Ajker Patrika

শীতেও ভাঙছে সুগন্ধা

আ. রহিম রেজা, ঝালকাঠি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ৫৪
শীতেও ভাঙছে সুগন্ধা

নদী পাড়ের বাসিন্দাদের কাছে এক আতঙ্কের নাম ভাঙন। শীতেও ভাঙন অব্যাহত আছে ঝালকাঠি সুগন্ধা নদীতে। সম্প্রতি দেউরি সাইক্লোন শেল্টার কাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বড় একটি অংশ ভেঙে যাওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে জিওব্যাগ ফেলা হলেও ভাঙন থামানো যায়নি। এই শীতকালেও নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের সরই গ্রামে তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা।

সাধারণত প্রতি বছর বর্ষায় নদীভাঙন থাকলেও এবার শীতকালেও ভাঙছে নলছিটির সরই গ্রামের একটি অংশ। মানচিত্র থেকে প্রতিদিনই কমছে সরই গ্রামের সীমানা। এ বছর জুন মাস থেকেই ঝালকাঠির সুগন্ধা বিষখালী ও হলতা নদীর ভাঙন আগের সব বছরের তুলনায় বেশি বলে দাবি স্থানীয়দের। সুগন্ধা নদীর প্রবেশমুখ বিষখালীর তীরে থাকা একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র চলতি বছরের ২৬ আগস্ট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ জেলার নদীর পাড়ের বাসিন্দারাও দিন দিন নদীভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, বরিশাল-খুলনা নৌপথের ঝালকাঠি অংশে গ্যাস বহনকারী জাহাজের ঢেউয়ে শাখা নদীগুলোও ভেঙে নিচ্ছে ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলের মাঠ।

কুলকাঠি ইউনিয়নের সরই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা আব্দুল জব্বার তালুকদার বলেন, ‘সুগন্ধা নদীর দক্ষিণ পাড় ভাঙছে। সরই এলাকার নদীর পাড় থেকে গত কয়েক বছরে প্রায় ৬০টি পরিবার স্থানান্তরিত হয়েছে।’

একই এলাকার নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘সরই গ্রামের অনেকে নিজেদের ভিটেমাটি হরিয়ে রাস্তার পাশে সরকারি জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছেন। আমার নিজের যতটুকু জমি আছে তা আগামী ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে নদীগর্ভে চলে যাবে।’

ভুক্তভোগী গৃহিণী মোসাম্মৎ নিপা বলেন, ‘নদী এখন আমার ঘরের পাশে। নদীর পাড় ভাঙছেই। এলপি গ্যাস কোম্পানির জাহাজ চলাচলের সময় নদীর ঢেউয়ে আমাদের ঘর কেঁপে ওঠে। তাতে ভাঙনের তীব্রতাও দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।’

নদীপাড়ের বাসিন্দা সুখী বেগম বলেন, ‘যাদের জমি ভেঙে যাচ্ছে, তাঁরা ওই জমির মাটি ইট ভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাতে ভাঙন আরও বেড়েছে। এ ছাড়া গ্যাস কোম্পানির জাহাজ চলাচলের কারণে ঢেউয়ে বাড়ির উঠানে পানি চলে আসে। ছোট বাচ্চা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখি। যাতে নদীতে পড়ে না যায়। রাতেও ঘুম আসে না-কখন যেন নদীতে ভেসে যাই।’

মোজাম্মেল মোল্লা বলেন, ‘সরকার থেকে নদী ভাঙন বন্ধ না করা হলে ২-১ মাসের মধ্যে আমরা আর নিজ ভিটায় থাকতে পারব না। কোথাও গিয়ে ঘর তোলার টাকাও আমার নেই।’

চুন্নু তালুকদার বলেন, ‘নদীর তীরে ব্লক দিয়ে ভাঙন ঠেকানো না হলে আমাদের অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে যাবে। গ্যাস বহনকারী জাহাজের গতির জন্য শীতকালেও সরই গ্রাম ভাঙছে।’

কুলকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বেল্লাল হোসেন মোল্লা বলেন, ‘ভাঙন কবলিত নদীর পাড়ে থাকা আমার অনেক স্বজন বাপ-দাদার বাড়ির চিহ্নটুকু রাখতে পারেনি। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ও আমাদের সংসদ সদস্যকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু হচ্ছে-হবে বলে আজ পর্যন্ত ভাঙন রোধে কোনো সুরাহা পাইনি।’

নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ‘স্কুল মাদ্রাসা, বাজার ও অনেক বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।’ গ্যাস বহনকারী জাহাজগুলোকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘জাহাজের গতিনিয়ন্ত্রণ না থাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। তবে সুগন্ধা নদীর সরই অঞ্চলটি ভাঙন রোধে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।’

ঝালকাঠি পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, ‘নলছিটির কুলকাঠি ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত সরই এলাকা পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক জরিপ সম্পাদক করা হয়েছে। খবু শিগগিরই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত