Ajker Patrika

বাল্কহেডে ঝুঁকিপূর্ণ রাতের নৌপথ

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬: ০২
বাল্কহেডে ঝুঁকিপূর্ণ রাতের নৌপথ

রাত নামলেই ঢাকা-বরিশাল নৌপথের মেঘনাসহ অধিকাংশ নদীতে মিট মিট করে জ্বলতে থাকে লালবাতি। নদীতে কেবল মাথা জাগিয়ে চলা এ যানগুলো হচ্ছে বালুবোঝাই বাল্কহেড। রাতে বেপরোয়াভাবে চলে বাল্কহেডগুলো। যদিও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সন্ধ্যার পর বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালুবাহী বাল্কহেড রাতের নৌপথকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। যে কারণে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে ঘটেছে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা।

সর্বশেষ গত বুধবার রাতে মুন্সিগঞ্জের কলাগাছিয়ায় মেঘনা-ধলেশ্বরী নদীর মোহনায় ঢাকা থেকে বরিশালগামী সুরভী-৭ লঞ্চের সঙ্গে সংঘর্ষে একটি বাল্কহেড ডুবে নিখোঁজ হয়েছেন এক বাল্কহেড শ্রমিক। ভাগ্যবশত রক্ষা পেয়েছেন সুরভী-৭ লঞ্চের ৫ শতাধিক যাত্রী। লঞ্চটি নিরাপদে তীরে ভেড়াতে পারলেও নদীর মধ্যে ভীতিকর অবস্থায় পড়েছিলেন তাঁরা।

দুর্ঘটনাকবলিত সুরভী-৭ লঞ্চের মাস্টার হুমায়ন কবির জানান, তার বাম পাশ ধরে পাশাপাশি দুটি বাল্কহেড বেপরোয়া গতিতে ধলেশ্বরী নদীতে প্রবেশ করছিল। ডান পাশ থেকে আসা আরেকটি পণ্যবাহী জাহাজ সামনে পড়ে যাওয়ায় ডুবে যাওয়া বাল্কহেডটি নিজেকে রক্ষায় সুরভী-৭ লঞ্চের সামনে দিয়ে হঠাৎ আড়াআড়ি হয়ে অতিক্রম করার চেষ্টা করে। হঠাৎ বাল্কহেডটি সামনে পড়ে যাওয়ায় লঞ্চের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। ফলে ধাক্কা লেগে বাল্কহেডটি ডুবে যায়। এতে লঞ্চের সামনের দিকে ফুটো হয়েছে। বাল্কহেডের শ্রমিকদের উদ্ধারে লঞ্চের সার্চ লাইট মেরে নদী আলোকিত করে ফেলেন এবং লঞ্চের বয়া নদীতে ছুড়ে মারেন।’

এর আগে গত ৬ জানুয়ারি মেঘনার হিজলা-বাবুগঞ্জ অংশে বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবে যায় মালবাহী জাহাজ হালিমা সোবাহান-১।

একইভাবে ২০২০ সালের মে মাসে মধ্যরাতে এমভি মানামী ঝড়ের কবলে যখন মেঘনায় নিরাপদ আশ্রয়ে যায় তখন হঠাৎ বাল্কহেডে ধাক্কা দিলে লঞ্চটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ২৫ মে হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি যুবরাজ-৭ ও সিমেন্টের কাঁচামাল ফ্লাইঅ্যাশবাহী বাল্কহেড এমভি সিয়ামের সংঘর্ষের ঘটনায় বাল্কহেডটি ডুবে যায়।

ঢাকা-বরিশাল রুটে বিলাসবহুল লঞ্চের একাধিক মাস্টার-চালক অভিযোগ করেন, ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী থেকে মেঘনা নদীর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কালীগঞ্জ পয়েন্ট পর্যন্ত নৌপথ বাল্কহেডের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এমভি সুরভী-৯ লঞ্চের মাস্টার আবুল কালাম বলেন, ‘রাতে মেঘনায় অগণিত বাল্কহেডের কারণে চারদিকে শুধু টিপটিপ করে লালবাতি জ্বলতে দেখা যায়। এই বাল্কহেডগুলো সারা রাত মেঘনায় বৈধ-অবৈধভাবে বালু কাটে। মাস্টার-ড্রাইভার নিয়োগ না থাকায় অনভিজ্ঞ সুকানি দিয়ে চালানো হয় এসব বাল্কহেড। এসব বাল্কহেডের কারণে নৌপথ এখন ঝুঁকিপূর্ণ। রাতে বাল্কহেড চলাচল বন্ধের আইন কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দিয়েও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।’

বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ চাঁদপুরের যুগ্ম পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘রাতে নৌপথে বাল্কহেড চলাচল বন্ধের দায়িত্ব যে পুলিশ, কোস্টগার্ডদের, তাঁরা কী করছেন? আমাদের কি অস্ত্র আছে, পোশাক আছে? বিআইডব্লিউটিএ কেবল তদারকি করে।’

নৌ-পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব দায় পুলিশের একার নয়। আইন কার্যকর করতে হলে সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজন। নৌ-পুলিশের জনবলসংকট থাকায় পুরো নদী একসঙ্গে পাহারা দেওয়া যায় না। এর সুযোগ নিচ্ছে অবৈধ নৌযানগুলো। বাল্কহেডের মালিকেরাও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে আইনভঙ্গ করেন।’

লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘রাতে বাল্কহেড চলাচল বন্ধে মন্ত্রী, ডিজি বরাবর একাধিকবার চিঠি দিয়েও সুরাহা পাননি। বাল্কহেড রাতে চলছে, তাই এমন দুর্ঘটনা। নিয়ন্ত্রণ না করা হলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সুরভী-৭ দুর্ঘটনায় পড়ায় রাতেই ওই লঞ্চের ৫ শতাধিক যাত্রীকে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চে বরিশালে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো তদন্ত কমিটি হয়নি, তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত আছেন। রাতে বাল্কহেডের চলাচল বন্ধে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। যেগুলো চলছে তা লুকিয়ে চলে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

১০-১২তম গ্রেডে নিয়োগ: প্রতি পদের বিপরীতে দুজন থাকবেন অপেক্ষমাণ

মধুপুরে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত