Ajker Patrika

শ্রীমঙ্গলে কালো বক

বিকুল চক্রবর্তী, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) 
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ৫৫
শ্রীমঙ্গলে কালো বক

বকের রং কী?

কাউকে যদি এ প্রশ্ন করা হয়, তাহলে সে আপনার দিকে অবাক চোখে তাকাবে। মনে করবে, আপনি পাগল নন তো? বক তো সাদা, বক তো ধূসর।

কিন্তু আপনি যদি বলেন, আরে না, আমরা যে বকের কথা বলছি, সেটার রং কালো।

তাহলে আপনার দিকে সে এমনভাবে তাকাবে, যেন আপনি একজন পাগল।

হ্যাঁ, বক কালোও হয়। সে রকম একটি বকের সঙ্গেই আজ পরিচয় করিয়ে দেব। গত সোমবার এমনই একটি কালো বকের সন্ধান মিলেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরে।

বকটা কোনো ফাঁদে আটকা পড়েনি। ওটা ধরা পড়েছে বড়শিতে। মাছ ধরার জন্য যে বড়শি পাতা ছিল, তাতেই আটকা পড়েছিল এই বিরল প্রজাতির কালো বকটি।

খবরটা রটে গেলে শ্রীমঙ্গল হাইল হাওরের ওই জায়গায় ছুটে যান বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল।

সোমবার দুপুর ১২টায় বকটি মাছের টোপের বড়শিতে ছিল আহত অবস্থায়। সেটাকে নিয়ে আসা হয় শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে।

স্বপন দেব সজলের কাছে শোনা হয় পুরো ঘটনাটা। তিনি বলেন, এক মাছচাষি হাইল হাওরে ফেলে রেখেছিল মাছের টোপ। সেই টোপের মাছ খেতে গিয়ে বড়শিতে ঠোঁক দিয়েছিল কালো বকটা। এরপর সে আর বের করতে পারে না মুখ। বড়শির টানাটানিতে ঠোঁটে আঘাত পায়। এখন বকটিকে চিকিৎসা দিতে হবে।

স্বপন দেব প্রথমে বুঝতে পারেননি এটা কালো বক। সেবা ফাউন্ডেশনে এসে বই খুলে দেখেন, এটার পরিচয় দেওয়া আছে কালো বক। এরপর পাখি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হন।

বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেব জানান, এটি কালো রঙের বক, হাওর যখন উন্মুক্ত ছিল, এর পরিসর আরও বড় ছিল। তখন মাঝেমধ্যে এই বক দেখা যেত। তবে এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। এ পাখিটির বাংলা নাম কালিবক, সিলেটি ভাষায় বা স্থানীয়দের কাছে কালো বগলা নামেও এরা পরিচিত। তিনি জানান, একটু সুস্থ হওয়ার পর বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে পাখিটিকে বাইক্কা বিল অভয়াশ্রমে অবমুক্ত করা হবে।

শ্রীমঙ্গল বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র জানান, এটি বর্তমানে সচরাচর দেখা যায় না। তবে এটি এ অঞ্চলেরই পাখি। বিশেষ করে মৌলভীবাজারের হাওরাঞ্চলে এদের একসময় প্রচুর দেখা যেত। এরা বিলে থাকতে পছন্দ করে।

কালো বক এখন প্রায় দেখাই যায় না, তা নিয়ে যে কথাবার্তা হয় না, তা নয়। অনেকেই এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। পাখিপ্রেমীরা হাওরে, নদীতে, বনে পাখি দেখার আনন্দ পুরোপুরি পেতে চান। কিন্তু বন, হাওর সবই তো ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যাচ্ছে। তাতে প্রতিদিনই বিপদে পড়ছে প্রাণীরা। মানুষ ধ্বংস করছে প্রাণীদের বাসস্থান। পাখিপ্রেমী খোকন থৌনাউজাম ও সুহেল শ্যাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘পশুপাখি প্রকৃতির অংশ। এই প্রকৃতিকেই আমরা ধ্বংস করছি।’

কালো বকটি মানুষের এসব কথা বোঝে না। আর মানুষ বোঝে না, বন, হাওর, নদীকে প্রাণীদের বসবাসযোগ্য করে তোলার অর্থ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

আইসিএক্স বাদ দিলে ঝুঁকিতে পড়বে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব, বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত