Ajker Patrika

যেখানে ভোট দেন না নারীরা

চাঁদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ৩৩
যেখানে ভোট দেন না নারীরা

পর্দার খেলাপ হবে—এমন ভাবনায় ভোট দেন না চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা। স্থানীয় থেকে জাতীয়—কোনো পর্যায়ের নির্বাচনেই ভোট দেন না তাঁরা। ৫০ বছর ধরে এই নিয়ম মেনে আসছেন এ এলাকার নারী ভোটররা। বারবার উদ্যোগ নিয়েও তাঁদের কেন্দ্রে নিতে পারেননি প্রার্থী, রাজনৈতিক দল বা প্রশাসনও।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৮ হাজার ৭৮৬ জন। এঁদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৭৪১ এবং নারী ভোটার ৯ হাজার ৪৫ জন। আগামী ৫ জানুয়ারি ইউপি নির্বাচনে এখানে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪৩ এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পর ফরিদগঞ্জের রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে দেখা দেয় কলেরা মহামারি। মহামারি থেকে রক্ষা পেতে দোয়ার আয়োজন করা হয়। তখন নারীদের পর্দা মেনে চলার আদেশ দিয়েছিলেন এক পীর। যুগের পর যুগ সেই আদেশ মেনে চললেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন নারীরা। শুধু ভোটাধিকার প্রয়োগ ছাড়া পড়াশোনা, বাজার-সদাই, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কাজই করছেন তাঁরা। তাদের ধারণা, পীরের নির্দেশ অমান্য করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে কেন্দ্রে গেলে অমঙ্গল নেমে আসবে তাঁদের জীবনে। তাই নির্বাচনের দিন নারীরা ভোট দিতে ঘরের বাইরে বের হন না।

আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান না অধিকাংশ নারী। তবে নতুন প্রজন্মের কিছু ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

সালমা বেগম (৬০) নামের এক ভোটার বলেন, ‘আমরা পীরের দেওয়া নির্দেশ মেনে ভোট দিই না। প্রার্থী আসে কিন্তু আমরা যাই না কেন্দ্রে। তবে আমাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। আমার নিজেদের ইচ্ছায়ই ভোট দিই না।’

হাজেরা বেগম (৬৫) নামের আরেক ভোটার বলেন, ‘এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক প্রার্থী ভোট চাইছে। কিন্তু আমরা তো ভোট দিই না। শুনেছি পীরসাহেব নারীদের পর্দার মধ্যে চলাফেরা করার কথা বলে গেছেন। আমরা সেটাই মেনে চলি।’

স্থানীয় বাসিন্দা মালেক হোসেন বলেন, নারী ভোটারা ভোটাধিকার প্রয়োগ না করায় পুরুষ ভোটারদের ওপর নির্ভর করে জনপ্রতিনিধিদের ভাগ্য। এতে করে ভোটের মাঠে প্রার্থীদের কাছে অবহেলিত রয়ে যায় নারী ভোটাররা। ভোটাধিকার প্রয়োগ না করায় পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে রাখতে পারছে না কোনো ভূমিকা।

নারী ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ না করায় হতাশ প্রার্থীরা। রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শরীফ হোসেন বলেন, ‘শুনেছি হুজুর বলেছিলেন নারীদের পর্দানশিন হওয়ার জন্য। ভোটাধিকার প্রয়োগ না করার কথা বলেননি তিনি।’

রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান ও (৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড) সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমি নিজে একজন নারী হয়েও নির্বাচিত হই পুরুষের ভোটে। এই উপজেলার ১৪টি ইউপির ১৩টিতেই নারীরা ভোটকেন্দ্রে যান না এবং ভোট দেন না।

ইউএনও শিউলী হরি বলেন, ‘ আমি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত