Ajker Patrika

বিপদে যেন না করি ভয়

সম্পাদকীয়
বিপদে যেন না করি ভয়

নানা কারণে মানুষ ভালো নেই। অর্থনৈতিক অবস্থাও আশাব্যঞ্জক নয়। দুই বছরের করোনাকাল মানুষের জীবনচক্রে ভয়ানক বিরূপতা তৈরি করেছিল। স্বাভাবিক জীবনযাপন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মানুষ হয়ে পড়েছিল ঘরবন্দী, জরুরি প্রয়োজনে মুখ ঢেকে বা মাস্ক পরে বের হওয়া আর ঘরে ফিরে হাত-মুখ ধোয়ার নতুন অভ্যাস রপ্ত করতে মানুষের সময় লেগেছিল। জীবন-জীবিকা হয়ে পড়েছিল অনিশ্চিত। কত আপনজনের অকাল মৃত্যুতে চোখের পানি ফেলতে হয়েছে। করোনার ত্রাস সামাল দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা শুরু করতে না করতেই নতুন এক দুর্যোগের মুখে পড়তে হয়েছে মানুষকে। এই দুর্যোগ অবশ্য প্রাকৃতিক নয়, মানুষের তৈরি। হ্যাঁ, রাশিয়া হঠাৎ করে ইউক্রেনে আক্রমণ করে যুদ্ধ বাধিয়ে গোটা দুনিয়াকে বিপদাপন্ন করে তুলেছে।

সরাসরি যুদ্ধ দুই দেশের মধ্যে সীমিত থাকলেও এর অভিঘাতে নড়বড়ে হয়ে পড়ছে ছোট-বড় প্রায় সব দেশ। কারণ, পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজ—পরস্পর নির্ভর। নির্ভরতা জ্বালানির জন্য, খাদ্যের জন্য, প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় আরও কত সব উপকরণের জন্য। যুদ্ধ সবকিছু ব্যাহত করছে। এই যুদ্ধ শিগগিরই শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না।

ইউক্রেন ছোট দেশ হলেও তার পেছনে মদদ দেওয়ার জন্য আছে অনেক বড় দেশ। প্রভাব ও প্রভুত্ব বিস্তারের একরোখা জেদে বড় শক্তিগুলো শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির পথে হাঁটছে না।

করোনা ও যুদ্ধ—এই দুই বিপদ মোকাবিলায় মানুষ যখন দিশেহারা, তখনই দুয়ারে এসে নাড়া দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী ১৫টি জেলা ছাড়া আরও অনেক অঞ্চলেই সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মানুষ ঘরবাড়িহারা হয়েছে, ফসলের হয়েছে ব্যাপক ক্ষতি। ছয় হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পল্লী বিদ্যুতের ৯০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বলে খবর। সরকারিভাবে কমপক্ষে ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। সিত্রাংয়ের আঘাতে প্রাথমিকভাবে ৩৫ জনের মৃত্যুর কথা জানা গেছে। গত ১০ বছরে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে এত সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়নি।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ভূখণ্ডে আঘাত হানার আগেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তারপরও যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে ওঠা সহজ হবে না। কারণ, দেশের অর্থনীতি এখন কিছুটা দুর্বল অবস্থায় আছে। সামনে খাদ্যসংকটের আশঙ্কা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। যখন অতিরিক্ত ফসল ফলিয়ে আসন্ন বিপদ মোকাবিলা জরুরি হয়ে পড়েছে, তখন আকস্মিক এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাঠে থাকা আমন ধান, শীতকালীন সবজি এবং মাছের ঘেরের যে ক্ষতি করল, তা কীভাবে পূরণ হবে?

বাংলাদেশকে বলা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের মানুষের অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ। কাজেই কোনো বিপদে-দুর্যোগে ভয় না পেয়ে বা দিশেহারা না হয়ে, পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে সাহসের সঙ্গেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে না নেওয়ার প্রস্তাব র‍্যাব ডিজির

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত