রায় একই কথা জানালেন বাংলাদেশ আইটি প্রফেশনালস ফ্রেন্ডস ক্লাবের সভাপতি সালেহ মোবিন। তিনি বলেন, একটি থিম পার্ক ধরনের প্রতিষ্ঠানের টিকিটিং সফটওয়্যার ও মোবাইল অ্যাপস তৈরিতে সাধারণত ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ হয়। এ প্রকল্পে ওয়েববেইজড সফটওয়্যারের পাশাপাশি ৫০টি প্রিন্টারের কেনার কথাও বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে গড়ে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মতো খরচ হওয়ার কথা। এর বেশি নয়।
ছয় টয়লেটে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা
প্রকল্প প্রস্তাবে ছয়টি টয়লেট স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটিতে খরচ হবে ১ কোটি ২১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। সিটি করপোরেশন বলছে, টয়লেট হবে আধুনিক। তবে প্রস্তাবে সাধারণ মানের একতলা টয়লেটের নকশা দেওয়া হয়েছ। কমিশন বলছে, এ দাম অত্যধিক।
পানি তুলতে ২ কোটি
পার্ক ঘুরে ও ডিসপ্লে দেখে ক্লান্ত দর্শনার্থীদের নিরাপদ পানি খাওয়াতে শিশুপার্কের জন্য একটি গভীর নলকূপ বসাতে চায় ডিএসসিসি। তার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় গভীর নলকূপ বসানোর ক্ষেত্রে খরচ নির্ভর করে এর কার্যক্ষমতার ওপর। সাধারণ ক্ষমতার একটি নলকূপে খরচ পড়ে ১২ থেকে ৩০ লাখ টাকা। ঢাকা ওয়াসা একটি গভীর নলকূপ দিয়ে কয়েক হাজার পরিবারের জন্য পানি সরবরাহ করে। সেই তুলনায় পার্কের জন্য কতটুকু পানির প্রয়োজন হতে পারে ধারণা করাই যেতে পারে।
পরিকল্পনা কমিশনও ওয়াসার খরচের বিষয়টি উল্লেখ করেছে। বলেছে, ‘একটি গভীর নলকূপ বসানোর জন্য ঢাকা ওয়াসার খরচ পড়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।’
অবকাঠামো নির্মাণে ১৫৭ কোটি
পার্ক হবে কিন্তু তাতে বড় বড় ভবন থাকবে না, তা কি হয়? এ জন্য শিশুপার্ক উন্নয়নের নামে ভবন নির্মাণসহ ১৭টি পূর্তকাজ একটি প্যাকেজের মধ্যে রাখা হয়েছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৭ কোটি টাকা। পূর্তকাজের মধ্যে আছে গ্যালারি, এম্ফিথিয়েটার, সীমানাপ্রাচীর, ড্রেন, ভবন, দর্শনার্থীদের জন্য শেড ও ইন্টেরিয়র।
পূর্তকাজগুলো আলাদাভাবে না দেখিয়ে প্রস্তাবে ১৭টি কাজ একই সঙ্গে দেখানো হয়েছে। এতে কোন কাজে কত টাকা ব্যয় হবে, তা পৃথকভাবে নির্ণয় করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে কমিশনের মত, ‘পূর্তকাজসমূহের কিছু কিছু উপ-অঙ্গে ব্যয় বেশি প্রাক্কলন করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। প্রতিটি কাজের বিস্তারিত ব্যয় প্রাক্কলন পিইসি সভায় উপস্থাপন করতে হবে এবং প্রাক্কলনের ভিত্তি উল্লেখ করতে হবে।’
গাড়িবিলাস
প্রকল্প হলে কর্মকর্তাদের জন্য গাড়িবিলাসের ব্যবস্থা থাকবে না, তা মনে হয় আমাদের এ দেশে আর ভাবা যায় না। এ প্রকল্পেও রয়েছে। ঢাকার মধ্যে এই প্রকল্প হলেও প্রকল্প পরিচালকের জন্য চাই বিলাসবহুল জিপগাড়ি। এর জন্য চাহিদা ৯৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৬৫ লাখ টাকায় বিলাসবহুল ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার কথাও বলা হয়েছে।
কমিশনের পর্যবেক্ষণ, ‘প্রকল্প এলাকা ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে, এ ক্ষেত্রে জিপ ও পিকআপ ক্রয় প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে।’
অসংগতি আরও আছে
প্রকল্পের ওপর একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কথা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সমীক্ষাটি ডিএসসিসি নিজে করেছে নাকি তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে করা হয়েছে, প্রস্তাবে তা উল্লেখ করা হয়নি। কমিশন বলছে, প্রকল্পটি ১০০ কোটির বেশি টাকা ব্যয়ের। কাজেই সমীক্ষাটি তৃতীয় পক্ষ দিয়ে করা না হয়ে থাকলে অবশ্যই তৃতীয় কোনো পরামর্শক কর্তৃক সমীক্ষা সম্পাদন করা প্রয়োজন।
কমিশনের সদস্য যা বললেন
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন আল রশীদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের সব চাওয়া, সব ব্যাখ্যাসহ আবারও তাদের ডিপিপি (প্রকল্প প্রস্তাব) পাঠাতে হবে। তা নিয়ে আমরা আবারও পিইসি করব। এটা খুব কম প্রকল্পের ক্ষেত্রে হয় যে দুইবার পিইসি করতে হয়। যারা তথ্যে সন্তুষ্ট করতে পারে না, তার ক্ষেত্রেই এমন হয়।’
মামুন আল রশীদ আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, তাদের কয়েকজন কর্মকর্তার কমিটি গঠন করতে হবে। তারা কোথা থেকে দাম পেয়েছে তার তথ্যসহ প্রাক্কলন তাদের স্বাক্ষরসহ দিতে বলেছি। দেখা যাক তারা পুনর্গঠিত ডিপিপি কেমন পাঠায়।’
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫