Ajker Patrika

জলেই জন্ম-মৃত্যু মানতাদের

বানারীপাড়া প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ২৬
জলেই জন্ম-মৃত্যু মানতাদের

‘জলে জন্ম, জলে মৃত্যু, জলেই বসবাস’ মানতা সম্প্রদায়ের। নদীতীরের এ ঘাট থেকে অন্য ঘাটে ঘুরে ঘুরে বসবাস করে এ সম্প্রদায়ের লোকেরা। বহু বছর ধরে নৌকায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বসবাস করে আসছে মানতারা।

বরিশাল জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েক হাজার মানতা নৌকায় ভেসে জীবন যাপন করছেন। তেমনি বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে ৪৫টি মানতা পরিবার বসবাস করে আসছে।

নৌকায় ভেসে মাছ শিকার করা তাদের প্রধান জীবিকা। নদীর পানিতেই জীবনসংসার, সেখানেই জীবনের শেষ অধ্যায়। কয়েক যুগ আগে নিজস্ব ভূমি না থাকায় মৃত্যুর পর মরদেহ পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হতো তাঁদের। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি স্থানে তাঁদের দাফন করা হয়।

ব্যতিক্রম জীবনযাপন হলেও মানতা সম্প্রদায়ের লোকেরা ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করেন। এদের ভাগ্যে শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদার অধিকার জোটেনি। নেই কোনো স্যানিটেশন ব্যবস্থা, পুষ্টিকর খাদ্যের জোগান কিংবা বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। প্রাকৃতিক ঝড়ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে মাছ শিকার করে কোনোরকমে জীবন চলে তাঁদের। জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকায় এদের জনসংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সচেতনতা ও সুযোগের অভাবে এদের সন্তানেরা শিক্ষার আলো থেকেও বঞ্চিত। বড় হয়ে শিশুদের বেছে নিতে হয় মা-বাবার পেশাকেই।

বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে বসবাসকারী মানতা সম্প্রদায়ের সরদার আবুল কালাম সরদার বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কথা বলতে অনেকেই আসে কিন্তু ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। আমরা যেমন ছিলাম তেমনই থাকি। আমাদের দাবি, আমরা যেন নাগরিক হিসেবে সকল অধিকার ভোগ করতে পারি।’

এ সম্পর্কে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা পার্থসারথি দেউড়ি বলেন, ‘মানতা নামে কাউকে সেবা দেওয়ার নির্দেশনা নেই আমাদের। জেলে সম্প্রদায় যাঁরা আছেন তাঁদের সেবা দিচ্ছি। তারপরও আমি মানতা সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে কথা বলব।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যারা জেলে পরিবার আছে, তাদের সরকারি ভিজিএফ কার্ডের সেবা দিচ্ছি। মানতা সম্প্রদায়কে কোনো সেবা দেওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। সরকারি নির্দেশনা এলে অবহেলিত মানতা সম্প্রদায়কে সেবা দেওয়া হবে। তা ছাড়া মানতা সম্প্রদায়ের অধিকাংশের বাসই পৌর এলাকায়।’

এ বিষয়ে পৌর মেয়র সুভাস চন্দ্র শীল বলেন, ‘মানতারা বাংলাদেশের নাগরিক। মানতা নামে এদের স্বীকৃতি নেই। তবে জেলে হিসেবে তারা সরকারি সেবা পাচ্ছেন। যেভাবেই হোক সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলররা তাদের এনআইডি কার্ড করিয়েছে। এদের সঙ্গে ভোটের বিষয় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার ভূমিহীন কোনো নাগরিক গৃহহীন থাকবে না। সে অনুযায়ী জেলে বা বেদেদের সঙ্গে মানতা যোগ করে সরকারি সেবা দেওয়া যেতে পারে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহা বলেন, ‘মানতারা এ দেশেরই নাগরিক। তারা নাগরিক অধিকার বা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতে হবে। এরপর ভূমিহীন হিসেবে তাদের ঘরের জন্য আবেদন করতে হবে। তাহলে সাধ্য অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় সেবা মিলবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত