Ajker Patrika

বিনা অপরাধে শাস্তি

সম্পাদকীয়
বিনা অপরাধে শাস্তি

দেশে যে কত অদ্ভুত কাণ্ড ঘটে, তার সব হয়তো সবার জানার সুযোগ হয় না। দু-একটি অদ্ভুতুড়ে কাণ্ডের খবর গণমাধ্যমের কল্যাণে মাঝেমধ্যে জানাজানি হলে মন খারাপের মাত্রা বাড়ে।

প্রতিদিন কত বড় বড় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, কজন অপরাধীর শাস্তির খবর পাওয়া যায়! তবে প্রকৃত অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও নিরপরাধ ব্যক্তির সাজা পাওয়ার খবর মাঝেমধ্যে শোনা যায়। নামের মিল অথবা প্রকৃত অপরাধীর প্রভাব-প্রতিপত্তি বেশি হওয়ার কারণেই সাধারণত এমন ঘটনা ঘটে। আইনের হাত অনেক বড় বলে একটি কথা চালু থাকলেও আমাদের দেশে এটা সঠিক বলে মনে হয় না। বরং আমাদের দেশে আইনকে মাকড়সার জালের মতোই মনে হয়। চুনোপুঁটি আটকে যায়, রাঘববোয়াল বেরিয়ে যায়!

শুক্রবার আজকের পত্রিকায় ‘চোখে টর্চের আলো আর শামীমের অন্ধকার ১৮ বছর’ শিরোনামের খবরটি আইনের অপপ্রয়োগ বা বিচারব্যবস্থার দুর্বলতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবেই কি আমাদের সামনে আসেনি?

একটি সাধারণ ঘটনার জেরে ২০০০ সালের ২৬ মে শালিখা উপজেলার সীমাখালী অরিশপুর গ্রামে ছুরিকাঘাতে খুন হন ইলতুতমিস মোল্লা (৩৫) নামের এক ব্যক্তি। রাতে চোখে টর্চলাইট মারার মতো সামান্য ঘটনা থেকে বিবাদের শুরু। এরপর মারামারি, খুন। এই খুনের ঘটনায় শামীম মোল্লাসহ কয়েকজনের নামে মামলা করা হয়। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পাঁচ বছর কারাগারে ছিলেন শামীম মোল্লা। ঘটনার প্রায় ৯ বছর পর ২০০৯ সালে বিচারিক আদালতে তাঁকেসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল নিষ্পত্তি করে ২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর ১৩ সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির মধ্যে ১২ জনকেই খালাস দেন হাইকোর্ট। আর সাজা কমিয়ে শামীমকে দেন যাবজ্জীবন কারাবাস।

যাবজ্জীবন সাজার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শামীম। শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ আপিল মঞ্জুর করে তাঁকে খালাস দেন। এর মাধ্যমে হত্যার অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পেলেন শামীম। অথচ এর মধ্যেই তিনি মোট সাজা খেটেছেন ১৮ বছর ৩ মাস। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, ছুরিকাঘাতে নিহত ইলতুতমিস মোল্লার মৃত্যুকালীন জবানবন্দির সঙ্গে সাক্ষীদের জবানবন্দির মিল নেই। এ জন্য শামীমকে খালাস দিয়েছেন আদালত। তাহলে আগে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল কিসের ভিত্তিতে?

এত বছর মামলা চালাতে গিয়ে জায়গাজমি সব বিক্রি করে শামীম মোল্লার পরিবার যে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শামীমের জীবনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাকে শুধু অমানবিক অভিহিত করলেই কি দায়মুক্ত হওয়া যাবে? আদালত অঙ্গনের যাঁদের অবহেলা, গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে শামীম মোল্লার জীবন থেকে ১৮ বছর ঝরে গেল, তাঁদের কি কোনোভাবে শাস্তির আওতায় আনা যায় না? অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত না করে নিরীহ মানুষের জীবনে ভোগান্তি তৈরি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত