Ajker Patrika

অনিন্দ্যসুন্দর ছাতিম

মাসুদ উর রহমান
অনিন্দ্যসুন্দর ছাতিম

ছাতিম। ছাতার মতো চারদিকে ছড়িয়ে থাকে বলেই কি এ গাছের নাম ছাতিম? স্থানীয়ভাবে একে ‘ছাতিয়ান, ছাত্তিয়ান’ নামেও ডাকা হয়। এর ইংরেজি নাম ‘ডেভিলস ট্রি’। ছাতিমগাছ ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচু, চিরসবুজ দুধকষভরা সুশ্রী গাছ। পাতা প্রায় ১৮ সেন্টিমিটার লম্বা, মসৃণ, ওপরটা উজ্জ্বল সবুজ, নিচ সাদাটে। ছাতিমে একটি ফুলগুচ্ছে সাতটি পাতা একসঙ্গে যুক্ত থাকে বলে সংস্কৃত ভাষায় একে সপ্তবর্ণা বা সপ্তপর্ণা নামেও ডাকা হয়। অ্যাপোসাইনেসি বর্গের অন্তর্ভুক্ত ছাতিমগাছের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালস্টোনিয়া স্কলারিস।

তবে ফুলটির একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি তীব্র ঘ্রাণযুক্ত। মজার ব্যাপার হলো, ঘ্রাণ ছড়ায় সন্ধ্যার পর এবং রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘হৈমন্তী’ গল্পের প্রধান চরিত্র হৈমন্তীর নাম গল্পের প্রেক্ষাপটে শুরুতে দিয়েছিলেন শিশির। কেননা, ‘শিশিরে কান্নাহাসি একেবারে এক হইয়া আছে, আর শিশিরে ভোরবেলাটুকুর কথা সকালবেলায় আসিয়া ফুরাইয়া যায়।’ ছাতিমেও ঠিক তাই। রাতে ছাতিমের এমন মাদকতাপূর্ণ ঘ্রাণ সকাল হতেই কেমন কর্পূরের মতো বাতাসে মিলিয়ে যায়! আবার রাতে যে ফুলের এমন মিষ্টি গন্ধ, রাত শেষে বাসি ফুল থেকে ভেসে আসে উল্টো তীব্র ঝাঁজালো গন্ধ! সে গন্ধে ঝিমঝিম করে ওঠে মন-মস্তিষ্ক।

ছাতিমের মনমাতানো মিষ্টি গন্ধ মন হরণ করেছে অনেক কবি-সাহিত্যিকের। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে ছাতিমগাছের সৌন্দর্য বর্ণিত হয়েছে অত্যন্ত চমৎকারভাবে। বর্ণিত হয়েছে তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘পথের পাঁচালীতে’ও। ‘পথের পাঁচালী’র অপু আর দুর্গাকে মনে আছে? ‘অপু বলিল, কী ফুলের গন্ধ বেরুচ্ছে, না দিদি? তাহাদের মা বলিল, তাহাদের জ্যেঠামশায়ের ভিটার পিছনে ছাতিম গাছ আছে, সেই ফুলের গন্ধ। তাহার পর সকলে গিয়া ঘুমাইয়া পড়ে। রাত্রি গভীর হয়। ছাতিম ফুলের উগ্র সুবাসে হেমন্তের আঁচলাগা শিশিরাদ্র নৈশবায়ু ভরিয়া যায়। মধ্যরাতে বেনুবনশীর্ষে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের ম্লান জ্যোৎস্না উঠিয়া শিশিরসিক্ত গাছপালার ডালে পাতায় চিকচিক করছে।’

সেদিন সকালে প্রাতর্ভ্রমণে গিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে থাকা এ ছাতিমে আকৃষ্ট হই আমি নিজেও। সঙ্গে মুঠোফোনটি ছিল বলে দু-তিনটি ছবিও তুলে ফেলেছি। ও আচ্ছা। ছাতিমের কিন্তু অনেক ঔষধি গুণও আছে। গাছের ছাল ও আঠা জ্বর, হৃদ্‌রোগ, হাঁপানি, ক্ষত, আমাশয় ও কুষ্ঠ নিরাময়ে বেশ উপকারী।

কদম যেমন বর্ষার দূত, ছাতিম তেমন হেমন্তের। তবে আশ্বিনের শেষেই ফুটতে শুরু করে ছাতিম ফুল। সচরাচর ছাতিমগাছ কেউ লাগায় না। তবু সারা দেশে বিক্ষিপ্তভাবে ছাতিমগাছ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এর কারণ, ছাতিমগাছের বিস্তরণ হয় বীজের মাধ্যমে। ছোট কাঠির মতো বীজের সঙ্গে থাকে পশমের মতো অঙ্গ। ফল ফেটে বীজ বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে তা বাতাসে ভেসে ভেসে অনেক দূরে চলে যায়। সুবিধামতো জায়গায় পড়লে সেখানেই গজিয়ে ওঠে পাতায়-ফুলে অনিন্দ্যসুন্দর ছাতিমগাছ।

লেখক: কলেজশিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত