Ajker Patrika

এ সময়ে চোখের যত্ন

ডা. মো. আরমান বিন আজিজ  
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৫০
এ সময়ে চোখের যত্ন

শীত চুপি চুপি আমাদের চোখের ক্ষতি করে চলেছে। ফলে এ সময় দরকার চোখের বাড়তি যত্ন।

এ সময়ের চোখের রোগ
চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস

শীতে অনেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পারেন না। ঠান্ডার কারণে পানি বা সাবান ব্যবহার কমিয়ে দেন। ফলে চোখের পরিচ্ছন্নতা ব্যাহত হয়ে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সক্রিয় হয়ে চোখের বহিঃঝিল্লির প্রদাহ বাড়ায়। শিশু বা বয়োবৃদ্ধরা এতে বেশি আক্রান্ত হন।

চোখের অ্যালার্জি
শীতকালে চোখের চুলকানি রোগের ব্যাপকতা দেখা দেয়। বাতাসে পোলেন, অর্থাৎ ফুলের সূক্ষ্ম রেণু, ঘাস, বীজ ইত্যাদির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, ধুলাবালির পরিমাণও বেড়ে যায়। ফলে চোখে অ্যালার্জি বাড়ে।

চোখের পাতার প্রদাহ
যাঁদের খুশকিজনিত সমস্যা বেশি বা মেবোমিয়ান গ্ল্যান্ডের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা আক্রান্ত বেশি হন এতে। এই রোগে চোখে জ্বালাপোড়া, চুলকানি ও চোখ দিয়ে পানি পড়া বা লাল হতে পারে।

অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব
গ্রীষ্মকালের মতো শীতকালেও অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব সমানই থাকে। এই রশ্মির কারণে চোখের বাইরের পর্দায় মাংসপেশি বেড়ে যেতে পারে। তাই অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধী সানগ্লাস পরিধান করা জরুরি।

ড্রাই আই সিনড্রোম
এ ধরনের রোগীদের শীতকালে চোখের পানি বেশি বাষ্পীভূত হয়। চোখের স্বাভাবিক ফ্লুইড কমে গিয়ে চোখের জ্বালাপোড়া মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

রোগগুলো হলে যা করবেন
চোখ ওঠা যেহেতু ছোঁয়াচে রোগ, তাই রোগীকে বাসায় বিশ্রামে থাকতে হবে আর বাইরে বেরোলে চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শে আই ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। চোখের অ্যালার্জি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, তাই চোখের এ সমস্যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ড্রাই আই সিনড্রোম রোগীদের বাড়তি পরামর্শ, তীব্র শীতে মাথাঢাকা টুপি, জ্যাকেট বা কোট, র‌্যাপ অ্যারাউন্ড সানগ্লাস এ ধরনের সঠিক পোশাক পরিধান করে চোখের পানি বাষ্পীভূত হয়ে যাওয়া ঠেকাতে হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনে চোখের চারপাশে আই ক্রিম লাগাতে হবে। চোখ সুরক্ষায় শীতকালীন সবুজ শাকসবজি, ফলমূল নিয়মিত খেতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। কন্টাক্ট লেন্স বেশি সময় ব্যবহার না করাই ভালো এ সময়।

শীতে করণীয়

  • ঠান্ডা আবহাওয়ায় বেরোনোর সময় সানগ্লাস ব্যবহার করা ভালো। এতে চোখ শুষ্ক ও হিমেল হাওয়ার আক্রমণ থেকে বাঁচবে।
  • চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে চিকিৎসকের পরামর্শে আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।
  • রুম হিটার চোখ বেশি শুষ্ক করে তোলে। এর সঙ্গে আর্দ্রতা রক্ষক বা হিউমিডিফায়ার না থাকলে ঘরে এক পাশে এক গামলা বা এক বালতি পানি রেখে দিন। এতে ঘর যথেষ্ট আর্দ্র হবে।
  • ঠান্ডা বা অ্যালার্জির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে যথাসম্ভব ধুলাবালি এড়িয়ে চলুন।
  • শীতে অনেকের চোখের পাপড়িতে খুশকি হয়। সে জন্য চোখের পাতা নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
  • চোখের উপযোগী লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করুন।
  • সব সময় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে না থেকে মাঝে মাঝে চোখের পলক ফেলুন। এতে চোখ পরিষ্কার ও পিচ্ছিল থাকবে।
  • সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখে প্রথমে ১০ থেকে ২০ বার কুসুম গরম ও পরে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঠান্ডা ও পরে হালকা কুসুম গরম পানির ঝাপটা দিন।
  • শীতে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফলমূল পাওয়া যায়। চোখের যত্নে প্রচুর পরিমাণে মৌসুমি ফল ও শাকসবজি খেতে পারেন।

 শীতে চোখের বাড়তি যত্ন
হাইড্রেটেড থাকুন

শীতকালে চোখের শুষ্ক ভাব কাটাতে বেশি করে ফ্লুইড খান। পানি খাওয়ার পাশাপাশি গরম স্যুপ খেলে শরীর গরম থাকবে, চোখও শুষ্ক হবে না।

সানগ্লাস পরুন
শীতকালে রাস্তায় বের হলে সানগ্লাস ব্যবহার করুন। যদি ঠান্ডা হাওয়া দেয়, তাহলে অবশ্যই সানগ্লাস পরুন। এমন সানগ্লাস বেছে নিন, যাতে চোখের পাশ ও বাইরের দিক ঢাকা থাকে।

ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড
শীতকালে মাছের তেল খান। এর মধ্যে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড শুষ্ক চোখের সমস্যা দূর করে চোখের পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে।

আই ড্রপ ব্যবহার করুন
যদি বারবার শুষ্ক চোখের সমস্যা হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত আই ড্রপ ব্যবহার করুন।

চোখের শুষ্কতা দূর করতে

চোখের শুষ্কতা দূর করতে কিছু বিষয় মেনে চলতে পারেন।

গরম ভাপ: একটি পাতলা পরিষ্কার কাপড় খানিক গরম পানিতে ডুবিয়ে পাঁচ মিনিট তা চোখের ওপর ধরুন। পরে আলতোভাবে সেই কাপড় দিয়ে চোখের ওপর ও নিচের পাপড়িতে ঘুষুন। এতে কোনো ময়লা বা জীবাণু থাকলে বের হয়ে যাবে। এটা চোখ মসৃণ করে, অশ্রু উন্নত করে ও চোখের লালচে ভাব, অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করে।

নারকেল তেল: নারকেল তেল চোখের জলীয় ভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং চোখের জল শুকিয়ে যাওয়া রোধ করে। পাশাপাশি এতে আছে প্রদাহরোধী উপাদান যা শুষ্ক চোখের অস্বস্তি দূর করে। একটি তুলার বল নারকেল তেলে ডুবিয়ে চোখ বন্ধ করে ১৫ মিনিট তার ওপর রাখুন। চোখের অস্বস্তি না কমা পর্যন্ত নিয়মিত এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

প্রাকৃতিক সম্পূরক: যেসব খাবারে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে সেসব খাবার খেলে শুষ্ক চোখের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। স্যামন মাছ, সারডিন মাছ, তিসির তেল, আখরোট ইত্যাদি ওমেগা থ্রিসমৃদ্ধ খাবার। এগুলো চোখের সংক্রমণ কমায় ও চোখের পানির পরিমাণ বাড়িয়েশুষ্কতা দূর করে।

অ্যালোভেরা জেল: ক্ষারহীন প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার নির্যাসে, যা চোখের শুষ্কতা দূর করতে খুবই কার্যকর। এর প্রদাহরোধী ও আর্দ্র রাখার উপাদান চোখের লালচে ও ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা কেটে জেল বের করে টিস্যুতে মাখিয়ে নিন। তারপর চোখের বাইরে ওপরে আলতো করে টিস্যু বুলিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দিনে দুইবার এই প্রক্রিয়া চালাতে হবে।

লেখক: সাবেক ফ্যাকাল্টি ও প্রশিক্ষক, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, চট্টগ্রাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বন্ধুর সঙ্গে স্ত্রীর গোপন সম্পর্ক, ধর্ষণের অভিযোগ স্বামীর

তালগাছ কেটে শতাধিক বাবুইছানা হত্যা: প্রধান আসামি মোবারেক গ্রেপ্তার

বিমানবন্দরে ব্যাগের মধ্যে গুলির ম্যাগাজিন, যে ব্যাখ্যা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ

এনবিআর আন্দোলনের ৬ নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামছে দুদক

শাটডাউন কর্মসূচি করুক, বৈঠক হবে না: অর্থ উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত