Ajker Patrika

পরীক্ষা দিতে মেঘনা পারাপার

চাঁদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ০৪
পরীক্ষা দিতে মেঘনা পারাপার

ট্রলারে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেঘনা পাড়ি দিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে হাইমচর উপজেলার ঈশানবালা এমজেএস উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬৪ শিক্ষার্থী। শুধু তারা নয়, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া চরাঞ্চলের অসংখ্য বিদ্যালয়ের জেএসসি পরীক্ষার্থীদেরও ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় এই নদী।

এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানাবিধ প্রতিকূল পরিবেশে উত্তাল এই নদী পাড়ি দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই পরীক্ষা দিতে আসতে হয় শিক্ষার্থীদের। কখনো কখনো কুয়াশার সকালে নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরে আটকে যায় শিক্ষার্থীবাহী নৌযান। প্রায়ই নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারে না তারা। এতে তাদের পরীক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা জানায়, পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রতিদিন সকাল ছয়টার দিকে তারা ঘর থেকে বের হয়ে সাড়ে সাতটার দিকে ট্রলারে ওঠে। পর্যায়ক্রমে ৪টি চর থেকে শিক্ষার্থীদের ট্রলারে তোলা হয়। তারপর এই নদী পাড়ি দিয়ে হাইমচর তেলির মোড় নৌঘাটে পৌঁছায়। এরপর কয়েক কিলোমিটার হেঁটে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে হয় শিক্ষার্থীদের।

বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, স্থানীয়ভাবে কেন্দ্র না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়তি খরচে তাদের সন্তানদের পরীক্ষা দিতে হয়। এত চাপের মধ্য দিয়ে যখন তাঁদের সন্তানেরা ক্লান্ত হয়ে কেন্দ্রে পৌঁছায় তখন এসব শিশুর পক্ষে আর ভালো পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয় না। পরীক্ষা শেষ করে নদী পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরতেও বিকেল হয়ে যায়।

অভিভাবকেরা বলেন, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সন্তানদের মাথাপিছু শুধু নৌকাভাড়া বাবদ ৪০০ টাকা বাড়তি ব্যয় হচ্ছে তাঁদের। বিদ্যালয় থেকেই পরীক্ষার কয়েক দিনের জন্য ট্রলার ভাড়া বাবদ এ টাকা নেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, চরাঞ্চলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবক দিনমজুর, কৃষক বা জেলে। সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের নদী পাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা অর্থাৎ একটি নৌযান বরাদ্দ দেওয়া হলে এই অভিভাবকদের টাকার চিন্তা কিছুটা কমত।

ঈশানবালা চরের এমজেএস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিএম মান্নাফ বলেন, চরাঞ্চলে দিন দিন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থায় স্থানীয় পর্যায়ে পরীক্ষাকেন্দ্র করার জন্য বছর তিনেক আগে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু বোর্ড কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর হোসেন জানান, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চরাঞ্চলে অবস্থিত। সেখানে কোনো পরীক্ষাকেন্দ্র না থাকায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীদের নদী পার হয়ে হাইমচর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এসে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।

মীর হোসেন বলেন, ‘ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি সম্পর্কে জেনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশ্বাস পেয়েছি।’

এ ব্যাপারে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চাই থোয়াইহলা চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, চরাঞ্চলের এত শিক্ষার্থীর এরকম ঝুঁকি নিয়ে হাইমচরে এসে পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে চরাঞ্চলে একটি কেন্দ্র দেওয়া যায় কি না, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এ ব্যাপারে অতি দ্রুত ভালো সমাধান আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত