Ajker Patrika

কল্যাণীর ধ্যানজ্ঞান শিশুদের কল্যাণ

রিমন রহমান, রাজশাহী
কল্যাণীর ধ্যানজ্ঞান শিশুদের কল্যাণ

স্কুলশিক্ষক বাবার অনটনের সংসারে সাহায্যের জন্য ছোটবেলায় নিজেদের বর্গা নেওয়া জমিতে কাজ করতেন। সকালে খেতে কিছুক্ষণ কাজের পরই স্কুলে যেতেন। বাড়িতে ছিল খাবার কষ্ট, পোশাকের কষ্ট, বই-খাতা কেনার সমস্যা। তবু থেমে যাননি। সব প্রতিকূলতাকে দূরে ঠেলে এগিয়ে গেছেন। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন।

বলছিলাম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওঁরাও সম্প্রদায়ের সদস্য কল্যাণী মিনজির কথা। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার উঁচাই গ্রামে ১৯৬৯ সালে জন্ম তাঁর। বর্তমানে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সোনাদীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নিজের কোনো সন্তান নেই। তাই স্কুলের সব বাচ্চাকেই নিজের বাচ্চা মনে করেন। তাদের পড়ান, খেলাধুলা করান, একসঙ্গে পুকুরে নেমে সাঁতার কাটা শেখান। তিনি ওঁরাও সম্প্রদায়ের শিশুদের জন্য সাদরি ভাষায় বই লেখেন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এই বই শিশু, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

কল্যাণী শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের পর এবার জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

কল্যাণী জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হওয়ায় গত রোববার তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করেছিলেন স্কুলের শিক্ষকেরা। অনুষ্ঠান শেষে তিনি কথা বলেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি একজন নৃগোষ্ঠী নারী। তা-ও আমার স্কুলের সহকর্মী এবং আশপাশের মানুষ আমাকে ছোট করে দেখেন না। সবাই খুব সহযোগিতা করেন। সবার সহযোগিতা আছে বলেই আজ আমি এই পর্যায়ে যেতে পেরেছি।’

কাজ করতে পছন্দ করেন জানিয়ে এই শিক্ষক বলেন, ‘সহকারী শিক্ষক থাকা অবস্থায় খুব একটা কাজ করতে পারিনি। ২০০৯ সালে পদোন্নতি পাওয়ার পরে যখন প্রধান শিক্ষক হলাম, তখন একটা নতুন উদ্যম পেলাম। কাজগুলো করা সহজ হয়ে গেল। আমি স্কুলের প্রতিটি বাচ্চাকেই নিজের বাচ্চা মনে করি। সেই কারণেই তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। তা ছাড়া স্কুলের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর। তারা যেন কোনোভাবেই ঝরে না পড়ে সে জন্য বেশি মনোযোগ দিতে হয়েছে।’

জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার অনুভূতি কেমন, জানতে চাইলে কল্যাণী বলেন, ‘জার্নিটা আসলে অনেক লম্বা ছিল। অনেক কঠিনও। এই অনুভূতি কোনোভাবেই ভাষায় প্রকাশ করে বলার মতো নয়। এখনো আমার কাছে মনে হচ্ছে যেন রাতে ঘুমের মধ্যে আমি স্বপ্ন দেখছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত