Ajker Patrika

আতঙ্কের জনপদ চরক্লার্ক

নোয়াখালী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২২, ১৫: ০৩
আতঙ্কের জনপদ চরক্লার্ক

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়ন যেন আতঙ্কের জনপদ হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছরে কয়েকটি হত্যা ও একাধিক অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা মানুষকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছে। এসব ঘটনার কোনোটিরই বিচার হয়নি। এ কারণে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

সর্বশেষ চরক্লার্ক ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কেরামতপুরের আলোচিত মো. বেলাল হোসেন (৩২) খুন হওয়ার পর থেকে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে গেছে। এখন অনেকেই রাতে একা চলাফেরা বন্ধ করে দিয়েছেন। সন্ধ্যার আগে আগে ঘরে ঢুকে যান বেশির ভাগ মানুষ।

বেলাল হোসেন হত্যাকাণ্ডের সাড়ে তিন মাসেও রহস্য উদ্ঘাটন কিংবা ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ ঘটনায় করা মামলার বাদীসহ ওই গ্রামের বাসিন্দারা।

এলাকাবাসী জানান, শুধু বেলাল হোসেন হত্যাকাণ্ডই নয়, গত কয়েক বছরে কেরামতপুর এলাকায় আরও পাঁচটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দুটি ঘটনা স্থানীয়ভাবে সালিসের মাধ্যমে ধামাচাপা দেওয়া হয়। বাকি তিনটির বিষয়ে ঝামেলা এড়াতে থানা-পুলিশের আশ্রয় নেয়নি ভুক্তভোগীরা।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর দুপুরে কেরামতপুর গ্রামের আনিস মোল্লার বাড়ির পুকুরে বেলাল হোসেনের (৩২) লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহত বেলালের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে চরজব্বার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় আসামি ‘অজ্ঞাত’ উল্লেখ করা হলেও বর্ণনায় নিহত বেলালের স্ত্রী মিনোয়ারা বেগমের সঙ্গে পাশের চরক্লার্ক গ্রামের আবুল হাশেমের ছেলে শেখ ফরিদের (২৮) পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ মিনোয়ারা বেগমকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৫ সালে মো. আবদুর রহমান ওরফে রুবেলের (১২) লাশ পাওয়া যায় কেরামতপুর গ্রামের বোলন চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশের গাছে সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায়। রুবেল তার নানাবাড়ি থাকত। তার মৃত্যুর ছয়-সাত মাস পর একই বাড়ির পাশে একটি নবজাতকের লাশ পাওয়া যায়। ২০১৭ সালে একই গ্রামের আরেক বেলালের ভগ্নিপতির (৩০) লাশ পাওয়া যায় ঘরে অর্ধেক ঝুলন্ত অবস্থায়। সেটি পরবর্তীতে দু’পক্ষ স্থানীয়ভাবে সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা করে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে একই গ্রামের ইলিয়াছের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। একই বছর ইলিয়াছের বোন হনুফা খাতুনের লাশ পাওয়া যায় পাশের মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সোলেমান বাজারের পাশের জমিতে। কিন্তু ঝামেলা এড়াতে এ দুটি ঘটনায় পরিবারের কেউ থানা-পুলিশের আশ্রয় নেননি।

বেলাল হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চরজব্বার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক চন্দ্র নাথ বলেন, সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে বেলালের স্ত্রী মিনোয়ারা বেগমকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া সন্দেহজনক অপর তিন আসামি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

এসব বিষয়ে চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক জানান, বেলালের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। সন্দেহভাজন একজন গ্রেপ্তার আছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া কোনো ঘটনা কেউ পুলিশকে না জানালে বা অভিযোগ না করলে কী করার আছে।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধমূলক কোনো ঘটনা ঘটলে যেকেউ থানায় এসে অভিযোগ/মামলা করতে পারে। হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায় থানা মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করলে অনুরোধ থাকবে ভুক্তভোগী পরিবার/লোকজন যেন বিষয়টি আমাকে (এসপি) অবগত করে। অপরাধী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত