Ajker Patrika

আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দাবি

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ২৭
আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দাবি

পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দুই মাস আগেই বেড়েছে তেল, চাল, ডাল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। রমজান সামনে রেখে এখন এসব পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়তে শুরু করেছে। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এখন খাদ্যপণ্যের দাম অবারও বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারকে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। তা না হলে রমজানের আগে এসব পণ্য সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। তাই দামে লাগাম টানতে ব্যবসায়ীরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ এবং টিসিবির মাধ্যমে আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

খাদ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের সঙ্গে সবকিছু সম্পর্কিত। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে। এখন যে হারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে, তাতে রমজানের আগে খাদ্যপণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। ইতিমধ্যে গতকাল ভোজ্যতেলের দাম টনে ১০০ থেকে ১২০ ডলার বেড়েছে। গমের দাম বেড়েছে ৫০ ডলার। এভাবে সব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে।’

বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ৮ শতাংশ বেড়েছে। এদিন লন্ডনভিত্তিক আগাম কেনাবেচায় প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের দাম ১০৫ দশমিক ৩০ ডলার পর্যন্ত উঠেছে। যেখানে তার আগের দিন একই বাজারে তেল বেচাকেনা হয়েছে সর্বোচ্চ ৯৯ ডলারে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে গতকাল প্রতি ব্যারেল ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম ৮ শতাংশ বেড়ে ৯৯ দশমিক ৪৬ ডলারে উঠেছে। ওই বাজারে বুধবার প্রতি ব্যারেল তেল বিক্রি হয় ৯৬ ডলারে।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে এখন তেল, ডাল, চিনিসহ সব ধরনের খাদ্যপণের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বৃহস্পতিবার মণপ্রতি ৪০০ টাকা বেড়ে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকায়। একই হারে দাম বেড়ে পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার টাকা এবং সুপার পাম অয়েল ৬ হাজার ৩০০ টাকায়। শুধু সয়াবিন আর পাম অয়েল নয়। বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জে ডাল, গম, ছোলা, চিনি, মোটরসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। একদিনের ব্যবধানে মণপ্রতি এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব পণ্যের দাম আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। তাই পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় রমজানের আগে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এ জন্য ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া, টিসিবির মাধ্যমে পণ্য আমদানি বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এ সম্পর্কে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাহাজের ভাড়া বৃদ্ধিসহ কনটেইনার সংকটে অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে এসব পণ্যের দাম আরও বাড়বে। তাই এখনই সরকারিভাবে এসব পণ্যের আমদানি বাড়াতে হবে। পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে হবে। বিশেষ করে ফিনিসড ফুড আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কসুবিধা দিতে হবে। কারণ এসব পণ্য আমদানিতে শুল্ক অনেক বেশি। শুল্কমুক্ত সুবিধা না দিলে ব্যবসায়ীরা খাদ্যপণ্য আমদানি কমিয়ে দেবেন। ফলে বাজারে সংকট তৈরি হবে। পণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।’

মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ‘টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বাড়িয়ে দিতে হবে। কিছুদিন আগে তেলের দাম এক দফায় বাড়ানোর কারণে দেশে এখন সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। তাই এখন আবার তেলের দাম বাড়ানো যাবে না। ভর্তুকি দিয়ে তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে।’

একই ধরনের কথা বলেছেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমদ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন খাদ্যপণের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সরকারকে তিনটি কাজ করতে হবে। প্রথমত, রমজান সামনে রেখে এখন যেসব পণ্য আমদানি করা হবে, শুল্কমুক্ত সুবিধায় ব্যবসায়ীদের সেসব পণ্য আমদানির সুযোগ দিতে হবে। এতে আমদানি বাড়লে বাজারে পণ্যের সংকট তৈরি হবে না। দ্বিতীয়ত, মিল মালিক-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে দেশে এই মুহূর্তে কী পরিমাণ খাদ্যপণ্য মজুত আছে। সেটি নির্ধারণ করে এগুলো আমদানিতে কত টাকা খরচ পড়েছে, তা বিশ্লেষণ করে ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে একটি মূল্যতালিকা ঠিক করে দিতে হবে। এরপর মনিটরিং সেল গঠন করে ওই সেলের মাধ্যমে বাজার মনিটরিং করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত