Ajker Patrika

খেলাপি ঋণ

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২২, ০৯: ৩০
খেলাপি ঋণ

আইএমএফের ঋণ পাওয়া যাবে কি যাবে না, তা জানা যাবে কিছুদিনের মধ্যেই। আমরা বরং আলোচনার একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে চোখ রাখি। লক্ষ করা গেছে, আইএমএফ যেসব শর্ত দিচ্ছে,তার মধ্যে বড় একটি জায়গা রয়েছে খেলাপি ঋণের। কেন আমাদের দেশে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, কেন তা কমানো যাচ্ছে না—বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

এ ছাড়া ঋণ-আমানতের ওপর সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে তার প্রভাব কেমন হতে পারে, বৈদেশিক রিজার্ভ গণনার ধরন কী রকম, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকি ইত্যাকার বিষয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জানতে চেয়েছেন আইএমএফের সফররত প্রতিনিধিরা।

এ সবই আলাদা আলাদা বিষয়, আবার একটু ভেবে দেখলে সবগুলোই একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। এত বিশাল পরিসরে না গিয়ে আমরা খেলাপি ঋণের বিষয়েই খানিকটা কথা বলি। এ কথা গোপন কিছু নয় যে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। গত জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত করা দরকার অবলোপন করা প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকাও। খেলাপি ঋণ যে এভাবে বেড়ে যাচ্ছে, তাতে ঋণ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা আছে। এবং কেন আছে, সেটাই বড় প্রশ্ন।

মনে করিয়ে দেওয়া অন্যায় হবে না, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রথমবারের মতো খেলাপি ঋণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে তা কখনো কিছুটা কমেছে, কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু এটা পরিষ্কার হয়েছে যে, খেলাপি ঋণের একটা বড় অংশই আর কখনো ফিরে আসে না। খেলাপি ঋণ যেন পরিণত হয়েছে একটা সংস্কৃতিতে। করোনাকাল কিংবা কোনো দুর্যোগে মানুষের জীবনে সংকট আসতেই পারে, সে রকম সময় প্রাত্যহিক জীবনের সবকিছুই ওলট-পালট হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশের ঋণখেলাপি সংস্কৃতির সঙ্গে দুর্যোগের সম্পর্ক খুব একটা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, এখানে এমন অনেকেই ঋণ পান, যাঁদের ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা নেই। যেসব প্রকল্পে ঋণ দেওয়া হয়, সেই সব প্রকল্প সফল হবে কি না, সেটা বিবেচনা না করেও কখনো কখনো ঋণ দেওয়া হয়। আর আছে প্রভাব। রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকলে এর প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নেওয়ার সংস্কৃতি বহু আগে থেকেই গড়ে উঠেছে এ দেশে।

যাঁরা ব্যাংকের মালিক, তাঁদের যদি রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকে, তাহলে ঋণখেলাপি হওয়া ঠেকাবে কে? বাংলাদেশ ব্যাংকও খেলাপিদের ব্যাপারে নমনীয় থাকে বলে বহু আগে থেকেই অভিযোগ রয়েছে। নানা উপায়ে খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব। পরিকল্পনা করে ঋণ শোধের সময় বেঁধে দেওয়া যায়, কিস্তি করে শোধ করার ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়। চাইলে আরও অনেক পথই খুলে যাবে। কিন্তু ঋণ যদি নেওয়া হয়, খেলাপি হওয়ার জন্যই এবং তা শোধ না করলেও দাপট নিয়ে বেঁচে থাকা যায়, তাহলে তাঁদের রুখবে কে? খেলাপি ঋণ আদায় করার জন্য সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত