Ajker Patrika

বারো হাজারে রফা

সম্পাদকীয়
বারো হাজারে রফা

তখনো গদ্যলেখক হিসেবে সে রকম পরিচিত নন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। আর্থিক অসচ্ছলতা তখনো তাঁর নিত্যসঙ্গী। এ রকম এক সময়ে তাঁর লেখা একটি দুর্বল উপন্যাস পছন্দ করলেন এক সিনেমা প্রযোজক। কিছু কাঁচা টাকা পকেটে আসবে ভেবে উৎফুল্ল হয়েছিলেন সুনীল।

বন্ধু অরবিন্দ গুহের ‘আপনজন’ নামে একটি ছোটগল্প থেকে একজন সিনেমা তৈরি করেছিলেন। তাতে গল্পলেখক পেয়েছিলেন কুড়ি হাজার টাকা। সত্তরের দশকে কুড়ি হাজার টাকা অনেক টাকা। তখন আনন্দ পুরস্কারের মূল্যমান ছিল এক হাজার টাকা।

পরিচালক জানালেন, টাকাপয়সা কত পাওয়া যাবে, তাতে তাঁর হাত নেই। এ জন্য যেতে হবে স্টুডিওর মালিকের কাছে। দৈর্ঘ্যে না হলেও প্রস্থে সেই মালিক ছিলেন বড়। একটি সোফায় বসে ছিলেন তিনি। প্রায় চল্লিশ মিনিট সুনীল ছিলেন সে ঘরে এবং দেখতে পেয়েছিলেন, দরদাম করার ব্যাপারে এই মালিকের কী অসাধারণ প্রতিভা!

সুনীল উপন্যাসটির চলচ্চিত্র স্বত্ব বিক্রি করতে চেয়েছিলেন কুড়ি হাজার টাকায়। কিন্তু সেটাকে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই মালিক কীভাবে বারো হাজার টাকায় নামিয়ে আনলেন, সে গল্পটাই সুনীল বলেছেন রসিয়ে রসিয়ে।

স্টুডিও-মালিক টাকার অঙ্কটি ঠিক করার আগে কিছু অজুহাত সৃষ্টি করেছিলেন। কুড়ি তারিখ তাঁর জন্মদিন, তাই টাকাপয়সাসংক্রান্ত কোনো ব্যাপারের সঙ্গে তারিখটি জড়ান না, বেজোড় সংখ্যা তাঁর জন্য অপয়া। তাঁর মেয়ের বয়স আঠারো, সেটাও চলবে না। ষোলো সংখ্যায় আগের ছবিটি বক্স অফিসে মার খেয়েছিল।

এরপর সুনীলকে আশ্বস্ত করার জন্য বললেন, তিনি ধার-বাকির কারবার করেন না। অঙ্কটা ঠিক হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পেমেন্ট করে দেবেন। সুনীলকে কোনো কথাই তিনি বলতে দিচ্ছেন না।

বারো হাজারে এসে যখন ঠেকলেন, তখন সুনীলের বুক ধড়ফড় শুরু হয়ে গেছে। এরপর তো তা দশের নিচে নামবে! কত আশাই না নিয়ে এসেছিলেন! বারো তাঁর লাকি নম্বর—এ কথা শোনার পর সুনীল যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।

সূত্র: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, পায়ের তলায় সর্ষে, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত